
ক্ষুধা-তৃষ্ণা-ঘুম বা ক্লান্তি জয় করে বিস্ময়বালিকার তকমা জয়করা ১০ বছরের অলিভিয়া ফ্রান্সওয়ার্থ। কোনও বোধই তার নেই। ৯ মাস বয়স থেকে একের পর এক অস্বাভাবিক আচরণ ধরা পরতে থাকে তার মা নিকির কাছে। সে সময় তার মা লক্ষ্য করেন সে আদৌ ঘুমোয় না। এমনকি ক্ষুধা ও ব্যথার অনুভূতিও নেই তার।
কোনও শারীরিক অসুস্থতা না থাকায় সবকিছু চলছির স্বাভাবিক ভাবেই কিন্তু হঠাৎএকদিন নিকির কাছে ফোন এল স্কুল থেকে। অলিভিয়া তখন নার্সারির পড়ুয়া। স্কুল থেকে জানাল, সে পড়ে গিয়েছে। তার দাঁত ঠোঁটের মধ্যে ঢুকে গেঁথে রয়েছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া কোন গতি ছিল না চিকিৎসকের। কিন্তু ডাক্তারের সামনেই অলিভিয়া তার ঠোঁটের ছিন্ন অংশ ধরে টানতে লাগল! ডাক্তার অলিভিয়ার মাকে বললেন, তার শিশুর মধ্যে অবশ্যই কোনও অস্বাভাবিকতা আছে।
এছাড়া অপর একদিন গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হয় ছোট্ট অলিভিয়া এসময় গুরুতর আঘাত পেলেও নির্বিকার ভাবে ফিরে এল অলিভিয়া! পায়ের পাতা এবং পশ্চাদ্দেশে ভয়াবহ আঘাত পেলেও চোখমুখে কষ্ট বা ব্যথার বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই দেখে হতভম্ব হয়ে যান ডাক্তার।
পরবর্তী চিকিৎসায় জানা যায়, অলিভিয়া বিরল জিনগঠিত অসুখের শিকার। ক্রোমোজোমের সেই অবস্থার জন্য তার ব্যথার অনুভূতি, খিদে-তৃষ্ণা বা ঘুমের অনুভূতি কিছুই নেই। ডাক্তারি পরিভাষায় এ অসুখের নাম ‘ক্রোমোজোম সিক্স ডিলেশন’। আর এই বিরল অসুখের শিকার বলে অলিভিয়া হল ‘বায়োনিক চাইল্ড’।
বিশ্বে প্রতি দুশো জন শিশুর মধ্যে একজন এই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু তার মধ্যেও রকমফের আছে। কারও কারও মধ্যে বিরলতার মাত্রা অতিরিক্ত হয়। অলিভিয়া সে রকমই একজন। সে কার্যত একজন অতিমানবীয় শিশুতে পরিণত হয়েছে।
এখনও অবধি বিশ্বে ১৫ হাজারের বেশি জিনগত জটিলতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একশো জন ‘সিক্স পি ডিলেশন’-এর শিকার।
অলিভিয়াকে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে চেষ্টার কসুর করছেন না তার মা। ইতিমধ্যে চিকিৎসায় কিছুটা সাড়াও দিয়েছে সে। ধীরে ধীরে তার মধ্যে ফিরছে শ্রান্তির অনুভূতি। বাড়ছে ঘুমনোর সময়।