
একসময় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে কোনো বাঙালির বিয়েতে প্রীতিভোজ দই ছাড়া সম্পন্ন হতো না। এখন সে দিন নেই। তবে দই থাকলে তা হওয়া চাই টক দই। আমাদের অন্ত্রে অসংখ্য জীবাণু বাস করে। এগুলোর স্বাস্থ্যসম্মত ভারসাম্যতা রক্ষা করলে তা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলোকে প্রতিরোধ করে। প্রত্যেকের খাবারে প্রতিদিন টক দই থাকা উচিত। টক দইয়ের উপকারিতা শুধু পুষ্টিগত মান থেকে নয়, তার জীবাণু থেকেও আসে। ১২০ ডিগ্রি সে. তাপে গরম করলে উপকারী জীবাণুগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
সকালে দুধের বদলে এক কাপ টক দই বেশি উপকারী। এক কাপ টক দইতে (২৫০ মি. গ্রাম) ৩৭০ মি. গ্রাম ক্যালশিয়াম কিন্তু এক কাপ দুধে (২৫০ মি. গ্রাম) থাকে ৩০০ মি. গ্রাম। এটা দৈনিক চাহিদার শতকরা ৩০-৪০ ভাগ পূরণ করে। প্রতিদিনের আমিষ চাহিদারও শতকরা ১৫ ভাগ পাওয়া যায় এতে প্রতি কাপে ৮ গ্রাম। এ আমিষ অর্ধজীর্ণ এবং সেই সঙ্গে আছে ল্যাক্টিক এসিড। ফলে সহজে হজম হয়। যাদের ক্ষুদ্রান্ত্রে দুধের শর্করা (ল্যাকটোজ) হজম করার ল্যাকটেজ জারক রস নেই অর্থাৎ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতাতে (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স) ভোগেন এবং দুধ খেলেই উদরাময় হয় তাদের জন্য টক দই আদর্শ।
টক দই আমাদের অনাক্রম্যতা ব্যবস্থাকে (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালী করে (আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন, এপ্রিল, ২০০১)। এতে উপকারী জীবাণু ল্যাকটোবেসিলাস বুলগারিকাস এবং স্ট্রেপটোকোক্কাস থার্মোফিলাস আছে। দইয়ের সঙ্গে জীবন্ত জীবাণু খাবার ফলে গামা ইন্টারফেরন বাড়ে যা ক্যান্সার কোষের বিভক্তি বা ক্যান্সার রোধ করে। বি এবং সি যকৃৎ প্রদাহ চিকিৎসায়ও এর ভূমিকা রয়েছে।
এক কোর্স বীজঘ্ন (এন্টিবায়োটিক) গ্রহণে অন্ত্রের স্বাভাবিক জীবাণু ধ্বংস হলে টক দই তা ফেরত আনবে। মহিলাদের যোনীতে ল্যাক্টব্যাসিলাসের অভাবে প্রদাহ ঘটে, এক্ষেত্রে টক দই সেবন গুরুত্বপূর্ণ। যোনীতে ডুডারলিন ব্যাসিলাস থাকে ও খসে পড়া উপঝিল্লিক কোষের গ্লাইকোজেনকে জারিত করে ল্যাক্টিক এসিড বানায়। যোনীর এই অম্লত্ব (পিএইচ ৩.৮-৪.৫) সংক্রমণরোধী। এছাড়া টক দই বলিরেখা কমায়, ত্বক মসৃণ রাখে, ওজন হ্রাস করে।