
পাইলস বা অর্শ হলো মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ। যেখানে রক্তনালিগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি করে। এটি অস্বস্তিকর এবং অসহনীয় একটি সমস্যা।
শিশুসহ যেকোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি মলদ্বারের ভেতরে কিংবা বাইরেও হতে পারে।
পাইলস হলে চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়। লজ্জায় অনেকে বিষয়টিকে দীর্ঘদিন গোপন করে রাখে। ফলে অনেকেই ভুল চিকিৎসার শিকার হন যা স্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে বলে জানান ডা. আসিফ আলমাস হক।
তিনি বারডেম হাসতাপালের রেজিস্ট্রার
সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
পাইলস কি?
ডা.আফিস আলমাস হক: পাইলস হলো মলদ্বারের একটি রোগ। মলদ্বারের নিচের অংশে এক ধরনের রক্তের গুচ্ছ, যেটা আঙ্গুরের মতো ফুলে যায়, ফলে মল ত্যাগ করলে বা মল ত্যাগ না করলেও সেখান থেকে প্রায়ই রক্তপাত হয়।
এটিই হচ্ছে পাইলস। বিভিন্ন কারণে পাইলস আক্রান্ত হতে পারে। তবে পাইলসের মূল কারণ হলো মল শক্ত হওয়া। শুধুমাত্র খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১.মলত্যাগের সময় রক্ত হলে কি ধরে নেব যে পাইলস?
ডা. আসিফ আলমাস হক: মলদ্বার দিয়ে রক্ত অনেক কারণে যেতে পারে। অ্যানাল ফিশার, পাইলস, পলিপ, প্রোকটাইটিস- আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোলোরেক্টাল ক্যানসার। এসবের কারণে মলদ্বার দিয়ে রক্ত যেতে পারে। সুতরাং মলদ্বার দিয়ে রক্ত বের হলেই এই সিদ্ধান্তে যাওয়া যাবে না যে, আপনি পাইলস রোগী। এমনটি হলে একজন কোলোরেক্টাল সার্জন দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
২.পাইলস রোগের লক্ষণ কি?
ডা. আসিফ আলমাস হক: পাইলসকে চারটি ভাগে ভাগ করি। পর্যায়-এক, দুই, তিন থেকে পর্যায়-চার পর্যন্ত আমরা পাইলসকে ভাগ করি। এগুলো লক্ষণের ভিত্তিতে ভাগ করে থাকি। প্রথম পর্যায়ের পাইলসে মলদ্বার দিয়ে শুধু রক্ত যাবে। এখানে সাধারণত ব্যথা হয় না। পায়খানার পরপর টাটকা রক্ত যায়।
পর্যায়- দুই পাইলসে মলদ্বারে টাটকা রক্ত যাবে এবং রক্তগুচ্ছ বা পাইলসটা গোটার মতো বের হয়ে আসবে। মলত্যাগের পর এটা চলে যাবে।
পর্যায়-তিন এ রক্তগুচ্ছ বাইরে বের হবে এবং হাত দিয়ে সেটা ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।
পর্যায়-চার এ কখনোই ঢোকানো যাবে না। বাইরে একটি টিউমার বা মাংস পিণ্ড জাতীয় জিনিস সবসময় বের হয়ে থাকবে। সেটা তার মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যথা হবে, এমনকি পচনও ধরাতে পারে।
৩.রোগী কখন ডাক্তারের কাছে আসে ?
ডা. আসিফ আলমাস হক: আগের থেকে মানুষ এখন সচেতন। আগে অনেক রোগী পেয়েছি যারা লজ্জার কারণে কাউকে বলতেন না এ সমস্যার কথা।
বিশেষ করে মেয়েরা এই রোগে আক্রান্ত হলে কাউকে বলতে লজ্জাবোধ করে। যে কারণে চিকিৎসা করা কষ্ট হয়ে যেতো।
কিন্তু এখন মানুষ অনেক সচেতন। অনেকের একবার রক্ত বের হলেই ডাক্তারের কাছে চলে আসে। পাইলসের বেশিরভাগ, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চিকিৎসা এখন অস্ত্রোপচার লাগে না।
বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা রক্তগুচ্ছটিকে নষ্ট করে দেই। ব্রেনলাইগেশন আছে, লেজার থেরাপি আছে, হিট কুয়াগুলেশন আছে- বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারি। এগুলো হচ্ছে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে।
সাধারণত তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ের পাইলসে অস্ত্রোপচার লাগে। জিনিসটি যেহেতু বের হয়ে আসে এটি অস্ত্রোপচার করে সরাতে হয়। তবে রোগী যদি আগে আসে, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা করা হয়।
৪.পাইলস কি অপরেশনের মাধ্যমে পুরোপুরি ভালো হয়?
ডা.আসিফ আলমাস হক: অবশ্যই অরাপরেশনের মাধ্যমে পাইলস ভালো হয়। এখন তো আরও আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে বাংলাদেশে। অধ্যাপক ডা: এন্টনিও লংগো, অধ্যাপক সার্জারি, ইউনির্ভাসিটি অব প্যালেরমো, ইটালি ১৯৯৩ সালে একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যার নাম Longo Operation ev Stapled Haemorrhoidectomy।
এ অপারেশন অনেক ভালো। রোগীর অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা চিকিৎসা দিই।
৫.পাইলস থেকে বাচতে কি করণীয় ?
ডা. আসিফ আলমাস হক: প্রথমে চেষ্টা করতে হবে মল যেনো শক্ত না হয়। যে কারণে খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। প্রচুর পরিমান সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। বেশি বেশি পানি খেতে হবে। আঁশ যুক্ত ফলমুল খেকে হবে। ইসুবগুলির ভূসি খেতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো খাবার খেলে যেল মল শক্ত হয়ে না যায়। যেমন গরুর মাংস। লাল মাংস খেলে মল শক্ত হয়ে যায়।
এছাড়া প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করবেন। যারা সারাক্ষণ বসে অফিস করে তাদের এমন সমস্যা দেখা দেয়। মলত্যাগের অভ্যাস যেন প্রতিদিন থাকে। কোনো ধরনের অনিয়ম দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
৬.রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়ে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে পাইলস চিকিৎসার পোস্টার এটা আপনি কিভাবে দেখেন?
ডা. আসিফ আলমাস হক: আমরা অনেক রোগী পেয়ে থাকি যারা এসব ভুল চিকিৎসা নিয়ে কোনো সমধান না পেয়ে আমাদের কাছে আসে। তখন চিকিৎসাসেবা দেওয়াটা আমাদের অনেকটাই জটিল হয়ে পড়ে।
অনেকেই কম টাকায় চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য হয়তো তাদের কাছে যায়। এবিষয় আমার পরামর্শ হলো তারা যদি কোনো খাবার ওষুধ দেয় তাহলে তা খাবেন। যদি মলদ্বারে কিছু লাগাতে বলে তাহলে লাগবেন না।
অনেক সময় তারা মলদ্বারে এসিড জাতীয় কিছু দিতে বলে এটা দিলে মলদ্বার পুড়ে যেতে পারে। তখন মলদ্বার কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তখন সেই রোগীকে পেটের মধ্যে ব্যাগ লাগিয়ে দিতে হয় সারা জীবনের জন্য।
ডা. আসিফ আলমাস হক
Array