
ঢাকা, রবিবার, ১০ মে ২০২০ইং: চিরচেনা কর্মব্যস্ত ঢাকা শহর করোনাভাইরাস এবং লক ডাউন এর কারন চারদিকে কোথায়ও কোন সাড়া শব্দ নেই। কিন্তু হঠাৎ কানে ভেসে আসছে ঘরের দরজার সামনে কারো পায়ের শব্দ। ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম। কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না। তবে সাদা প্ল্যাস্টিকের একটা বস্তা চোখে পড়লো। বস্তা খুলে দেখি খাদ্যসামগ্রী। মনের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেল।
এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন ঢাকার এক বাসিন্দা। তবে তিনি তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তিনি আরো বলেন, শুধু আমার বাসা নয়, অনেক বাসার সামনেই খাদ্য সামগ্রী ভর্তি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ রেখে গেছে। বাদ যাননি মধ্যবিত্তরাও।
এমন আরেকজন বলেন, সবাই ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলতে চায়। এবার প্রথম ত্রাণ পেলাম তাও ঘরের দরজার সামনে। এভাবে সবাই যদি নিরবে ত্রাণ দিতো, তাহলে আমার মতো মধ্যবিত্তের অনেক উপকার হতো।
মজার বিষয় নিরবে খাদ্য বিতরণের খবরটি কোন গণমাধ্যম এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করতে দেয়া হয়নি। কিন্তু কে এই মানবিক ব্যক্তি! নীরবে ঘরের সামনে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, প্রদীপ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কিছু তরুণ ছেলেরা এটার সাথে জড়িত।
অসহায় মানুষকে লজ্জায় না ফেলতে এবং সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতেই তাদের এমন উদ্যোগ। লালবাগ এলাকার সুমন জানান, তিনি গুলিস্তান সুন্দরবন স্কোয়ারে লেবারের কাজ করেন সরকার ছুটি ঘোষণার কারণে তিনি একেবারে বেকার হয়ে যান। একদিন দুপুর ২টার পর দরজার সামনে শব্দ পেয়ে দেখেন ব্যাগ ভর্তি খাদ্যসামগ্রী এবং প্রদীপ নামের একটি লিফলেট । একই কথা বলেন, সায়দাবাদ এলাকার গণপরিবহনের এক হেলপার ।
এ বিষয়ে প্রদীপের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা প্রতিরোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর ঢাকা শহরের দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে তার ওপর লকডাউন এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন অসহায় মানুষগুলোর ঘরে ক্রমান্বয়ে খাবার সংকট দেখা দেয়। আমরা গোপনে মানুষের সহযোগিতায় সেই সব মানুষের তালিকা করি এবং সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তালিকা অনুযায়ি আমাদের স্বেচ্ছাসেবী দের সহযোগিতায় যার যার ঘরের দরজার সামনে খাদ্য সামগ্রীর ব্যাগ রেখে আসি। কারণ খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের সময় কাউকে যাতে সংকোচে বা লজ্জায় পড়তে না হয়। এছাড়া সামাজিক দুরুত্ব বজার রাখারও একটা বিষয় থাকে।
তারা আরও বলেন, শুরু থেকেই আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এবং কিছু মানুষের সহযোগিতায় ৮০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছি। এরমধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, পিয়াজ, আলু এবং সবজি। আমাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ইনশাআল্লাহ।
Array