
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় একদিকে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। অন্যদিকে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকটির ‘ক্রেডিট লাইন’ স্থগিত রেখেছে প্রায় সব বিদেশি ব্যাংক। এমনকি ব্যাংকটির সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না দেশি-বিদেশি অন্যান্য ব্যাংক। ভালো গ্রাহকরা বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্কিত ব্যাংকিং সেবা না পেয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য ব্যাংকে। এ অবস্থায় ব্যাংকটির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে লেখা বেসিক ব্যাংকের এক চিঠি থেকে এই দুরবস্থার বিষয়টি জানা গেছে।
সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আহমেদ হোসেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামকে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে ব্যাংকের দুরবস্থা মোকাবেলায় ৪ হাজার কোটি টাকা সহায়তা চান তিনি।
তথ্য উপাত্তে দেখা যায়, ডিসেম্বর শেষে বেসিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। যা ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মুনাফা না থাকায় এবং নিজস্ব তহবিলের অভাবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে পারছে না ব্যাংকটি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের অবলোপন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংকের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি ৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। এই ঘাটতির ফলে ব্যাংকটির ক্যামেলস ও ক্রেডিট রেটিং খারাপ হচ্ছে। দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। যেসব বিদেশি ব্যাংক করেসপন্ডিং রিলেশনশিপ স্থগিত করেছিল তারা আর তা চালু করতে চাচ্ছে না। আর বিদেশি ব্যাংকের ক্রেডিট লাইন স্থগিত থাকায় গ্রাহকদের বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাংকিংসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তিনি ৪ হাজার কোটি টাকা নগদ অথবা অন্য উপায়ে মূলধন সরবরাহ করার অনুরোধ করেছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, মূলধন সরবরাহ করা হলে ব্যাংকটির বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। এতে নতুন গ্রাহক নিতে পারবে ব্যাংক, যা সুদ বহির্ভূত আয় বাড়াতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সংকট নতুন নয়। খেলাপি ঋণই ব্যাংকটির মূল সমস্যা। যে কারণে মূলধন ঘাটতি ও তারল্য সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ ঋণ আটকে গেছে তাতে মূলধন সরবরাহ করেও লাভ হবে না। কারণ প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এ জন্য সরকারের উচিত বিশেষ ব্যবস্থায় পুরনো সব মন্দ ঋণকে আলাদা করে ব্যাংকটিকে পুনর্গঠন করা। সরকার এসএমই ব্যাংক করবে বলে শোনা যাচ্ছে। বেসিক ব্যাংকতো এসএমই খাতে অর্থায়নের জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলে এই ব্যাংকটিকেই নতুন আঙ্গিকে চালু করা যেতে পারে।
এক সময় দেশের ভালো ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বেসিক ব্যাংক। শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার পাঁচ বছরে (২০০৯-১৪) ঋণ বিতরণের নামে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। বাচ্চুর দুই মেয়াদে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা মন্দ ও কু-মানের খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। অনেকে বলছেন, এ অর্থঋণের নামে ডাকাতি হয়েছে। অথচ ২০০৯ সালের ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৫ শতাংশ। যা বাচ্চুর বিদায়ের সময় ২০১৪ সাল শেষে দাঁড়ায় ৬৮ শতাংশে। ওই পাঁচ বছরে ব্যাংকটির এই অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়ী করে তাকে অপসারণ করে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংককে বাজেট থেকে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার সহায়তা দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ এ বছরের চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। ব্যাংকটির ৭০টি শাখার মধ্যে ২৩টিই লোকসা
Array