• ঢাকা, বাংলাদেশ

“ব্ল্যাক ফাঙ্গাস” দেশেই আছে ওষুধ তবে ব্যয়বহুল 

 admin 
28th May 2021 10:07 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ব্যাপক হারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক ছড়িয়ে পড়া এবং বাংলাদেশেও একই রোগী শনাক্ত হওয়ায় নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে আতঙ্কে। যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দেশে নতুন কোনো রোগ নয়। এই রোগী আগেও ছিল। এর চিকিৎসাও এবং ওষুধও আছে। আর সেটি উৎপাদন হয় দেশেই। তবে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল।

আমাদের দেশে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান এই রোগের ওষুধ উৎপাদন করে। আর তাদের কাঁচামাল আসে ভারত থেকে। তাই সেখানেও আছে অপ্রতুলতা রয়েছে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে-ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় ব্যবহূত ওষুধ সহজলভ্য করতে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা এই রোগের চিকিৎসার জন্য একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করার কাজ চলছে। তবে গাইডলাইন না থাকলেও বেসিক ট্রিটমেন্ট চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। একেকটি ইনজেকশনের দাম ১৫ হাজার টাকা। দিতে হয় অনেকগুলো। পাশাপাশি রোগীকে হাসপাতালে থাকতে হয় চার থেকে ছয় সপ্তাহ। একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান এই রোগের ওষুধ উৎপাদন করার কারণে চাহিদা বাড়লে তারা সামাল দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে আছে সংশয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগটির নাম মিউকরমাইকোসিস। করোনাকালে ভারতে এটি এত ছড়িয়েছে যে একে মহামারী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে রোগটি ছড়াচ্ছে করোনা থেকে সেরে উঠার পর।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনা থেকে মুক্ত হলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে পেতে সময় লাগে বেশি। আর এই দুর্বল সময়ে আঘাত হানে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। আর এই রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি; শতকরা ৫০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত মৃত্যুর তথ্য আছে। দেশে নতুন করে দুজন রোগী পাওয়া গেছে, যারা এই ছত্রাকে আক্রান্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য একজন বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, মিউকোরমাইকোসিস বা কালো ছত্রাক একটি বিরল রোগ। এটি খুব বেশি মানুষের হয়-এমন কেনা তথ্য-উপাত্ত নেই। অবশ্যই এর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিষয়টি নিয়ে গত কিছু দিন ধরে আমরা ক্রমাগত কাজ করছি এবং একটি গাইড লাইন দেওয়ার চেষ্টা করছি। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মোকাবিলায় যেসব ওষুধ ব্যবহার করতে হয়, সেসব কীভাবে সহজলভ্য করা যায় সে বিষয় নিয়েও আমরা কাজ করছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেব। তার কারণ হলো এই ওষুধগুলো সহজে পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতির কেউ যেন সুযোগ নিতে না পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ফাঙ্গাস প্রতিরোধে একটি ওষুধ আছে। আবার কোনো কোনো সময় ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জন্য ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই ওষুধের দামটি বেশি আবার অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। যার কারণে চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে মূলত তীব্রতার ওপর। এজন্য কোনো ফর্মুলা নেই। মাইল্ড রোগী, মোডারেট রোগী এবং সিভিয়ার রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থায় সময় কম-বেশি লাগে। আমরা এখন যে বেসিক ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি এটিকেই গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় ব্যবহূত ইনজেকশন প্রস্তুত করে শুধুমাত্র বিকন ফারমাসিউটিক্যালস। এই ওষুধের ৫০ মি. লি. পরিমাণের একটি ভায়ালের খুচরা মূল্য ১৫ হাজার টাকার কিছু বেশি। তবে প্রচলিত ওষুধ না হওয়ায় এর উৎপাদন এবং সরবরাহ কম। আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই এগুলো প্রস্তুত করতে হয় বলে অন্য কেউ তা তৈরি করতে চায় না বলে জানিয়েছেন বিকন ফারমাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এবাদুল করিম।

এই ওষুধ প্রস্তুত করতে খুবই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন। এটার কাঁচামাল এবং প্রযুক্তি-দুটোই দামি, যার কারণে বেশি সংখ্যক কোম্পানি এটা উৎপাদন করতে পারে না। আমাদের কাছে বর্তমানে খুব বেশি নেই। চাহিদা অনেক কম থাকার কারণে উৎপাদনও কম হয়। এখন হঠাৎ করে চাহিদা দেখা দিয়েছে। বাজার থেকে অবৈধ পথে যাতে ভারতেও চলে যেতে না পারে, এজন্য আমরা সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কাঁচামালের জন্য জন্য আমরা বলেছি, তাদের আজকে জানানোর কথা। কাঁচামাল বেশিরভাগই ভারত থেকেই আসে। সেখানেও তো সংকট। ভারত নিজেদের চাহিদা পূরণ করেই পারছেন না। যে কারণে একটু শংকার মধ্যে আছি। আমরা আশাকরি হয়তো কিছু একটা ম্যানেজ করতে পারবো। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, যারা বয়স্ক, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তাদেরকে বেশি করে এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে এই ফাঙ্গাসের জন্য যে ধরনের ওষুধ প্রয়োজন সেটা যেন এখন থেকেই তৈরি করে। আল্লাহ না করুক যদি এখানে রোগী বাড়ে, তাহলে যেন যথাযথ চিকিৎসা করা যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এই রোগের চিকিৎসা হয় চার ভাগে। আক্রান্ত ব্যক্তির যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে প্রথমে সেটি নিয়ন্ত্রণে নিতে হয়। রোগী আগে থেকে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে সেটিও অনেক কমিয়ে দিতে হবে। এমন কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর ওষুধও দিতে হয়। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে সেসব ওষুধও বন্ধ রাখতে হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসবিরোধী একটি ইনজেকশন আছে। সেটি প্রয়োগের পাশাপাশি কোনো স্থানে যদি ক্ষত তৈরি হয়, সেই ক্ষতটি কেটে ফেলতে হয়। চোখে ক্ষত হলে চোখও তুলে ফেলতে হয়। নার্জাল এন্ডোস্কোপি করে যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়, তাহলে বিদ্যুতের শকও দেওয়া হয়।

মৃত্যুহার যেমন বেশি, তেমনি সমস্যা হচ্ছে এর চিকিৎসার খরচ। চার থেকে ছয় সপ্তাহ রোগীকে ফলোআপে রাখতে হয়। আর এই সম্পূর্ণ সময়টি হাসপাতালে ভর্তি থেকেই চিকিৎসা নিতে হয়। এত দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকলে যে খরচ তা অনেকের পক্ষেই সামাল দেওয়া কঠিন। যে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়, তার একেকটির দাম ১৫ হাজার টাকা। দেশে সংকট দেখা দিলে ওষুধের দাম বাড়ার অতীত ইতিহাস আছে।

বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই ইনজেকশন দিতে হয় স্যালাইনের মাধ্যমে। দিনে দুই থেকে তিনটিও লাগে কখনো কখনো। দুই সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহে এই ইনজেকশন দিতে হয়। দিনে দুটি লাগলেও যদি দুই সপ্তাহ দিতে হয়, তাহলে কেবল ইনজেকশনের খরচ দাঁড়ায় ২ লাখ ১০ হাজার, আর যদি ছয় সপ্তাহ দিতে হয়, তাহলে খরচ হবে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনটি করে লাগলে দুই সপ্তাহে ইনজেকশনের পেছনে খরচ হবে ৩ লাখ ১৫ হাজার, আর ছয় সপ্তাহে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১