• ঢাকা, বাংলাদেশ

ভিন্ন চরিত্রের করোনা ‘বাংলা মিউটেশন’ একমাত্র বাংলাদেশেই 

 admin 
21st Mar 2021 11:44 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

গবেষকরা নাম দিয়েছেন “বাংলা মিউটেশন”। ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৩৪টি ভিন্ন চরিত্রের সার্স কভ-২ এর জিনোনেমে ৪ হাজার ৬০৪ রকমের ভিন্নতা পাওয়া গেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাওয়া এমন ইউনিক মিউটেশন পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি।

রবিবার (২১ মার্চ) আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা “এলসেভিয়ার” এবং নেদারল্যান্ডসের “ভাইরাস রিসার্চ” জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের বাংলাদেশের ২০২০ সালের জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে বিশ্লেষণী গবেষণাপত্র।

এতে দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি নতুন ধারার জিনগত পরিবর্তন তথা ইউনিক মিউটেশন (৩টি করে) পাওয়া যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে। সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় জিনোম সিকুয়েন্স পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। এখানে একইসঙ্গে সৌদি আরব তথা মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে বাংলাদেশের ভাইরাসের জিনোমগুলোর। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ অঞ্চলের ২০২০ সালের সদৃশ জিনোম সিকুয়েন্সের ভাইরাস।

এছাড়া গবেষকরা জানান, পৃথিবীব্যাপী সার্স কভ-২-এর যে পরিবর্তনটিকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংক্রমণশীল বলে বিবেচনা করা হয়েছে, সেই জি৬১৪ডি মিউটেশন ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি সিকুয়েন্সের মধ্যেই ছিল।

এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহবুব হাসান ও আদনান মান্নান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএসটিসি)-এর শিক্ষক রাসেল দাশ। এছাড়াও তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম মাহবুবুর রশিদ ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জুনায়েদ সিদ্দিকী। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে ছিলেন মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় মালেশিয়ার গবেষক হামিদ হোসাইন ও নাজমুল হাসান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন, রাশেদুজ্জামান ও মেহেদী হাসান।

গবেষকরা জানান, ডিসেম্বরের শুরুর দিক পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ডাটাবেস “গ্লোবাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স অ্যান্ড রেসপন্স সিস্টেম”-এ জমাকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ জিনোম সিকুয়েন্সগুলো নিয়ে করা এই গবেষণায় বাংলাদেশি সার্স কভ-২-এর জিনোম বিন্যাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সার্স কভ-২-এর জিনোম সিকুয়েন্সের। বায়োইনফরমেটিক্স ও কম্পিউটেশনাল বায়োলজির বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ভাইরাসের ডি৬১৪জি অংশের মিউটেশন বা পরিবর্তন যেখানে যেখানে দেখা গেছে, সেসব জায়গাতেই জিনগত পরিবর্তনের হার অনেক বেশি এবং এই পরিবর্তনটিই হয়তো বা ২০২০ সালের মাঝামাঝি দেশে সংক্রমণের হার বেশি থাকার অন্যতম কারণ হয়ে থাকতে পারে। এছাড়াও নন-স্ট্রাকচারাল প্রোটিন বা এনএসপি প্রোটিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে বাংলাদেশে।

গবেষক দলের প্রধান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান জানান, এই মিউটেশন বা জিনগত ভিন্নতার কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ করার ক্ষমতায় কোনও পরিবর্তন এসেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনও বিশেষ উপসর্গের পেছনে এ রকম ইউনিক বা বাংলাদেশে স্বতন্ত্র মিউটেশনগুলো দায়ী কিনা, কিংবা এ ধরনের মিউটেশন থাকলে রোগীরা উপসর্গবিহীন হয় কিনা সেটাও দেখা প্রয়োজন। কারণ, “নিউ মাইক্রোবস অ্যান্ড নিউ ইনফেকশন” নিবন্ধে প্রকাশিত আমাদের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশে আনুপাতিক হারে উপসর্গবিহীন কোভিড-১৯-এর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গবেষক দলের অন্যতম প্রধান ইউএসটিসি’র শিক্ষক রাসেল দাশ বলেন, ‘এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দিক হলো বাংলাদেশের ইউনিক মিউটেশনগুলো খুব অঞ্চলভিত্তিক। যেমন কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন শুধু নির্দিষ্ট কিছু জেলা বা অঞ্চলেই দেখা গেছে। ঢাকায় তিনটি সুনির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন দেখা গেছে, যেটা শুধু ঢাকার রোগীদের মধ্যেই ছিল, আর কোথাও দেখা যায়নি। একইভাবে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, যশোর, মৌলভীবাজার ও ময়মনসিংহে জেনেটিক ভিন্নতা ছিল। এ ক্ষেত্রে সেসব জেলার ভৌগোলিক অবস্থান, জীবনযাপন এবং পরিবেশগত নিয়ামকগুলো হয়তো ভাইরাসকে বদলে দিতে ভূমিকা পালন করছে।’

গবেষণা কাজের সমন্বয়কারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুব হাসানের মতে, ‘এতগুলো ইউনিক মিউটেশন থাকলে খুব বড় একটা সম্ভাবনা থাকে দেশে নতুন কোনও ভেরিয়েন্ট বা প্রকরণ উদ্ভব হওয়ার। এ ক্ষেত্রে গবেষণাগারে দ্রুত এসব মিউটেশন বহন করা ভাইরাসগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত এবং দেখা উচিত তা কী ব্রিটিশ কিংবা আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের সদৃশ বাংলাদেশি বা বাংলা ভেরিয়েন্টের মতো কোনও নতুন প্রজাতির ইঙ্গিত দিচ্ছে কিনা এবং দিলেও অদৌ তা সংক্রমণশীল কিংবা ভয়াবহ কিনা।’

গবেষক দলের মতে, বাংলাদেশের নতুন জিনগত মিউটেশনগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি উদ্ভাবিত ও প্রয়োগকৃত টিকা কার্যকর কিনা সেটাও গবেষণাগারে গবেষণা করে দেখা জরুরি। এতে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য টিকার নকশায় কোনও রকম পরিবর্তন আনা দরকার কিনা তা খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন গবেষকেরা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১