• ঢাকা, বাংলাদেশ

মাতৃভাষা দিবসে সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান: প্রধান উপদেষ্টা 

 admin 
21st Feb 2025 7:25 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

নিউজ ডেস্ক: মাতৃভাষা দিবসে সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আজ আমরা মাতৃভাষা দিবসে সব মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম। আবেগের কারণ তো আছেই, মস্ত বড় স্বার্থের কারণও আছে। এখন আমাদের জানা নেই কোন অজ্ঞাত নামহীন মাতৃভাষা পৃথিবী সম্পূর্ণ বদলে দেবে। কোনো সম্ভাবনাকে অবজ্ঞা করলে মস্ত বড় ভুল করব।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যারা পদক পেয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য যারা অলিম্পিয়াডে পুরস্কার পেয়েছ তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি এনে দিতে আমাদের অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মাতৃভাষার চেতনা ও মর্যাদা রক্ষার প্রেরণা ও এ চেতনার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকতার সূত্রে ২০০১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। বিশ্বের সব মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণার ইতিবৃত্তকে লক্ষ্য করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে। এ সময় বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সার্বিক সাফল্যও কামনা করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ এ আন্দোলন বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য সূচিত হলেও এর মূল চেতনাটি ছিল স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তা ছিল বাংলার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আন্দোলন, তাই বাঙালির কাছে একুশ মানে মাথানত না করার দৃঢ় প্রত্যয়। বায়ান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি তাই শুধু বেদনার্ত অতীতকে স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জনের দিন নয়, বরং এক অবিনাশী প্রেরণা, সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বীজমন্ত্র।

‘মাতৃভাষা যেকোনো নৃগোষ্ঠীর ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষার সঙ্গে সকল মানুষের আত্মার সম্পর্ক। মাতৃভাষার পর মানুষ যত ভাষাই আত্মস্থ করুক না কেন, সেসব নতুন ভাষায় যতই পারদর্শিতা অর্জনই করুক না কেন, মাতৃভাষাকে তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে সরাতে পারে না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নানা দেশের নানা ভাষার কিংবা হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কিছু মানুষ নাগরিকত্ব গ্রহণ করে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করেন। নতুন দেশের ভাষা তাদের দৈনন্দিন জীবনে ২৪ ঘণ্টার ভাষায় পরিণত হয়ে যায়, কিন্তু সেটা ভাষা মাতৃভাষায় পরিণত হয় না। তারা নিজেদের মধ্যে একত্রিত হলেই উৎসাহ সহকারে নিজেদের মূল ভাষায় ফিরে যায়, তাদের মূল ভাষার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে নেয় নিজেদের অজান্তেই।

ড. ইউনূস বলেন, যেসব শহরে তাদের মাতৃভাষাবাসীর সংখ্যা বেশি তাদের শহরের মেয়র, সিটি কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে অনায়াসে নির্বাচিত হয়। তাদের শহরে তারা নিজেদের মাতৃভাষা নির্দ্বিধায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে। তাদের মাতৃভাষায় সরকারি দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করে, তাদের ভাষাভাষী পুলিশ শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে। অথচ শহরের গণ্ডি ছাড়ালেই তারা আবার তাদের নতুন ভাষায় সাবলীলভাবে ফিরে যায়। শহরের নতুন নাগরিকদের নিয়ে পুরোনো নাগরিকদের মনে কোনো ক্ষোভের সৃষ্টি হয় না।

একটি নতুন ভাষা শিখলেই পুরোনো ভাষায় দুর্বল হয়ে পড়বে এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু দেশে একই নাগরিক সাবলীলভাবে কয়েকটি ভাষায় কথা বলবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা শৈশব থেকে নানা ভাষায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। স্কুলে পড়ার সময় প্রত্যেক ছাত্রকে অন্তত একটি ভিন্ন ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করা হয়। ছাত্ররাও আনন্দ সহকারে সেটা করে থাকে। ইংরেজি শিখলেই বাংলা ভুলে যেতে হবে এরকম কোনো চিন্তা তাদের কারো মাথায় আসে না।

‘আমরা দ্রুত গতিতে নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করে যাচ্ছি। এর জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি প্রধানত দায়ী। প্রযুক্তির প্রাধান্যের সঙ্গে আসে ভাষার প্রাধান্য। যে দেশের প্রযুক্তি পৃথিবীতে প্রাধান্য অর্জন করতে থাকবে তার সঙ্গে প্রাধান্য অর্জন করতে থাকবে প্রযুক্তিদাতা দেশের ভাষা। সারা পৃথিবী এ ভাষা শেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে।’

ড. ইউনূস বলেন, স্পুটনিক যখন মহাকাশে উড়ল সারা পৃথিবী রাশিয়ান ভাষা শেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল। যে স্কুলে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিয়ান ভাষা শেখানো হয় না সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রদের এবং অভিভাবকদের উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। যেই মাত্র চীন প্রযুক্তিতে এগিয়ে এলো চীনা ভাষা শেখার ধুম লেগে গেল। যে দেশ পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেবে মানুষ পৃথিবী সে দেশের ভাষার দিকে ঝুঁকে পড়বে– এটাই নিয়ম। যে দেশের কিছু দেওয়ার নেই সে দেশের ভাষাতেও পৃথিবীর আগ্রহ নেই অথবা থাকলেও নিম্ন পর্যায়ে থাকবে। প্রযুক্তি ছাড়াও যেকোনো দিক থেকে একটি জাতি নেতৃত্ব দিতে পারলে সে দেশের ভাষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বেই— সে ভাষা যত জটিলই হোক না কেন। জাতি এগোলে ভাষা এগোয়। ভাষার সম্মান বাড়ে। নিজ ভাষার নিবেদিত প্রাণ প্রচার কর্মী হওয়া সত্ত্বেও জাতির কাছ থেকে পৃথিবীর ভাণ্ডারে কিছু দেওয়ার না থাকলে ভাষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ভাষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির সঙ্গে সাহিত্য, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান— সরাসরি জড়িত। আমরা যখন মাতৃভাষায় কথা বলি তখন যেন মনে রাখি মাতৃভাষা মানুষের প্রাথমিক ভাষা। সেই ভাষা প্রথম শ্রবণে যতই রূঢ় মনে হোক না কেন তা একদিন তার প্রাথমিক স্তর পার হয়ে বহু দেশের বহু মানুষের অত্যন্ত নমস‍্য ভাষায় পরিণত হতে পারে। যদি সে ভাষা পৃথিবীর অগ্রযাত্রায় স্ট্র্যাটেজিক বা কৌশলগত ভূমিকা দখল করে নিতে পারে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১