
বাসের ধাক্কায় দুই নারী পোশাক শ্রমিক নিহত হওয়ার জেরে রাজধানীর মালিবাগে অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন তাদের সহকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে আরও কয়েকটি গার্মেন্টসের কয়েকশ’ শ্রমিক রাস্তায় নেমে মালিবাগ থেকে রামপুরা অভিমুখী সড়কে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। রাস্তার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান নিয়ে তারা দুটি গাড়িতে আগুন দেন।
হাতিরঝিল থানার মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় বাসের ধাক্কায় নিহত দুই পোশাক শ্রমিক হলেন- নাহিদ পারভিন পলি ও মিম আক্তার। দুর্ঘটনার পর বাসসহ চালককে আটক করেছে পুলিশ। নিহতদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পোশাক শ্রমিকরা একটি স্বাধীন, দুটি সুপ্রভাত, একটি তুরাগ ও একটি তরঙ্গ প্লাস, একটি নূরে মক্কা পরিবহন, একটি আকাশ সুপ্রভাত, দুটি রাইদা ও প্রচেষ্টা পরিবহনসহ অর্ধশতাধিক বাসে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
এ সময় প্রচেষ্টা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বাসটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। হাজীপাড়া পেট্রোল পাম্পের সামনে অন্য একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ রামপুরার আবুল হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে শ্রমিকরা এ এলাকার সড়কসহ আশেপাশের অলি-গলিতে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছেন না।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘একটি সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে হাতিরঝিল থানার পুলিশ বাস ও বাসের চালককে আটক করেছে।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার নাজমা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে খবর পেয়ে আমাদের দুইটি গাড়ি সেখানে যায়। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে গাড়ি দুটি আর সামনে এগোতে পারেনি।’
পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘দুপুর দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় দুই পোশাক শ্রমিক নিহত হন। পরে আবেগাপ্লুত হয়ে রাস্তায় নামেন পোশাক শ্রমিকেরা। তারা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। আমরা খুবই সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি।’
‘আমরা তাদের অনেক বুঝিয়েছি যে, দোষীদের শাস্তির আওতায় আনব। কিন্তু পোশাক শ্রমিকেরা বেপরোয়া হয়ে যানবাহন ভাঙচুর করেন। দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যানবাহন চলাচল করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা যথেষ্ট সহনশীল ছিলাম।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাস্তায় যাওয়ার সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস মিম ও পারভিনকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মিম মারা যান। পুলিশ সার্জেন্ট সুব্রত কুমার দে পারভিনকে হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুব্রত কুমার দে জানান, তিনি পারভিনকে আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে তাদের দুজনকেই কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত পলি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এজাজ আহমেদের মেয়ে। মিম আক্তার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের সোনাই মোল্লার মেয়ে।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল করিম বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বাস ও তার চালককে আটক করেছে। নিহতদের স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Array