
টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর এবার টাইগারদের মিশন টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এখানেও সিরিজ জিতলে হবে ষোলকলা পূর্ণ। আজ রাতেই ঘরের মাঠে সেই সুযোগ নিতে চান সংক্ষিপ্ত ভার্সনে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আর এ জন্য তিনি ফর্মেশনে যেন পরিবর্তন না আনা হয় সে দিকে নির্বাচকদের প্রতি অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি সতীর্থদের কাছ থেকে তিনি ভালো খেলাটাও প্রত্যাশা করেছেন। মুমিনুল, মাশরাফির পর মাহমুদউল্লাহর পালায় কেমন হবে ম্যাচ সেটাই সময়ের পাল্লায় রাখা যাক। তার তাতে তিনি যে বার্তাগুলো দিয়েছেন সে দিকে না নজর দেওয়া যাক।
আজ দুই ম্যাচের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। দিনে-রাতের আলোতে অনুষ্ঠিত হবে এই ম্যাচ। সে লক্ষ্যে সিলেট থেকে গতকালই তারা ঢাকায় এসে পৌঁছান। অনশীলনও চলে জোরাল। সেখানেই রিয়াদ মিডিয়ার কাছে শোনালেন সতীর্থদের কাছে তার প্রত্যাশার কথা।
টি-টোয়েন্টিতে একজন ব্যাটসম্যানকে কতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলতে হয় খুব ভালো করেই জানেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তাই সুস্থির একটি ব্যাটিং অর্ডার চান, যেখানে একজন ব্যাটসম্যান আগে থেকেই জানবেন তার ভূমিকা। একই সঙ্গে সুযোগ পাওয়া ক্রিকেটারকে দিতে চান নিজেকে প্রমাণের যথেষ্ট সুযোগ। ব্যাটিং অর্ডারে হুটহাট পরিবর্তন আনা বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত চিত্র একটি। তামিম ইকবাল ছাড়া দেশের সব ব্যাটসম্যানেরই বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করতে হয়। খুব কম ব্যাটসম্যানেরই স্থির একটি ব্যাটিং পজিশন আছে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আস্থার একটি জায়গা তৈরি করতে সুস্থির একটি ব্যাটিং অর্ডার থাকা খুব জরুরি মনে করছেন মাহমুদউল্লাহ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে অধিনায়ক জানালেন, নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ দিতে সবাইকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখতে চান তার ভূমিকা। ‘ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু আমি একটা জিনিস নিশ্চিত করতে চাই, যে যেখানে ব্যাটিং করুক সে সুস্থির একটা ব্যাটিং অর্ডার পাবে, যেন খোলা মন নিয়ে পারফরম করতে পারে।’
টি-টোয়েন্টিতে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের প্রায়ই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। প্রথম বল থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ার দাবি থাকে অনেক সময়। এমন পরিস্থিতিতে বড় শট খেলার চেষ্টায় ‘গোল্ডেন ডাক’ পাওয়া বিরল নয়। মাহমুদউল্লাহ জানান, স্রেফ পরিসংখ্যান না দেখে ম্যাচের পরিস্থিতি দেখে একজনের পারফরম্যান্স বিবেচনা করবেন তারা। ‘আমি মনে করি, বিশ্বাসটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে যেখানেই ব্যাটিং করুক সেটা তিন হোক, চার হোক, পাঁচ হোক, ছয় হোক বা সাত হোক তারা যেন তাদের নির্দিষ্ট ভূমিকা অনুযায়ী ওইভাবে চিন্তা করতে পারে এবং ওইভাবে ব্যাটিং করতে পারে। আমি এই জিনিসটা খুব বিশ্বাস করি যে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে জানা থাকলে কাজ অনেকটা সহজ হয়।’ ‘সাত নম্বরে বা ছয় নম্বরে ব্যাটিং করলে কম সময় পাওয়া যায়। তো বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয়-সাতে ব্যাটিং করাটা কঠিন। টপ অর্ডারে কিছুটা সময় পেতে পারেন কিন্তু পাঁচ-ছয়-সাতে সময় কম পাওয়া যায়। তো এই জিনিসগুলো বিবেচনা করা হবে, আমার মনে হয় টিম ম্যানেজমেন্টও সাপোর্ট করবে।’
মাশরাফির নেতৃত্ব নিয়ে কথা উঠতেই মাহমুদউল্লাহ জানান, ‘মাশরাফি ভাইয়ের সবচেয়ে ভালো গুণ যেটা ছিল, উনার মধ্যে একটা ক্যারিশম্যাটিক পাওয়ার ছিল। কারণ যখনই আমরা একটু নার্ভাস থাকতাম, একটু চিন্তা করতাম বেশি, তখন উনি আমাদের ঠাণ্ডা করে বুঝাতেন বা বলতে কীভাবে কী করলে এগোনো যায়, বা কোন জিনিসটা করলে নির্দিষ্ট কারও জন্য ভালো হবে। ওই গুণ ছিল মাশরাফি ভাইয়ের। আশা করি আমিও চেষ্টা করব আমার চিন্তাধারা দিয়ে কীভাবে দলকে সাহায্য করা যায় এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’
মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। অসাধারণ নেতৃত্বের পাশাপাশি তিনি দলের অন্যতম সফল বোলারও। পরের সব অধিনায়কের জন্য বেঁধে দিয়েছেন উঁচু মানদণ্ড। দেশের সফলতম অধিনায়ক দলকে যেখানে নিয়ে গেছেন, সেখান থেকে সামনে এগিয়ে নেওয়াটা নতুন অধিনায়কের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন মাহমুদউল্লাহ।
‘মাশরাফি ভাই দলটা যেভাবে সামলেছেন, দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তার পরও আমি একটা জিনিস বলতে চাই, যে-ই অধিনায়ক হোক, আমার মনে হয় তার জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ যদি আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই আর ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই, এর কোনো বিকল্প নেই, চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে এবং ওই অনুযায়ী কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় যে মাশরাফি ভাই খুব ভালো উদাহরণ তৈরি করে দিয়ে গেছেন।’
আমি সবসময় যেটা বিশ্বাস করি, প্লেয়ারদের কাছ থেকে ওই বিশ্বস্ততা পেতে হবে। ওরাও যেন অধিনায়ক হিসেবে আমাকে বিশ্বাস করতে পারে। কারণ, টি-টোয়েন্টি সংস্করণটা এমন যে, এক-দুইটা ম্যাচ হয়তো খারাপ হতে পারে। তার মানে এই না, সে অনিশ্চয়তা বোধ করবে।’ ‘আমার মনে হয় যে, অধিনায়ক হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। যাতে করে তারা নিশ্চয়তা বোধ করে এবং স্বাধীনতা নিয়ে খেলতে পারে। আমার কাছে এই পরিকল্পনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ।’