
দ্বিতীয়বারের মত সময়সূচির আজ প্রথম দিন। এর আগের দিন মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে মেলার উপর। আর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেসব স্টল মেরামতেই ব্যস্ত প্রকাশকদের। সেই সঙ্গে বৃষ্টি আর ধুলাবালির আস্তর পড়া স্টলগুলো পরিষ্কারের কাজও। অনেক স্টলের ভিজে যাওয়া বই অনেকে রোদে শুকিয়েও নিচ্ছেন। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সাতদিনব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের প্রথম দিন সোমবার এমন চিত্র দেখা গেছে অমর একুশে বইমেলায়। এদিন নতুন সময়সূচি অনুযায়ী বেলা ১২টা থেকে মেলা শুরু হয়। তবে মেলা চত্বরে পাঠক, বইপ্রেমী বা ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই।
মেলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগেরদিন সন্ধ্যায় মেলা বন্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে মৌসুমী ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এতে স্টল মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে পাঠক আর বইপ্রেমীরাও আটকা পড়েন। এসময় মেলায় স্থাপিত আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন মেলায় আগতরা। তবে সেসময় অনেক স্টলের ছাউনি, পর্দা উড়ে যায়। ভিজে যায় অনেক বই। ঘণ্টা খানেক চলে ঝড় বৃষ্টি। তাৎক্ষণিকভাবে স্টল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত স্টলগুলো রক্ষার চেষ্টা করেন। তবে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্টল রেখেই বাসায় ফেরেন। শংকা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বেশ কিছু প্রকাশক স্টল বন্ধ করে বইমেলা থেকে একেবারেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনেকে থাকলেও স্টল খোলার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। নিয়ম রক্ষার মেলায় অনেকে প্রতিদিন খোলা রাখলে ক্ষতি আরো বেশি হবে বলে মনে করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেখক-প্রকাশক প্রচণ্ড হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোরের কাগজকে বললেন, হাতের কাছে কোন বিষের বোতল থাকলে দিন। খেয়ে নিই। ঝড়-তুফান, করোনা দাপট, বিক্রির খরা আর সহ্য হচ্ছে না। সব শেষ হয়ে গেল। এবার আর উঠে দাঁড়াতে পারব কী না জানি না। শিশু কর্নারের রেজা পাবলিকেশনের মহসীন কবির বলেন, গতকাল ঝড়ের সময় আমাদের বইপত্র সব উড়ে গিয়েছিল। সেসব কুড়িয়ে এনেছি। যদিও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ক্রেতার দেখা পেলাম না।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ বলেন, ঝড়ে বৃষ্টি তেমন না হওয়ায় রক্ষা হলো। বৃষ্টি হলে তো বইপত্র ভিজে যেত। তাছাড়া ঝড়ের সময় সবাই উপস্থিত ছিল। আসলে এবারের বইমেলা ঝড়বৃষ্টির সময়েই তো শুরু হয়েছে। আমরা এসব জেনে শুনেই অংশগ্রহণ করেছি এবং আগাম প্রটেকশনও নিয়ে রেখেছিলাম।
সোমবার সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত স্টলগুলো মেরামত শুরু করেন মিস্ত্রিরা। উড়ে যাওয়া ছাউনি দিয়ে আবারও স্টলের নির্মাণ কাজ করছিলেন অনেকে। তাছাড়া ভিজে যাওয়া বই মেলা চত্বরে শুকাতে দেয়া হয়। দুপুরে মেলায় আসেন বিক্রয়কর্মীরা। তারা স্টলের ধুলাবালির আস্তরে ঢাকা পড়া বইপুস্তক ঝাড়ামোছা করেন। পরে সেগুলো প্রদর্শন করেন। তবে মেলার প্রবেশপথ খোলার থেকেই কোনো পাঠক বা ক্রেতাদের চোখে পড়েনি। এদিকে কোন কোন প্রকাশক আশা করছেন পাঠক আসবেন এবং একটি সফল বইমেলা হবে।এখনও এমন প্রত্যাশা নিয়েই আশায় বুক বেঁধে আছেন।
Array