
দেশে করোনার সংক্রমণ ফের লাফিয়ে বাড়ছে। শুধুই বাড়ছেই না, রোগীর জন্য প্রয়োজন বাড়ছে আইসিইউয়ের। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করছেন সংশ্লিষ্ট অনেক চিকিৎসক। আইসিইউয়ের জন্য ফোন কল আসছে তাদের কাছে- এমনটাই জানা গেছে সেসব স্ট্যাটাস থেকে। আহ্বান জানানো হচ্ছে সতর্ক হতে। এদিকে গত কয়েক দিনের কড়া হুঁশিয়ারির পরও রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি অধিকাংশ মানুষের। অধিকাংশ নগরবাসীকে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। আবার যারা মাস্ক পরেছেন, তাদের অনেকের মাস্কই পুরাতন বলে দেখা ও জানা গেছে।
বেসরকারি একটি হাসপাতালের স্পেশালিস্ট রেজিস্ট্রার ডা. নাকিব শাহ আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, লাফিয়ে বাড়ছে করোনা চাপ ‘আপনারা হয়তো টের পাননি বা খবর রাখেননি। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউগুলো কিন্তু আবারও ভরে গিয়েছে। অনেকদিন ফোন আসেনি আইসিইউ বেডের খোঁজের জন্য, কিন্তু আবারও সেটা শুরু হয়েছে। সবাই একটু সতর্ক হন।’ একই কথা লিখেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভ্যাস্কুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেল। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে ফোন আসছে। হাসপাতাল লাগবে, বেড লাগবে আইসিইউ লাগবে। আপনজনের মৃত্যুর খবরগুলো বাড়ছে, কারণ একটাই করোনা! খালি হয়ে যাওয়া হাসপাতালগুলো আবারও ভরে উঠছে! সিট সংকট শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। আমাদের মনে হয় আরেকটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন!’
করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে করোনায় সংক্রমিত ১ হাজার ৮৯৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৮ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১৯ হাজার ১৪১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৮ হাজার ৯১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
গত ১০ মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ১০০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ১৮৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ২ হাজার ২০২ জন করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল রোগী শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর তথ্যমতে, সারাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৫৫৮টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ২৮৬ জন, বাকী ২৭২টি শয্যা খালি রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ডেডিকেটেড ১০টি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে ১১৭টি, তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ৮৮ জন আর ফাঁকা রয়েছে ২৯টি। অপরদিকে, বেসরকারি ৯টি হাসপাতালের ২৮১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী আছেন ২০১ জন আর শয্যা ফাঁকা রয়েছে ৮০টি।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, এ অবস্থায় সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, নতুন করে এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশীরভাগই তরুণ, তাদের বেশিরভাগেরই আইসিইউ লাগছে।’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরইমধ্যে প্রশাসনসহ সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।’
করোনায় আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গের রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে খালি শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ আইসিইউতে বেড নেই। মহাদুর্যোগ দরজায় আবার কড়া নাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রধান অস্ত্র হলো, মাস্ক পরা,স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং করোনার টিকা নেওয়া। নয়তো প্রতিটি অবহেলার দায় শোধ করতে হতে পারে।
গত অক্টোবর-নভেম্বরে যে পরিমাণ রোগী ছিল তার দ্বিগুণ রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তি বলে জানান হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ। তিনি বলেন, এজন্য গবেষণা প্রয়োজন। তবে অনেক রোগী পাচ্ছি যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত রোগী যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়,তাদেরই আমরা সিভিয়ার রোগী হিসেবে বিবেচনা করি। একইসঙ্গে তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি এবার।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, আক্রান্তের হার খুব দ্রুত বাড়ছে। তিনি জানান, আক্রান্তের হারের পাশাপাশি সিভিয়ার রোগীর সংখ্যাও বেশি। এবারের স্ট্রেইনটি মারাত্মক সংক্রামকই শুধু নয়, বিপজ্জনকও বটে। এটি বিদ্যুৎগতিতে আগের স্ট্রেইনটিকে প্রতিস্থাপন করবে।
Array