
লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান যাকে এ দেশে ‘শবে বরাত’ বলে লোকে জানে এর ফযীলত যেমনভাবে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, এমনভাবে উম্মতের বরেণ্য ইমামগণ এ রাতের মর্যাদাকে স্বীকার করেছেন।প্রথম পর্বে
আমরা সহীহ হাদিস দ্বারা এ রাতের মর্যাদা প্রমাণ করেছি। এখন কয়েকজন ইমামের বক্তব্য উল্লেখ করছি।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন।
অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত রয়েছে। সালাফের অনেকেই এ রাতে নামায পড়েছেন। কিন্তু সম্মিলিতভাবে মসজিদে সে রাত জাগা বেদয়াত। এমনভাবে জামাতে নামায পড়াও বেদয়াত।( আল ফাতাওয়াল কুবরা, ইবনে তাইমিয়া ১/৩০১)
১.ইবনে তাইমিয়া রহ. আরো বলেন।
অর্থাৎ শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস এবং আরো অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো দ্বারা এ রাতের ফযীলত প্রমাণিত হয়। সালাফের অনেকেই এ রাতে বিশেষ করে নামায পড়তেন। শাবান মাসের রোযা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস এসেছে। সালাফদের থেকে মদীনার অনেক উলামায়ে কেরাম এবং পরবর্তী কেউ কেউ শবে বরাতের ফযীলতকে অস্বীকার করেছেন এবং এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোর ব্যাপারে আপত্তি করেছেন। বিশেষত বনু কালব গোত্রের বকরীর পশম পরিমাণ লোক ক্ষমা করে দেয়ার হাদীস।
কিন্তু অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এবং আমাদের অনুসৃতদের মত হলো: এ রাতের ফযীলত রয়েছে। ইমাম আহমদ রহ. এর নস এ কথার দালালাত করে। কেননা এ রাতের ফযীলত বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্নভাবে এসেছে। সালাফ থেকে বর্ণিত আছার সেগুলোর সত্যায়ন করে। ‘মুসনাদ’ এবং ‘সুনান’ এর কিতাবাদিতে এ রাতের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যদিও এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে কিছু বর্ণনা জাল করা হয়েছে।( ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম, ১/৩০২)
ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট হলো। প্রথমত শবে বরাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং আমাদের যে সমস্ত ভায়েরা বলে থাকেন যে, সহীহ হাদীস দ্বারা শবে বরাতের ফযীলত প্রমাণিত নয়, ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য অনুসারে তাদের কথা সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত: সালাফের অনেকেই সে মর্যাদাপূর্ণ রাতে একাকী নামায পড়েছেন। তবে সম্মিলিতভাবে মসজিদে এক সাথে নামায আদায় করা বেদয়াত। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাদের থেকে সম্মিলিতভাবে এমন আমল প্রমাণিত নয়। এজন্য আমাদের দেশে যারা মুতলাকভাবে বলে দেন যে, এ রাতে বিশেষ কোনো আমল নেই, ইবনে তাইমিয়া রহ. এর বক্তব্য অনুসারে তাদের কথাও সঠিক নয়। কেননা সালাফরা এ রাতে একাকী নামায পড়েছেন।
২.. ইমাম ইবনে আমীর আল হাজ আসসানআনী মালেকী রহ. বলেন,
অর্থাৎ শবে-বরাতের মর্যাদা যদিও শবে কদরের মত নয়, কিন্তু তারপরও সে রাতের অনেক মর্যাদা এবং কল্যাণ রয়েছে। সালাফরা এ রাতকে গুরুত্ব দিতেন এবং এ রাত আসার আগে অপেক্ষা করতেন। এ রাত আসলে তারা পুরো রাত জেগে আল্লাহর ইবাদত করতেন। এ রাতের বিশেষ ফযীলতের কারণে। এর পর কিছু লোক আসলো এর বিপরীত। তারা পূর্বের অবস্থাকে পাল্টিয়ে দিলো।(. আল মাদখাল, ১/২৯৯)
৩. হাফেয ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, অনুসৃত ইমামগণ সহ সালাফের আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সকল ইমামগণের কাল বেয়ে আমাদের জামানা পর্যন্ত সকলের সহীহ এবং স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর যাত এবং সিফাত সম্পর্কিত সকল আয়াত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল সত্য সংবাদ, তার সিফাত সংক্রান্ত সে সব বর্ণনা যেগুলোকে শাস্ত্রবিদগণ সহীহ বলেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানের উপর সেগুলোর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।
এরপর আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন,
এরপর তিনি কোনো কোন বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবে, এ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, সবগুলোর উপর ঈমান আনতে হবে।
এরপর তালিকায় বলেন, প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তায়ালা আসমানে অবতরণ। জুমার রাতের ফযীলত। দুই ঈদের রাতের ফযীলত। শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতের ফযীলত এবং শবে কদরের ফযীলতের উপর ঈমান আনতে হবে। .( ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়া, পৃষ্ঠা নং, ৭৫-৭৬)
ইবনুল কায়্যিম রহ. হলেন ইবনে তাইমিয়া রহ. এর হাতেগড়া শিষ্য। আমাদের যে সমস্ত ভায়েরা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের ফযীলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহভাবে প্রমাণিত নয়, তারা ইবনে তাইমিয়া এর মত ইবনুল কায়্যিম রহ. দ্বারাও বেশ কিছু মাসআলায় দলীল পেশ করেন। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম যে,
Array