• ঢাকা, বাংলাদেশ

শিশুদের শর্ট টার্ম মেমরি লস সম্পর্কে জানেন কি? 

 admin 
25th Aug 2020 11:28 am  |  অনলাইন সংস্করণ
আগের দিন স্কুলে হোমওয়ার্ক কী দিয়েছিলো, এটা কি প্রায়ই আপনার সন্তান ভুলে যায়! হোমওয়ার্ক করে খাতাটি কোথায় রেখেছে, কোনভাবেই তা মনে করতে পারে না? অনেক চেষ্টা করেও কোন একটা বস্তুর নাম বা নির্দিষ্ট কোন শব্দ মনে করতে পারে না।?সপ্তাহ না যেতেই ভুলে যায় স্কুলের বিশেষ কোন অনুষ্ঠান কিংবা বিশেষ কোন দিনের কথা? গেলো সপ্তাহেই একটা জাদুঘরে ঘুরতে গেলেন তাকে নিয়ে, তা সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতেই দেখলেন সে তা বেমালুম ভুলে বসে আছে; কিংবা পারিবারিক কোন বিষয় তাকে জানিয়ে রাখার পরও তার স্মৃতি থেকে সেটা বের হয়ে গেছে! মনোবিজ্ঞানের ভাষায় মানুষের এমন ভুলে যাওয়ার প্রবণতাকে বলে শর্ট টার্ম মেমোরি লস (Shortterm memory loss)। সহজ বাংলায় বললে স্মৃতিভ্রম । তবে এটা মোটেও বাংলা সিনেমার ২০ বছরের জন্য স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলার মতো কোন জটিল বিষয় না। সাময়িক সময়ের জন্য কোন তথ্য ভুলে যাওয়া, চেষ্টা করেও মনে করতে না পারা কিংবা অনেকটা “পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছে না” ধরণের সমস্যা। ছোট বলুন কিংবা বড়; যে কারোর মাঝেই টুকটাক ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। কিন্তু কারো ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি যখন সীমা অতিক্রম করে ফেলে ও কারোর সাথে নিয়মিতভাবে ঘটতে থাকে তাহলে একটু নড়েচড়ে বসা দরকার। আপনার সন্তানের মাঝে এমন স্বভাব থাকলে এই ব্লগটি আপনার জন্য।
শিশুদের স্মৃতিভ্রম কেন হয়?

মানুষের মস্তিষ্ক অনেকগুলো নিউরন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। স্মৃতি মনে রাখাও এমন একটি প্রক্রিয়া। কোন কারণে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার কাজে সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা দেখা দিলে স্মৃতিভ্রম হয়ে থাকে। সেই জটিলতা কেন হয়, তেমন কিছু কারণই নিচে উল্লেখ করে দেয়া হলো।

অনিয়মিত ঘুম

পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে সাধারণত আমাদের শারীরিক কিছু জটিলতা দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমন। শারীরিক এই পরিবর্তনের সাথে হয়তো সব শিশু সমানভাবে মানিয়ে নিতে পারে না। তবে  অনিয়মিত ঘুম বলতে শুধুমাত্র কম ঘুমানোকে বোঝানো হয়না। অনেকক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুমের কারণেও শিশুদের মাঝে স্মৃতিভ্রম জটিলতা দেখা দিতে পারে।

মেডিকেশন

অনেক সময় কোন ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াতেও স্মৃতিভ্রম হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন ধরণের ঔষধ সেবনের পর পরই যদি আপনার সন্তানের মাঝে স্মৃতিভ্রমের কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

ডিসলেক্সিয়া

ডিসলেক্সিয়া এক ধরণের লার্নিং ডিসেবিলিটি। শিশুর জীবনে ডিসলেক্সিয়ার ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে। ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত পর্যাপ্ত বুদ্ধিমত্তা থাকা সত্বেও পড়া মনে রাখতে পারে না। বিশেষ কিছু অক্ষর, শব্দ ইত্যাদি মনে রাখতে তারা বেশ সমস্যায় পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মাঝেও স্মৃতিভ্রম দেখা দিতে পারে।

এডিএইচডি (ADHD)

এডিএইচডি শিশুদের এক বড় ধরণের আচরণগত সমস্যা। এডিএইচডি-তে আক্রান্ত শিশুরা অনেক ধরণের সমস্যায় ভোগে। তার মধ্যে একটি হলো, কোন কাজই মনোযোগ দিয়ে না করা। তাদের মধ্যে সবসময় একটা অস্থিরতা ও কাজ অসম্পূর্ণ করে রাখার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলেও শিশুদের মাঝে সাময়িক স্মৃতিভ্রম দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন শিশুদের আবার অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিসের! মানসিক চাপ আসে আসলে অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ থেকে। একাডেমিক পড়ালেখা, ভালো ফলাফল আর প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার পরই নিজেদের অজান্তে আমরা সন্তানের উপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করি। সবার মাঝে সেই চাপ সহ্য করার মতো ক্ষমতা থাকে না। শিশুদের ক্ষেত্রে তো আরো থাকেনা। এর ফলাফল স্বরূপ বেশ কিছু সমস্যা শিশুদের মাঝে দেখা দেয়। তার মধ্যে স্মৃতিভ্রম অন্যতম।

এই সমস্যাগুলো ছাড়াও ব্রেইন টিউমার, মাথায় ঝুঁকিপূর্ণ আঘাত পাওয়া,  মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণে স্মৃতিভ্রম হয়। সাধারণত এই কারণগুলো বেশ দৃশ্যমান হয়। কিন্তু উপরে উল্লেখিত কারণগুলো দৃশ্যমান থাকে না। আমরা কেবল সন্তানের স্মৃতিভ্রমটাই দেখে থাকি। এই স্মৃতিভ্রম নিয়েই হয়তো বা সন্তানকে বকাঝকা করি, দোষ দিতে থাকি। ফলে সমস্যার সমাধান না হয়ে সমস্যাটি আরো জটিল আকার ধারণ করে।

আপনার সন্তানের মাঝে স্মৃতিভ্রম দেখা দিলে তা নিয়ে তাকে বকাঝকা না করে সমস্যাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন ও সমাধানের চেষ্টা করুন।

সন্তানের মাঝে স্মৃতিভ্রম দেখা দিলে কী করবেন?

যেকোন ধরণের মনস্তাত্বিক সমস্যার ক্ষেত্রে সাধারণত ডাক্তাররা রোগীর অবস্থা ও রোগের অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যেসকল কারণে স্মৃতিভ্রম হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় সেসব কারণ থেকেই অনেক সময় সমাধান বের হয়ে আসে। আপনি যদি আপনার সন্তানের মাঝে অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস লক্ষ্য করেন তাহলে বয়স অনুযায়ী তার পর্যাপ্ত ঘুমের দিকে খেয়াল রাখতে পারেন।

কোন ধরণের মেডিকেশনের পর যদি হুট করেই স্মৃতিভ্রম দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।  স্মৃতিভ্রম যদি এডিএইচডি ও ডিসলেক্সিয়ার কারণে হয় তাহলে এইসবের চিকিৎসার সাথে সাথে স্মৃতিভ্রমও সেরে যাবে।

মানসিক চাপের দিকে একটু নজর দিন

স্কুল, রেজাল্ট, কোচিং, বাসার টিচার সব মিলিয়ে সন্তানের উপর চাপটি কেমন দিচ্ছেন সেদিকে একটু খেয়াল রাখুন। শিশুদের মাঝে স্মৃতিভ্রম তৈরি হওয়ার একটি বিশেষ কারণ মানসিক চাপ। এত এত প্রত্যাশা নিয়ে সন্তান সবসময় একটি বিশেষ চাপে থাকার কারণে তার মাথা থেকে অনেক কিছুই বের হয়ে যায়। মাঝে মাঝে খুব সহজ কিছুও মনে রাখতে পারে না। সন্তানের উপর অহেতুক চাপ তৈরি না করার চেষ্টা করুন।

স্মৃতিভ্রমের জন্য সন্তানকে বকাঝকা না করে তার সাথে গল্প করার চেষ্টা করুন। তার স্মৃতিভ্রম সম্পর্কে তাকে সচেতন করুন। পড়ালেখা হোক কিংবা স্কুলের হোমওয়ার্ক মনে রাখা কিংবা জ্যামিতি বক্সটি রাখার সময়ও একটু মনোযোগী হতে বলুন। স্মৃতিভ্রমের কথা মাথায় রেখে মনোযোগের সাথে কোন কিছু করলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা একটু একটু কমতে শুরু করবে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১