admin
07th Mar 2021 2:09 pm | অনলাইন সংস্করণ

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের যে জায়গাটিতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তর্জনি উঁচু করে রাখা তার একটি ম্যুরাল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। পঁচাত্তর পরবর্তী সরকার ওই ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানটিকে অন্তর্ভুক্ত গড়ে তুলেছিল শিশুপার্ক।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ঐতিহাসিক ওই স্থানটিকে সংরক্ষণের জন্য গত বছর দায়ের করা এক রিটের রায়ে হাইকোর্ট সেখান থেকে শিশুপার্ক সরানোর আদেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতেই ঐতিহাসিক স্থানে অসৎ উদ্দেশ্যেই শিশু পার্কটি করা হয় আদালত মন্তব্য করেন।
ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণদানের এ স্থানটিতে একটি ভাস্কর্য এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ বর্তমানে এগিয়ে চলছে।বঙ্গবন্ধুর সেই তর্জনি উঁচু কারা ভাস্কর্য হবে এখানে। ২৬ ফুট উঁচু ভাষ্কর্যটি তৈরি করা হবে ব্রোঞ্জ দিয়ে। ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি কারণে তৈরি হওয়া অচলাবস্থায় নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ- তৃতীয় পর্যায়’ নামে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ প্রকল্পের কাজ করছে ন্যাশানাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনবিই) নামের একটি নির্মাণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজের তত্বাবধানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, চলতি মার্চের আগেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করার দিন ধার্য্য ছিল। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় নয় মাস বন্ধ থাকার পর গত ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় কাজ শুরু হয়।
কাজ শেষ হতে আরও প্রায় বছর খানেক লাগতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটির কাজ আমরা দ্রুতই শেষ করার চেষ্টা করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরেই আমরা প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে চাই। কাজ শেষে পুরো প্রকল্প সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ দেয়ার স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্যই এসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক নির্মাণের এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হয়।এ প্রকল্পের আওতায় ভাস্কর্য নির্মাণ, স্বাধীনতা টাওয়ার প্লাজার রেনোভেশন, জনসভার মঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া, বসার বেঞ্চ, শিশু পার্কের দেয়ালে ম্যুরাল স্থাপন এবং বিভিন্ন ধরনের ১৩টি রাইড স্থাপন ও জলাধার নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানটি সংরক্ষণের অন্যতম উদ্যোক্তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক । জানতে চাইলে এ প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালির মুক্তির সনদ। ‘তোমাদের যার যা আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাক’- এ ভাষণ শুনেই বাঙালি জাতি সশস্ত্র সংগ্রামের ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। ৭ মার্চ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার মূলমন্ত্র ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ এখন শুধু বাংলাদেশের মানুষেরই সম্পদ নয়। গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের এক অনবদ্য দলিল এটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’-এর অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এ কারণেই আমরা এ স্থানটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হবে। এর কাজ এখন এগিয়ে চলছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
স্বাধীনতার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সবুজে ঘেরা পার্কে পরিণত করা হয়। ১৯৭৫ সালের পর উদ্যানের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয় শিশুপার্ক। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বাধীনতা সংক্রান্ত ঘটনাগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নতুন করে সাজানোর জন্য ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের দুই পর্বে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯৯৯ সালে এখানে শিখা চিরন্তন স্থাপন করা হয় এবং পরে নির্মাণ করা হয় স্বাধীনতা টাওয়ার। একটি কৃত্রিম লেকও খনন করা হয়েছে। এখন চলছে ওই প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ।
Array