
শেয়ার বাজার কি? আমরা সব সময় বিভিন্ন মাধ্যমে শুনে থাকি। কিন্তু কিভাবে শেয়ার উঠা-নামা করে, এর ভিতরে কিভাবে কাজ করা হয় এটা আমরা অনেকে জানি না। আবার আমাদের মনের ভেতরে শেয়ার বাজার সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখা দেয়। তাদের জন্যই আমরা জানাতে চেষ্টা করবো শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে কিছু কথা।
শেয়ার মার্কেট হলো এমন একটি বাজার যেখানে শেয়ার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামের ও মানের শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। একে পুঁজি বাজার ও বলা হয়। এক কথায় বলতে গেলে কোনো কোম্পানি মূলধন সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তার উদ্দিষ্ট প্রাথমিক মূলধনকে কতোগুলো ছোট অংশে ভাগ করে জনগণের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়, এই প্রত্যেকটি অংশকে এক একটি শেয়ার বলে।
প্রাপ্ত বয়স্ক মানে ১৮ বছরের উপরের যে কেউ শেয়ার ব্যবসায় আসতে পারেন। তবে তার জন্য প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হলো ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে হবে। এরপর সেই ব্যাংক হিসেবের বিপরীতে (সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অফ বাংলাদেশ লিমিটেডের) অধীনে বিও (বেনিফিসিয়ারি অনার) একাউন্ট খুলতে হবে। এক কথায় বললে আপনি যে কোনো ব্রোকার হাউসে থেকে (বিও একাউন্ট) খুলতে পারেন। এ বিও একাউন্ট খোলার পর একজন বিনিয়োগকারী প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি উভয় মার্কেটে শেয়ার ব্যবসা করতে পারেন। প্রত্যেক বছর বেশ কিছু কোম্পানি (ইনিশিয়াল পাবলিক অফার ) দিয়ে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। একটি কোম্পানি যখন প্রথমবারের মতো বাজারে প্রবেশ করে বা শেয়ার বাজারে ছাড়ে তাকে প্রাইমারি শেয়ার বলে। যখন আপনি বিও একাউন্ট খুলবেন, তারপর আপনাকে ঐ কোম্পানীর প্রাইমারী শেয়ারের আবেদন পত্রটি সংগ্রহ করতে হবে এবং ঐখানে যেসব ব্যাংক এর লিস্ট থাকবে তার যে কোন একটি ব্যাংক এ তা জমা দিতে হবে। আর যেটাই করেন না কেন, সবকিছুই করতে হবে আপনার একটি ব্রোকার হাউস এর মাধ্যমে। প্রাইমারি শেয়ার একবার বাজারে বিক্রি হয়ে গেলেই তা সেকেন্ডারি হয়ে যায়। তখন সেটা সেকেন্ডারি মার্কেট চলে আসে আর সেই শেয়ার সেকেন্ডারি শেয়ার বলে গণ্য করা হয়। সেকেন্ডারি মার্কেটে আপনি ইচ্ছা মতো শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।
পুঁজি ও ঝুঁকি কেমন?
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বর্তমানে দুটা ক্যাটাগরিতে শেয়ার লেনদেন হয়ে থাকে। প্রাইমারি(আইপিও) এবং সেকেন্ডারি। প্রাইমারি শেয়ারের জন্য আবেদন করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োাজন হয় না। প্রাথমিক শেয়ারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি খুবই কম। সেকেন্ডারি মার্কেটে লাভের সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি ঝুঁকিও বেশি আছে। এজন্য ভালো ভাবে না বুঝে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়।
এবার জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের স্টক এক্সেঞ্জ সম্পর্কে
বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জ দুইটি। একটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং অপরটি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ । এক্সচেঞ্জগুলি বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এন্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত পরিচালনা নীতি দ্বারা পরিচালিত। কমিশন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ঢাকার শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত। এটি দেশের বৃহত্তম শেয়ার বাজার। এটি রাজধানী ঢাকার প্রধানতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই ১৯৫৬ সালে ঢাকা শেয়ার মার্কেটের কার্যক্রম শুর হয়। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুর হয়।
স্টক এক্সচেঞ্জ এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যা কোম্পানি স্টক ও সিকিউরিটিস ব্যবসার সঙ্গে স্টক ব্রোকার ও ট্রেডারদের মধ্যের কার্যক্রমকে সহজতর করে। স্টক এক্সচেঞ্জ সিকিউরিটিস ও অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে। এটি ইনকাম ও ডিভিডেন্ট এর পেমেন্ট নিয়েও কাজ করে। স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়িক সেক্টরে পুঁজিকে উৎসাহিত করে, সঞ্চয়কে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়, কোম্পানির প্রবৃদ্ধিকে সহজতর করতে সহায়তা করে, সম্পদের পুনর্বণ্টন এবং সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তার জন্য পুঁজিকে উৎসাহিত করতে ভূমিকা রাখে।
Array