• ঢাকা, বাংলাদেশ

সংক্রমণ বাড়ার পথ খুলল! 

 admin 
16th Jul 2021 11:01 am  |  অনলাইন সংস্করণ

কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরব হয়ে উঠেছে দেশের সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথ। দীর্ঘ ঘরবন্দি মানুষ সুযোগ পেয়ে যেন নেমে পড়েছে যে যার কাজে। সামনেই ঈদের পর ফের লকডাউন। তাই আগেভাগে গ্রামমুখীও হচ্ছেন অনেকে। এসব কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিনই রাজধানীজুড়ে ছিল তীব্র যানজট। মহাসড়কেও দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ছিল যাত্রীতে ঠাসা। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের প্রতিটি ফেরিতে যানবাহন ও মানুষের প্রচণ্ড চাপ ছিল। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই দেখা যায়নি। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এভাবে মানুষের চলাচল করোনার বিস্তারকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ ভাগ বাড়তি ভাড়ায় গত বুধবার মধ্যরাত থেকেই লোকজন ঢাকা ছাড়তে শুরু করে। কল্যাণপুরে এসআর পরিবহনের রংপুরগামী একটি বাস রাত ১২টায় ছেড়ে যায়। গতকাল সকাল থেকে সব কোম্পানির বাস পুরোদমে চলাচল শুরু হয়। তবে প্রতিষ্ঠিত সব দূরপাল্লার বাস কোম্পানির টিকিট অনলাইনে বিক্রি শেষ হয়েছে। সকাল থেকে বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলো পুরোপুরি সরব হয়ে ওঠে। নগরীর পান্থপথ, কলেজ গেট, কল্যাণপুর, আরামবাগ, ফকিরাপুল এলাকার বাস কাউন্টার এবং গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে গেছে। আবার কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিটের জন্য লোকজনকে ঘুরতে দেখা গেছে।

শ্যামলী এনআর পরিবহনের কর্মকর্তা বাবুল জানান, বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সব এসি বাসের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর গত দুদিন নন-এসি বাসের বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হয়েছে। এখন বাসের সংখ্যা বাড়ানো হলে আবার টিকিট দেয়া হবে, তবে রাস্তার অবস্থার ওপর নির্ভর করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ঢাকা-রংপুর রুটের আগমনী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার

কামাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তাদের রংপুরগামী নির্ধারিত বাস ছেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সকালের দিকে যাত্রী কম ছিল। বিকাল থেকে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। আমাদের সব অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় আজ সকাল থেকে রাজধানী পুরনো চেহারায় ফিরেছে। সড়কে বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, সিএনজি অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহনের সড়কে উপস্থিতি রয়েছে। সকাল থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, কারওয়ানবাজার, শ্যামলী, আগারগাঁও, মহাখালী, বনানী, মগবাজারসহ নগরীর প্রায় সব সড়কেই যানবাহনের চাপে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাখালী, মগবাজার ও মৌচাক ফ্লাইওভারেও যানজট হয়েছে। যানজটের কারণে যাত্রীদের দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলার নির্দেশনা থাকলেও অনেক বাসেই তা মানা হয়নি। সিট পূর্ণ করার পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নিতে দেখা গেছে।

মহাসড়ক ও ফেরিতে প্রচণ্ড চাপ : গতকাল সকাল থেকেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটের ফেরিতে ঘরমুখো মানুষের চাপ সকাল থেকেই অনেকে বাড়ে। ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা আরিচা মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ ছিল। শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরিতে যানবাহনের পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের মানুষের চাপ কিছুটা কম ছিল। এখানে বেশিরভাগ যাত্রী ছোট লঞ্চে পদ্মা পার হন। দুই ঘাটেই ঢাকামুখী যানবাহনেরও চাপ ছিল। কুরবানির পশু নিয়ে ছোট বড় ট্রাক চলাচলের কারণে মহাসড়কের অনেক স্থানে দীর্ঘ যানজট হতে দেখা যায়।

সদরঘাটে ঘরেফেরা মানুষের ভিড় : কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিন গতকাল সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে দেখা গেছে যাত্রীদের বাড়তি ভিড়। ঈদযাত্রার ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছেন যাত্রীরা। তবে ভাড়া দ্বিগুণ নিলেও গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে দেখা গেছে লঞ্চগুলোতে। এ ঘটনায় বরিশালগামী গ্রিন লাইনের একটি লঞ্চকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করে বিআইডবিøউটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রকি আহমেদ জানান, ভোর থেকেই সদরঘাটে ভিড় জমাতে থাকেন ঈদে ঘরেফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০%। তবে লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানতে দেখা যায়নি কোথাও। যাত্রীদের মধ্যে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখতে লঞ্চের ডেকে লাল দাগ দিয়ে চিহ্ন আঁকা থাকলেও তা-ও আমলে নেয়নি কেউ। গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অনেক লঞ্চকে বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা যায়। এছাড়া বিকাল থেকে বরিশালগামী লঞ্চগুলো ছাড়লেও সকাল থেকেই ঘাটে ভিড় জমাতে থাকে যাত্রীরা। এতে সদরঘাট এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রীদের চাপে স্বাস্থ্যবিধির নাজুক অবস্থা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার (যাপ) সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের ভিড় থাকবেই। আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মেনেই লঞ্চে যাত্রী নিচ্ছি।

পরিবার নিয়ে চাঁদপুরগামী যাত্রী মো. সোলাইমান বলেন, আমি কেরানীগঞ্জের একটি কারখানায় কাজ করি। ঈদের আগে ভাড়া কয়েকগুণ বেশি হয়। জায়গাও পাওয়া যায় না। তাই কারখানায় ছুটি নিয়ে আগেভাগেই আমরা গ্রামে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়া হলো। কিন্তু গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় আসা লঞ্চগুলোতেও যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা হাসিবুল আহসান জানান, একটি কাজের জন্য ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, লকডাউনে আটকে ছিলাম বলে এতদিন ঢাকায় আসতে পারিনি। ঈদের পর আবার ১৪ দিন লকডাউন। তাই কাজ শেষ করে ঈদের আগেই আবার বাড়ি রওনা দিব।

এদিকে ঘাটে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তুলতে বিআইডবিøউটিএর পক্ষ থেকে মাইকিং করতে দেখা গেছে। এছাড়া ঈদকে ঘিরে আরো কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছে সংস্থাটি। এ বিষয়ে ঢাকা নদী বন্দরের নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার প্রথম দিনে যাত্রীদের ভিড় বেশি ছিল। ঈদকে সামনে রেখে আরো ভিড় বাড়বে। আমরা এ জন্য বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছি। ঘাটে আগে পন্টুন ছিল ১৮টি। ঈদের জন্য নতুন আটটি যোগ করা হয়েছে। এছাড়া ঈদকে ঘিরে বাড়তি ৩০টি লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দোকান-শপিংমল, পশুর হাট : বিধিনিষেধ শিথিলের সুযোগে রাজধানীসহ সারাদেশেরই দোকান ও শপিংমলগুলো খুলেছে। ঈদ সামনে রেখে দোকানে দোকানে বেড়েছে ক্রেতার ভিড়। সবখানেই দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি পালনে অনীহা। রাজধানীর নিউমার্কেটে কথা হয় দোকানি শরিফুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনার কারণে আমাদের ব্যবসায় লালবাতি জ¦লে গেছে। আমরা পথে বসে গেছি। এই ঈদে পোশাকের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ থাকে কম। সবাই ছুটেন কুরবানির হাটে। তবে আশার কথা ১৫ দিনের কঠোর লকডাউন শিথিল হওয়ায় কিছু ক্রেতা আসছেন। কিন্তু বিক্রি তেমন ভালো নয়। অন্যদিনে শাহানা বেগম নামে ধানমন্ডি এলাকার এক গৃহিণী বলেন, ঈদের কেনাকাটা নয়; নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পোশাক কিনতে এসেছি। ১৫ দিন দোকান বন্ধ থাকায় কিনতে পারিনি। তবে ফারিয়া রহমান নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, সামনে ঈদ। কালপরশু গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই পোশাক কিনতে এসেছি। পছন্দ হলে কিনব। একই বক্তব্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি চাকরিজীবীর। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে গ্রামে যাব। দুটি বাচ্চা আছে। ঈদে বউ-বাচ্চার জন্য কিছু তো কিনতেই হয়। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক পশুর হাট আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হলেও এরইমধ্যে হাটে হাটে গরু এসেছে। ক্রেতারাও যাচ্ছেন। গরুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই দেখা যায়নি এ পর্যন্ত।

করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা : লঞ্চ, বাস, ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন না করায় দেশে করোনার সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সরোয়ার হোসেন বলেন, লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে করোনার বিস্তার ঠেকানো। মানুষের চলাচল সীমিত হলে একজনের কাছ থেকে অন্যজনে জীবাণুটি ছড়াবে কম। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা গেছে, লকডাউনকে কেন্দ্র করে যে একটা অবস্থা হয়, তাতে সংক্রমণ গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আসলে এ ধরনের বিধিনিষেধ এখানে হিতে বিপরীত হয়ে আসে। মানুষকে ঘরে রাখার জন্য লকডাউন দেয়া হলো। কিন্তু মানুষ সেটা ছুটি মনে করে গ্রামে ছোটেন। তিনি বলেন, এটা আসলে সাধারণ মানুষের সমস্যা নয়। এ দেশে বেশিরভাগ মানুষের কাজকর্ম ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরমুখী। লকডাউন দিলে মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই টিকে থাকার প্রয়োজনে সবাই হুমড়ি খেয়ে গ্রামে ছোটেন। আর এটা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে যায়। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, ফেরিতে গাদাগাদি করে চলতে গিয়ে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সে আক্রান্ত ব্যক্তিটি গ্রামের বাড়ি গিয়ে নিজের অজান্তেই অন্য লোকজনের মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে দেন। তাই লকডাউনের চেয়ে টিকা দেয়া, মাস্ক পড়া, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর সরকারের বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১