• ঢাকা, বাংলাদেশ

হোয়াইটওয়াশ হল টাইগাররা 

 admin 
26th Mar 2021 11:49 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের জোড়া সেঞ্চুরির পর বল হাতে জেমস নিশামের ৫ উইকেট শিকারে ওয়ানডেতে ষষ্ঠবারের মত বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো নিউজিল্যান্ড। আর দেশের মাটিতে পঞ্চমবারের মত টাইগাদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিলো কিউইরা।

আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। রান বিবেচনায় বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় নিউজিল্যান্ডের। প্রথম ওয়ানডে ৮ উইকেটে ও দ্বিতীয় ম্যাচ ৫ উইকেটে জিতেছিলো নিউজিল্যান্ড। হোয়াইটওয়াশের পাশাপাশি ৩-০ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিলো কিউইরা।

প্রথম দুই ওয়ানডের পর আজ ওয়েলিংটনেও টস জিতে নিউজিল্যান্ড। প্রথম দুই ওয়ানডেতে পরে ব্যাট করলেও, এবার প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় কিউইরা। স্বাগতিক দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ ওভারে ৪০ রান পায় কিউইরা।

অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী ভাঙ্গেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ। ১৮ রান করা নিকোলসকে শিকার করেন তাসকিন।

তাসকিনের উইকেট শিকারের আনন্দকে পরক্ষণেই দ্বিগুন করেন আরেক পেসার রুবেল হোসেন। হার্ড-হিটার গাপটিলকে ২৬ রানে থামান রুবেল।

৪৯ রানে ২ ওপেনারকে ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন ও রুবেল। ১১তম ওভারে সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দেন রুবেল। সিরিজে প্রথমবারের মত খেলতে নামা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেইলরকে ৭ রানে ফিরিয়ে দেন রুবেল।

৫৭ রানে টেইলরের বিদায়ে ব্যাকফুটে চলে যায় নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা ডেভন কনওয়ে ও গত ম্যাচে সেঞ্চুরি হাকানো অধিনায়ক টম লাথাম।

পরিস্থিতির কারনে এবারও লাথামের কাছ থেকে বড় ইনিংসের প্রত্যাশা ছিলো নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু এবার লাথামকে সেই সুযোগ দেননি মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। ব্যক্তিগত ১৮ রানে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ককে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সৌম্য।

১২০ রানে চতুর্থ উইকেট পতনে চিন্তায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। এই অবস্থায় ক্রিজে দুই অনভিজ্ঞ কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেল। এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে একত্রে অভিষেক হয় তাদের। কনওয়ে-মিচেলের উপর আস্থা রাখাটাও দুঃসাহস ছিলো নিউজিল্যান্ডের।

কিন্তু ব্যাট হাতে সাহস দেখিয়েছেন কনওয়ে ও মিচেল। দল চাপে থাকায় কোন প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে উইকেটে সেট হবার চেষ্টা করেন দু’জনে। রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টায় ছিলেন কনওয়ে। ৫২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।

৩৫তম ওভারে জুটিতে অর্ধশকত পূর্ন হয় কনওয়ে ও মিচেলের। এরপর রানের গতি কিছুটা বাড়ান তারা। এতে ৪০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ২১১।

৪১তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মিচেল। এজন্য ৬৩ বল লেগেছে তার। অন্য প্রান্তে সেঞ্চুরির দিকে হাটচ্ছিলেন কনওয়ে। অবশেষে ৪৩তম ওভারে তাসকিনের ডেলিভারিকে পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ৯৫ বলে ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কনওয়ে। সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তুলতে থাকা এ ব্যাটসম্যানকে ১২৬ রানে থামান করেন মুস্তাফিজ। ১১০ বল মোকাকেবলায় ১৭টি চার মারেন কনওয়ে।

কনওয়ে যখন ফিরেন তখন মিচেলের রান ৭৯ বলে ৭০। ৪৮ ওভার শেষে ৮২ বলে ৭১। ৪৯তম ওভার শেষে ৮৩। মুস্তাফিজের করা শেষ ওভার থেকে ১৭ রান নিয়ে ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরি করেন মিচেল। এতে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৮ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। এই ভেন্যুতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ৯২ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন মিচেল। ৭০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার রুবেল। ব্যয়বহুল ছিলেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে ৮৭ রানে ১ উইকেট নেন তিনি। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও সৌম্য।

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ৩১৯ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে ৭ ওভারের মধ্যে উপরের সারির তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ১ রান করে করেন। ৩টি বাউন্ডারিতে ইনিংসের শুরুটা ভালো করেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু নামের পাশে ২১ রান রেখে থামেন তিনি। এই তিন উইকেটই নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি।

২৬ রানে ৩ ব্যাটসম্যানের পতনে, উইকেট বাঁিচয়ে খেলায় মন দেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম। পরের ১১ ওভারে মাত্র ২২ রান যোগ করতে পারেন তারা। ৩৯ বলে ৬ রান করা মিঠুনকে শিকার করে টেস্ট মেজাজে চলা জুটি ভাঙ্গেন নিউজিল্যান্ডের পেসার কাইল জেমিসন।

মিঠুন ফিরলে, ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গীন হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এই জুটি রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও বেশি দূর যেতে পারেননি। জুটিতে ৩২ বলে ২৯ রান যোগ হবার পর বিচ্ছিন্ন হন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। ৪৪ বলে ১টি চারে ২১ রান করে আউট হন মুশফিক।

দলীয় ৭৭ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকের বিদায়ের পর দ্রুত পতন ঘটে মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহেদি হাসানের। মিরাজ খালি হাতে ও মাহেদি ৩ রান করেন। ৮২ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

অষ্টম উইকেটে তাসকিন ও নবম উইকেটে রুবেল দীর্ঘক্ষণ উইকেটে থেকে মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গ দেয়ায় দ্রুত গুটিয়ে যেতে হয়নি বাংলাদেশকে। জুটিতে তাসকিন-মাহমুদুল্লাহ ৪৩ বলে ২০ রান ও রুবেল-মাহমুদুল্লাহ ৫৯ বলে ৫২ রান যোগ করেন। রুবেলের সাথে জুটিতে ৩১ বলে ৪৭ রানই ছিলো মাহমুদুল্লাহর। তাই লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সহায়তায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে পারেন মাহমুদুল্লাহ।

তাসকিন ২৪ বলে ৯ ও রুবেল ২৮ বলে ৪ রান করেন। আর শেষ ব্যাটম্যান হিসেবে খালি হাতে আউট হন মুস্তাফিজ। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭৩ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১৫৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের নিশাম ৫টি ও হেনরি ৪টি উইকেট নেন। দু’জনই ২৭ রান খরচ করেছেন। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কনওয়ে।

বিশ্বকাপ সুপার লিগে এটি ছিলো নিউজিল্যান্ডের তৃতীয় ম্যাচ। সিরিজের সব ম্যাচ জয়ে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট পেল নিউজিল্যান্ড। আর সিরিজে তিন ম্যাচ হারে কোন পয়েন্ট অর্জন করতে পারলো না বাংলাদেশ। তারপরও বাংলাদেশের সংগ্রহে ৩০ পয়েন্ট আছে। কারন আগের সিরিজে তিন ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিলো টাইগাররা।

আগামী ২৮ মার্চ থেকে হ্যামিল্টনে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড।

স্কোর কার্ড (টস-নিউজিল্যান্ড) :
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
মার্টিন গাপটিল ক লিটন ব রুবেল ২৬
হেনরি নিকোলস ক লিটন ব তাসকিন ১৮
ডেভন কনওয়ে অতি (আফিফ) ব মুস্তাফিজ ১২৬
রস টেইলর ক মুস্তাফিজ ব রুবেল ৭
টম লাথাম ক মিরাজ ব সৌম্য ১৮
ড্যারিল মিচেল অপরাজিত ১০০
জেমস নিশাম ক লিটন ব রুবেল ৪
মিচেল স্যান্টনার অপরাজিত ৩
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-২, নো-৩, ও-১০) ১৬
মোট (৫০ ওভার, ৬ উইকেট) ৩১৮
উইকেট পতন : ১/৪৪ (নিকোলস), ২/৪৯ (গাপটিল), ৩/৫৭ (টেইলর), ৪/১২০ (লাথাম), ৫/২৭৯ (কনওয়ে), ৬/২৯০ (নিশাম)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজুর রহমান : ১০-০-৮৭-১ (নো-২),
তাসকিন আহমেদ : ১০-১-৫২-১ (ও-১),
রুবেল হোসেন : ১০-১-৭০-৩ (নো-১),
মাহেদি হাসান : ৭-০-৪৬-০ (ও-১),
মেহেদি হাসান মিরাজ : ৫-০-২৩-০,
সৌম্য সরকার : ৮-০-৩৭-১ (ও-১)।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক লাথাম ব হেনরি ১
লিটন দাস ক বোল্ট ব হেনরি ২১
সৌম্য সরকার ক বোল্ট ব হেনরি ১
মোহাম্মদ মিঠুন ক স্যান্টনার ব জেমিসন ৬
মুশফিকুর রহিম ক এন্ড ব নিশাম ২১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৭৬
মেহেদি হাসান মিরাজ ক কনওয়ে ব নিশাম ০
মাহেদি হাসান ক লাথাম ব নিশাম ৩
তাসকিন আহমেদ ক কনওয়ে ব হেনরি ৯
রুবেল হোসেন ক লাথাম ও নিশাম ৪
মুস্তাফিজুর রহমান এলবিডব্লু ব নিশাম ০
অতিরিক্ত (বা-১, নো-১, ও-১০) ১২
মোট (৪২.৪ ওভার, অলআউট) ১৫৪
উইকেট পতন : ১/১০ (তামিম), ২/১৮ (সৌম্য), ৩/২৬ (লিটন), ৪/৪৮ (মিথুন), ৫/৭৭ (মুশফিক), ৬/৭৭ (মিরাজ), ৭/৮২ (মাহেদি), ৮/১০২ (তাসকিন), ৯/১৫৪ (রুবেল), ১০/১৫৪ (মুস্তাফিজ)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
হেনরি : ১০-২-২৭-৪ (ও-১),
বোল্ট : ১০-১-৩৭-০ (ও-১),
জেমিসন : ৮-০-৩০-১ (ও-২, নো-১),
নিশাম : ৭.৪-১-২৭-৫ (ও-২),
ড্যারিল মিচেল : ৪-০-২৫-০ (ও-১),
মিচেল স্যান্টনার : ৩-০-৭-০।
ফল : নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ডেভন কনওয়ে (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ সেরা : ডেভন কনওয়ে (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতলো নিউজিল্যান্ড।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১