
সহজ-সরল শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।
এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা এমএলএম পদ্ধতির মতো একেকজনকে ভর্তি করানোর পর প্রশিক্ষণের নামে সময়ক্ষেপণ করে, তারপর চাকরিপ্রার্থীকে আরও কিছু ব্যক্তিকে যুক্ত করার মাধ্যমে অধিক টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। ভুক্তভোগী কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রের ১৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার এনামুল কবির সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, আশরাফুল ইসলাম (২৭), আল আমিন মণ্ডল রতন (৩০), উজ্জ্বল হোসেন (২৩), শিমুল মোল্লা (১৯), জহিরুল ইসলাম ওরফে পাপ্পু মিয়া (২০), আব্দুল মোমিন (২৪), শাহীন আলম (২৪), নুর আলম সিদ্দিকী (২৫), মাজেদুল ইসলাম (২৫), ইমরুল হাসান (২৩), মনিরুজ্জামান (২৪), রিঙ্কু কুমার দাস (৩০) ও অভিজিত পাণ্ডে (২৪)।
এরা এক্সিলেল্ট ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা করত। ভাটারা থানাধীন বারিধারার নতুন বাজার এলাকার প্রাইম অর্কেড বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় অভিযান চালিয়ে বুধবার তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে কোম্পানির প্যাডে ১১৫টি অঙ্গীকারনামা, কোম্পানির নামে পূরণ করা ৪২টি আবেদনপত্র ও এগ্রিমেন্ট ফরম এবং পূরণকৃত ৩০টি ট্রেডিং কার্ড উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার এনামুল কবির বলেন, লাইফওয়ে নামে একটি কোম্পানিও এ ধরনের প্রতারণাযুক্ত ছিল। গত অক্টোবর মাসে ওই কোম্পানির ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই কোম্পানির ২-৩ জন প্রতারক এক্সিলেল্ট ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর বারিধারা এলাকায় একটি কোম্পানি আছে। ওই কোম্পানির কাজই হচ্ছে চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়া। টাকা নেয়া হয়ে গেলে তারা প্রশিক্ষণের নাম করে টালবাহানা করে, কোনো চাকরি দেয় না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, একসময় এমএলএম পদ্ধতির মতো আরও চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করতে বলে। তাদের ফাঁদে পড়ে নিরুপায় বেকাররা একপর্যায়ে চাকরিপ্রার্থী জোগাড় করে এনে দেয়, বিনিময়ে তারা সামান্য কিছু কমিশন পায়। চাকরিপ্রার্থী না দিলে কমিশনও আসে না। ফলে তাদের সেখান থেকে ফিরে যেতে হয়। এভাবে শত শত ছেলে মেয়ে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে।
সিআইডি কর্মকর্তা এনামুল কবির বলেন, কারও কাছ থেকে ৩০ হাজার, কারও থেকে ৪৫ হাজার, কারও থেকে ৮০ হাজার আবার কারও কাছ থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। গত দুই মাসে এভাবে ১৩০ জনের কাছ থেকে এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় ১৮ জনের নামে মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই চক্রের মূলহোতাকে শনাক্ত করা হয়েছে। মূল হোতাসহ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতাদের চেষ্টা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল হক, পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম এবং এসআই জাকির হোসেনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।