• ঢাকা, বাংলাদেশ

২ লাখ কোটি টাকার ঈদ বাণিজ্য 

 admin 
03rd Jun 2019 1:04 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ব্যস্ততা শেষে মনোযোগ দিয়েছেন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায়। নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমলে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। ফলে ঈদ সামনে রেখে চাঙ্গা হয়েছে দেশের অর্থনীতি। বেড়েছে ঈদ-অর্থনীতির আকার ও অঙ্ক। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্কের টাকার সিংহভাগই উড়ছে ঈদবাজারে। ইতিবাচক গতি আনছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
ঈদ উপলক্ষে অর্থের বড় একটা জোগান আসছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, গতিশীল অভ্যন্তরীণ বাজার, জাকাত ও ফিতরা থেকে। এ ছাড়াও অর্থের অন্যতম একটি উৎস রেমিটেন্সের (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ) কারণে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। ঈদের অর্থনীতি নিয়ে সরকারিভাবে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। তবে বেসরকারি গবেষণা অনুসারে ঈদ ও রমজানে অর্থনীতিতে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত লেনদেন হয়। এ টাকার বড় অংশই যায় গ্রামে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর অনুমানের ভিত্তিতে করা এক তথ্যে জানা গেছে, এবার ঈদ-বাণিজ্যে ৬০ শতাংশ পোশাক, ২০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য এবং বাকি ২০ শতাংশ অন্য পণ্য বিক্রি হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়বে তেমনি চাঙ্গা হয়ে উঠবে গোটা অর্থনীতি। তাদের মতে, ভোগ-বিলাস খাতেই বেশির ভাগ টাকা যাচ্ছে। তবে কিছু অংশ যাচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্পভিত্তিক উৎপাদন খাতে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঈদ উৎসব ঘিরে বাড়তি টাকার প্রবাহে সচল হয়ে ওঠে গ্রামের অর্থনীতি। এ সময় নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও টাকা যায়। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। তবে বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এ জন্য ওই টাকা উৎপাদন খাতে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
বিশ্ব বাঙালির কাছে ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়ে প্রথম রোজা শুরু থেকেই। আর দুই একদিন বাদেই গ্রামেগঞ্জে পাড়ায়-মহল্লায় অলি গলিতে বেজে ওঠবে প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ।’ এই গানের সুরের সঙ্গে বাঙালি মুসলিমের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ আনন্দের অনির্বাচনীয় বারতা। ঈদের আনন্দ সবসময় একই না থাকলেও মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে আনন্দের কমতি কখনই ছিল না কখনো। সেকালে একালে সবকালেই আনন্দময় সর্বজনীন ঈদ উৎসব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ উৎসবের কেনাকাটায় শুধু বস্ত্র কিংবা জুতা নয়, ভোগ্যপণ্য, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ভ্রমণ, পবিত্র ওমরা পালন, ফার্নিচার, গাড়ি ও আবাসন খাতসহ প্রতিটি সেক্টরে নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে সমাজের বিত্তবানদের জাকাত, ফিতরা দেয়ায় ধনী-গরিব সবার হাতে থাকে টাকার প্রবাহ। উৎসব ঘিরে যেমন ব্যয় হচ্ছে, তেমন জোগানও এসেছে বেতন-বোনাস থেকে। ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনও বেড়েছে ব্যাপক হারে। রেকর্ড গতিতে দেশের অর্থনীতিতে জমা হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মে মাসের ২৫ দিনে ১৩৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। ১৩৫ কোটি ডলার যোগ করলে চলতি অর্থবছরে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৪৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। অর্থবছরের বাকি প্রায় ১ মাস, এই সময়ে দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স আসবে। সে হিসাবেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবার রেমিটেন্স ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে। রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। ঈদের কেনাকাটায় এটিএম বুথে প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার বেশি উত্তোলন করছেন গ্রাহকরা। মোবাইলে দৈনিক লেনদেন হচ্ছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।
ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এবারের ঈদ উপলক্ষে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশব্যাপী ২২ লাখ দোকান আছে। তাদের দৈনিক মোট এক হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। আর ঈদের আগে বিক্রি প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। তাতে সাড়া দেশে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার দৈনিক বিকিকিনি হয়। এ ছাড়া টেলারিং এবং অনলাইনেও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদ বাজার ঘিরে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন ছাড়িয়ে গেছে। মো. হেলাল উদ্দিনের হিসাবে জাকাত ও ফিতরার প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা, তৈরি পোশাকের ৩৫ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যের বাজার ২৫ হাজার কোটি এবং ঈদ বোনাস, পরিবহন ও অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন হয়। এ ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ২৭ হাজার কোটি টাকার কিছু অংশ ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন হয়ে থাকে। এদিকে বাংলাদেশ ই-কমার্স এসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৯৫০। এর বাইরেও অনেক ই-কমার্স সাইট রয়েছে। এ ছাড়াও ফেইসবুক পেজ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। এসব সাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের মার্কেটিং নিয়ে এবারের ঈদ বাজার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঈদকেন্দ্রিক এই ই-কমার্স রাজধানী ছাড়িয়ে জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ই-কমার্সে বার্ষিক লেনদেনের আর্থিক আকার শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে হাজার কোটি টাকায় রূপ নিয়েছে। আগামী ৩ বা ৪ বছরের মধ্যে এ আকার ১০ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হবে। এ ছাড়া ঈদকে আনন্দে পর্যটনশিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি ঈদে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে কক্সবাজার। অন্যদিকে, সারাবছর কক্সবাজার ভ্রমণে আসে মোট ১৫ থেকে ২০ লাখ পর্যটক। এই সময় সব হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট পর্যটকে থাকে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন জেলার দর্শনীয় স্থানে ঈদে পর্যটকের উপস্থিতি অনেক বেড়ে যায়। ঢাকার আশপাশে বিশেষ করে গাজীপুরে ব্যাপকহারে রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পার্ক ও অ্যামিউজমেন্ট পার্কে পর্যটকের উপস্থিতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১