
কৌশলটা সূক্ষ্ম। প্রথমে তারা গাছের ডালপালা কেটে নিয়ে আসে। এরপর গাছের গোড়াও কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। জ্বালানির জন্য এভাবেই দিনের পর দিন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল আর নতুন ঘর তুলতে গিয়ে সমতল বানিয়ে ফেলা হচ্ছে পাহাড়। কক্সবাজারের উখিয়ায় বসতি গড়ে তুলতে নির্বিচারে পাহাড় বিলীন করছে তারা। প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা পাহাড় কেটে মাটি সমান করছে। এছাড়া, বুলডোজার দিয়েও পাহাড় কাটা হচ্ছে। নতুন আবাসন তৈরির নামে এসব পাহাড় কাটতে ইন্ধন যোগাচ্ছে ‘আইওএমসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা।
বনবিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পাহাড় কাটার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। নির্বিচারে বন ও পাহাড় কাটার ফলে এ অঞ্চলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। এ কারণে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা।
এসবের মধ্যে উঠে এসেছে আরেক ভয়ংকর তথ্য। উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রায় ৫ হাজার একর বন ও পাহাড় কাটা পড়েছে। সে কারণে সেখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘রোহিঙ্গা ঢলে বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, ব্যবস্থাপনা ও রান্নার জ্বালানির জন্য ৫ হাজার একর বন ও পাহাড় কাটা পড়েছে। ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্য, প্রতিবেশ ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। রোহিঙ্গারা প্রতি মাসে ৭ হাজার টন জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছে। প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য অস্থায়ী একটি আশ্রয় ঘর নির্মাণের জন্য গড়ে ৬০টি বাঁশের প্রয়োজন হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। তবে তাদের আশ্রয়ের জন্য দেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এই ক্ষতি সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। সেখানকার পানির স্তরও নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুব শিগগিরই হবে বলে মনে হয় না। এই সংকট সমাধানে সময় লাগবে। সে কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পরিবেশ আন্দোলনের সাথে জড়িত কর্মী সাদিয়া জাহান ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সময় এখন ডটকমকে বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়ার জন্য যারা অনলাইনে অফলাইনে আর্তি জানিয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে, আজ তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশটা মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে এদের উৎপাতে, তবুও তাদের পাত্তা নাই। অদ্ভূতভাবে তারা আজ নিশ্চুপ!
Array