• ঢাকা, বাংলাদেশ

৯ বছরেও শেষ হয়নি পিংকি আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা 

 admin 
19th Jan 2019 7:39 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি শ্যামলী আডিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী নাশফিয়া আখন্দ পিংকির (১৪) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় প্রতিবেশী মুরাদ মৃধা ও বাড়ির কেয়ারটেকার আবুল কালামকে। ঘটনার এক বছরের মাথায় গ্রেফতার দুজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। এরপর কেটে গেছে আরও ৮ বছর। এর মধ্যে আদালত পরিবর্তন হয়েছে চারটি। বর্তমানে ঢাকার শিশু ও নারী নির্যাতন আদালত-৩-এ মামলাটি বিচারাধীন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নয় বছরেও বিচার শেষ হয়নি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতে এ ধরনের দীর্ঘসূত্রিতা ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছে।
মামলার বাদী পিংকির বড় চাচা আলী আশরাফ আখন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‌‘মামলার বিচারকাজে এত দীর্ঘসূত্রিতার কারণ আমি নিজেও জানি না। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সাল— এই এক বছরের বেশি সময়ে মাত্র একদিন সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। সেদিনও আদালতে বিচারক ছিলেন না, সরকার পক্ষের পিপি ছিলেন না। অনেকদিন পর পর তারিখ পড়ে। কিন্তু তখন গিয়েও বিচারক পাওয়া যায় না। পেশকার একটা লম্বা সময় পরের একটা তারিখদেন। এভাবেই চলছে।’ আদালতের কালক্ষেপণের কারণে মামলার বিচারকাজ শেষ হতে এত সময় লাগছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৪ বার আদালত পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে, পরবর্তীতে মহানগর দায়রা জজ আদলত ও তৃতীয় দফায় ঢাকার শিশু ও নারী নির্যাতন আদালত-৪ থেকে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ৩-এ। মামলাটি এখন এই আদালতে বিচারাধীন।
ঢাকার শিশু ও নারী নির্যাতন আদালত-৪-এর পিপি ফোরকান আলী বলেন, ‘মামলাটি আমার কাছে ছিল এক বছর আগে। এখন আদালত-৩-এ আছে। মামলার বিচারকাজ চলমান ছিল। সাক্ষী গ্রহণ করা হচ্ছিল। আদালত পরিবর্তন হওয়ার পর মামলার সর্বশেষ অবস্থান আমার জানা নেই।’
বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রিতা সম্পর্কে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ন্যায়বিচার প্রলম্বিত হচ্ছে। আদালতের এই সমস্যাগুলো তো আছেই। এগুলো প্র্যাকটিক্যাল সমস্যা। কিছু কিছু ডিলে (বিলম্ব) আমরা রিজন্যাবল মনে করি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এই ধরুন ৯ বছর, একটা ট্রায়াল হতে এতটা দীর্ঘ সময় লাগার কোনও কারণ নেই। উভয় পক্ষ যদি এক্ষেত্রে সক্রিয় থাকে বিশেষ করে রাষ্ট্র পক্ষের যারা পিপি থাকেন, তারা যদি সক্রিয় থাকেন, আদালতকে অ্যাসিস্ট করেন, বার বার নজরে আনেন, তাহলে এত সময় লাগার কথা নয়।’ তিনি বলেন, ‘ক্রিমিনাল কেসগুলোতে আয়ু, যিনি মামলা দায়ের করেন বাদী পাশাপাশি যদি কোনও ইমপার্শিয়াল উইটনেস থাকে যারা মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন সাক্ষী হলেই মামলা শেষ করা সম্ভব।’

পিংকির লেখা চিরকুট

 

কোর্টের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই আইনজীবী বলেন, “এই জায়গায় কোর্টেরও গাফিলতিও আছে। কোর্ট দেখছেন, এটা কত সনের মামলা। কোর্ট নিজেও পিপি সাহেবকে বলতে পারেন, কী ব্যাপার সাক্ষী হাজির করেন না কেন? আগামী ডেটে সবাইকে হাজির করেন। নয়তো সবার বিরুদ্ধে ‘কজ নোটিশ’ করবো। এগুলো আমরা যেভাবে বলছি যারা কাজের মধ্যে থাকেন তারা অধিকাংশ কেসের ক্ষেত্রে এগুলো নিয়ে ভাবেনও না, করেনও না।’ তারা শুধু চাকরিটা করে যান বলে মন্তব্য করেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘টেকনিক্যাল এসব বিষয়ে আমরা হাইকোর্টেও প্রশ্ন তুলি। কিন্তু তারা খুব বেশি একটা আমলে নেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোর্টে ডেকে ধমকানো না হয়।’

কী ঘটেছিল সেদিন
ঘটনার দিন বাসায় ছোট দুই ভাই-বোনের সঙ্গে ছিল পিংকি। মা মারা গেছেন দশ বছর আগে। দাদি ছিলেন বাসার বাইরে। পিংকি নতুন স্কুল ড্রেস দর্জির কাছ থেকে আনার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিল। এরই মধ্যে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার সময় হাত কেটে যায় পিংকির। কাটা হাতের চিকিৎসা করাতে বাসার পাশে ফার্মেসিতে যাওয়ার পথে দেখা হয় প্রতিবেশী মুরাদের সঙ্গে। দুজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পিংকিকে থাপ্পর মারে মুরাদ। এরপর বাসায় ফিরে আসে পিংকি। বাসায় ফেরার পর নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে তার পড়ার টেবিল থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেটি পিংকির দাদিকে উদ্দেশ করে লেখা।
এতে লিখা ছিল, ‘দাদি, আমি লিমান-লিমিনের সাথে শয়তানি করতে গিয়ে হাত কাটছিলাম। এর জন্য মুরাদ সবার সামনে আমারে থাপড় মারছে, সবাই তা নিয়ে হাসাহাসি করতাছে। আমার জন্য যাতে তোমাদের মান-সম্মান না যায় তার জন্য আমি ফাঁসি দিলাম। আমার মৃত্যুর জন্য আমার পরিবারের কেউ দায়ী না।’
এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে প্রতিবেশী মুরাদ ও পিংকিদের বাসার কেয়ারটেকার আবুল কালামকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন পিংকির চাচা আলী আশরাফ আখন্দ। পিংকির পরিবারের দাবি, মুরাদ প্রায়ই পিংকিকে বিরক্ত করতো। তার কারণেই পিংকি আত্মহত্যা করছে। পিংকি কখন কী করছে, তা মুরাদকে জানাতো কেয়ারটেকার আবুল কালাম।
পিংকি আত্মহত্যার পরই পালিয়ে যায় মুরাদ মৃধা। ঘটনার চার দিন পর খুলনার খালিশপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুরাদ পুলিশের কাছে দাবি করে, পিংকির সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১