প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ৭:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৩, ২০২১, ১:২৪ পি.এম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসছেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।
তাঁরা হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মুহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারী ও ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক।
তাঁদের বরণ করতে নেওয়া হচ্ছে নানা আনুষ্ঠানিকতাসহ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার প্রস্তুতি। এদিকে চলতি মার্চ মাসের শুরু থেকে দেশে ফের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় অতিথিদের আসা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ ঘিরে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
তবে সব রকম শঙ্কা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েই তাদের ঢাকা সফর নিশ্চিত বিষয়ে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন বলে আশ্বস্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি আসছেন, এতেই আমরা অনেক খুশি। পাশাপাশি অন্যান্য চারজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন। আমরা খুবই আনন্দিত, ইট শোজ দ্য হাইট অব ডিপ্লোম্যাটিক ম্যাচুরিটি অ্যান্ড এচিভমেন্ট। তাঁরা সবাই আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, আমাদের স্বাধীনতা দিবস, সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে আসছেন-এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
আবদুল মোমেন বলেন, ‘এই ইভেন্ট হচ্ছে ভেরি স্পেশাল ইভেন্ট। বাংলাদেশের প্রতি আমন্ত্রিত দেশগুলোর যে শ্রদ্ধাবোধ তার পরিচায়ক। স্বাধীনতার প্রতি আমন্ত্রিত দেশগুলোর বিরাট আগ্রহের জায়গা বঙ্গবন্ধু। যিনি তাঁর পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। যেসব দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান আসছেন না, তাঁরাও বার্তা পাঠিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও বার্তা পাঠিয়েছেন।’
দেশগুলোর পাঠানো বার্তার প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘বার্তাটা হলো, আমাদের সুবর্ণজয়ন্তীতে তাঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন এবং সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর যে উদযাপন এবং ওনার যে ত্যাগ, সেগুলো অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন তাঁরা।’
এদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের ধারাবাহিক আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত বুধবার নিরাপত্তা উপকমিটির এক সভা শেষে বিষয়টি জানান তিনি।
দেশের বাইরের অতিথি সম্পর্কে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, নেপালের রাষ্ট্রপতি, ভুটানের রাজা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী- এই পাঁচজনের সফর নিশ্চিত হলেও তারা কখন আসবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত করে জানানো হবে পরে। কারণ, অনেক সময় তাদের সফরের তারিখ চেঞ্জ হতে পারে।
প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বুধবার জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা বিষয়ে তার নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা উপকমিটি নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি নিরাপত্তা কন্ট্রোলরুম থাকবে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে নিরাপত্তার প্রয়োজনে ৯৯৯ সেবাটি সব সময় চালু থাকবে। সকল অনুষ্ঠানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সসহ ফায়ার সার্ভিস নিয়োজিত থাকবে। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সাপোর্ট সেখানে থাকবে।
ঢাকার বাইরে সব আয়োজনে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে কামাল বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ ঢাকার বাহিরে যেসব স্থানে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বা পরিদর্শনে যাবেন সেসব স্থানে গোয়েন্দা নজরদারিসহ সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠানের সময় যানজট পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশপ্রধানসহ সবাই কাজ করবে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেবে অনুষ্ঠানে কীভাবে যান চলাচল করবে এবং কোন রাস্তা কতক্ষণ বন্ধ থাকবে।’
করোনা সংক্রামণ বাড়ার এই সময়ে এই আয়োজন কিভাবে সুসম্পন্ন হবে?- সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে আয়োজনটা করছি সেটা সীমিত আকারে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বড় আকারে জনসমাগম করা হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে প্রতিদিন বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সে জন্য যারা দাওয়াত পাবেন, তাদের প্রত্যেককে আমরা বলে দিচ্ছি যে কোভিড টেস্ট করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। সেটা ৪৮ ঘণ্টার একটা ভ্যালিডিটি থাকবে। অতিথিদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তাই কোথায়, কখন কীভাবে কোভিড টেস্ট করতে হবে সেটাও তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। কোভিড টেস্টের রিপোর্ট তারা সঙ্গে নিয়ে আসবেন যাতে করে সেখানে অন্যরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়। আমরা চাই যে এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুন্দর একটা অনুষ্ঠান করতে।’
কামাল আবদুল নাসের আরও বলেন, ‘চার দিন ফিজিক্যালি প্রোগ্রাম হচ্ছে। যেহেতু চার দিন ফিজিক্যালি প্রোগ্রাম হবে, সেই চার দিনই আমন্ত্রিত অতিথিরা থাকবেন। বাকি দিনগুলোতে আমরা প্রোগ্রামটা সরাসরি সম্প্রচার করে দেব। কিন্তু সেখানে কোনো ফিজিক্যাল কিছু থাকবে না। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সরাসরি উপস্থিত হতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা রয়েছে। তবে কারা কারা থাকবেন তা পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।’
অনুষ্ঠান সম্প্রচারের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘পুরো প্রোগ্রামটা আসলে সারা পৃথিবীতে সম্প্রচার করা হবে। সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেহেতু এটি একটি বড় আকারের প্রোগ্রাম এবং সবাই যেন দেখতে পারে, একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে সবাই যেন দেখতে পারে, সেভাবে আমাদের একটা প্রোডাকশন টিম কাজ করছে। কিন্তু আমরা যেহেতু এই কটা দিনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান আছেন, তাই বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে কোনো পক্ষের কোনো বাধা বা সমাবেশের কোনো তথ্য আছে কি না সে বিষয়ে গত বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো গোপন সংবাদ নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি হবে কি না আমরা ঠিক এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা মনে করছি, সবাই বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, সবাই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন এবং আমাদের জাতির পিতার উৎসবের এখানে কেউ ডিস্টার্ব করবে বলে আমরা মনে করছি না।’
তবে, গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবারের সফর হবে শুধুই উদযাপনের। এসময় দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে না।’
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে কোনো আলোচনা হবে কি না- তা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ওগুলো বাদ, আমরা যেটা চাই- সেটা হচ্ছে এই যে একটি আনন্দ উৎসব, আমাদের বড় উৎসবে সবাই আসছেন, এতে আমরা আনন্দিত। আর অন্যান্য জিনিস যেগুলো ছোটখাট। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে ধরনের বড় বড় সমস্যা ছিল সে সব আমরা আলোচনার মাধ্যমেই দূর করেছি। আর যদি কিছু থাকে, সেগুলো আস্তে আস্তে করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘মহামারির মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর হবে বাংলাদেশে। আর কোথাও যাননি এই কোভিডের সময়। তিনি শুধু ঢাকাই নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাবেন। সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ওড়াকান্দি যাবেন’।
২৬ মার্চ ঢাকা আসার পরদিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দির, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ এবং কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহীম খাঁন জুয়েল
উপদেষ্টা : সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (এমপি),
নির্বাহী সম্পাদক : শাহ্ ইমরান রিপন,
বার্তা সম্পাদক : খোরশেদ আলম শিকদার
যুগ্ম সম্পাদক : মোঃ জামাল হোসাইন,
চিফ রিপোর্টার : মোঃ জীবন।
১৭ নং উত্তর কুতুবখালী, খাঁন সুপার মার্কেট তৃতীয় তলা,
দুনিয়া, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
মোবাইল : ০১৯৮৬-৬৮৭৪৬৪, ০১৭১১-০৫২৭০৩
ফোন : +৮৮-০২-৭৫৫১১৫০
E-mail: banglavoicebd8@gmail.com
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত