
অপহরণকারী চক্রে জড়িয়ে পড়ছে নারীরাও। এসব অপহরণকারী চক্র সাধারণ মানুষকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করে। একই সাথে নারী সদস্যদের দিয়ে নগ্ন ছবি তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়। এ কারণে অপহূত ব্যক্তি ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতেও চান না। নারীদের ব্যবহার করে এমন সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে এই চক্র।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সাংবাদিকদের এমন তথ্য দেন। রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে পেশাদার অপহরণকারী চক্রের ৬ সদস্যকে আটকের বিষয়ে মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, এসব ছিনতাইকারী রাজধানীর ভেতরেই থাকে। এ কারণে এদের চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে প্রত্যেক বাড়ির ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিএমপির সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
তিনি বলেন, গত ২৯ নভেম্বর রাত সোয়া ৯টায় মো. আনোয়ারুল ইসলাম (ভিকটিম) উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্বপাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ ৪ থেকে ৫ জন অপহরণকারী চক্রের সদস্য মাইক্রোবাসে ভিকটিমের কাছে আসে। চক্রটি সুকৌশলে ভিকটিমকে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারীরা ভিকটিমের স্ত্রী ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে ফেলে চলে যায়। এ ঘটনায় উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, কিছুদিন আগে উত্তরায় একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে অপহরণ চক্রটির সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। এই চক্রটি রাজধানীতে গত কয়েকদিনে চারজনকে অপহরণ করেছে, তার মধ্যে আনোয়ারুল একজন। প্রাথমিকভাবে ভিকটিমরা কেউই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেনি। তারা যখন দেখল গোয়েন্দা পুলিশ অভিযোগ পাওয়া মাত্র একের পর এক অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করছে, তখন আস্থা পেয়ে অভিযোগ নিয়ে ছুটে আসে পুলিশের কাছে। ইতোমধ্যে চারজন ভিকটিমই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
ভিকটিমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ না দেয়ার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, অপহরণকারীরা অপহরণের পর এই চক্রের নারী সদস্যদের দিয়ে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি তুলে রাখত, যাতে ভিকটিম মুখ খুলতে না পারে। যদি এ বিষয়ে পুলিশ অথবা অন্য কারো কাছে অভিযোগ করে তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি প্রকাশের ভয় দেখাত। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে তারা চুপ থাকত। এ ছাড়া অস্ত্রের ভয় দেখিয়েও ভিকটিমদের জিম্মি করে রাখা হতো। ফলে তারা ভয়ে মুখ খুলত না।
এমন ঘটনার মুখোমুখি হলে ভয় পেয়ে বা অন্য কোনো কারণে চুপ না থেকে বিষয়টি প্রকাশ্যে অথবা গোপনে পুলিশকে অবহিত করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান পুলিশের এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব ও বিমান বন্দর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি অপহরণচক্রে নারীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। এর আগেও বেশ কয়েকটি ঘটনায় নারীদের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ওই সময় তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, অপহরণকারী নতুন কৌশল হিসেবে নারীদের দলে ভিড়িয়েছে। এর আগে অপহরণ করে মুক্তিপণ পাওয়ার পর ছেড়ে দিত। আর এখন অপহরণ করার পর মুক্তিপণ নিয়ে নারীদের সঙ্গে ওই অপহূত ব্যক্তির নগ্ন ছবি তুলে রাখে, যাতে সে পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে বলতে না পারে। গত ৬ মাসে এ রকম অন্তত ৩০টি ঘটনায় নারীদের সম্পৃক্তা পাওয়া গেছে বলেও জানান তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, এই অপরহরণকারী চক্র পুরো রাজধানীজুড়েই রয়েছে। বিশেষ করে টার্মিনাল এলাকাগুলোতে বেশি থাকে। একটি মাইক্রোবাসে ৩/৪ জন থাকে। সঙ্গে নারী থাকাতে অনেকেই বিশ্বাসও করে। পরবর্তী সময়ে তারা মাইক্রোবাসে ১/২ জন তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে।
১৫ দিনের মধ্যে ভাড়াটিয়া তথ্য : সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, চোর এরা রাজধানীরই বাসিন্দা। এদের বিষয়ে বাড়ির মালিকরা অনেক তথ্যই জানে না। পূর্বেও আমরা ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহ করেছি। এটিই হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই রাজধানীর সব থানাকে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাড়ির মালিকদের সহযোগিতার জন্যও বলা হয়েছে।
ভাড়াটিয়া তথ্য সম্পর্কে জানতে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এ নির্দেশনা পেয়েছি। নির্দেশনা মোতাবেক সব বিটের অফিসারদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এ কাজ শুরুও করেছি।
রামপুরা থানার ওসি শাহিন ফকির বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা আমাদের বিভিন্ন বিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের মাধ্যমে এ কাজ শুরু করেছি।
ভাটারা থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহের কাজ আমরা শুরু করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মাধ্যমে এ কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
Array