বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। একসময় অফিসপাড়া, ব্যাংকপাড়া বলতে শুধু মতিঝিল এবং তার আশপাশের এলাকাকেই বুঝতো। কিন্তু বর্তমানে গুলশান-১, গুলশান-২ এবং বনানী এলাকা ঢাকার নতুন বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আবাসিক ওসব এলাকায় এখন বিপুলসংখ্যক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। আর রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য ঘিরে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলো যানজট, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, শব্দদূষণ, ময়লা-আবর্জনাসহ নানা সমস্যা জর্জরিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রভাবশালীরা একের পর এক বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ভাড়া দিচ্ছেন। আবার কিছু ভবন বাণিজ্যিক হিসেবেই গড়ে উঠেছে। ওসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক ভবনে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গাড়ি যাতায়াত করে। ফলে বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। কারণ আবাসিক এলাকাগুলোতে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা নেই। ফলে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সব গাড়িই রাস্তায় পার্কিং করা হয়। একই সঙ্গে ইচ্ছামতো বাজানো হয় গাড়ির হর্ন। আর এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোর রূপ।
সূত্র জানায়, কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আবাসিক এলাকায় দিন দিন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। স্কুল-কলেজ, বিপণিবিতান, রেস্টুরেন্ট, বিউটি পারলার, কোচিং সেন্টার, বার, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে। আর যে যার ইচ্ছামতো বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ উদাসীন। মূলত নীতিনির্ধারক কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা-দুর্বলতায় বছরের পর বছর ধরে ওসব অনিয়ম হয়ে আসছে। গুলশান একসময় রাজধানী ঢাকার অন্যতম অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৬১ সালে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পিত একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে গুলশান অভিজাত আবাসিক এলাকার জৌলুস হারিয়েছে। সময়ের ব্যবধানে ওই অভিজাত ছায়া সুনিবিড় আবাসিক ও কূটনৈতিক এলাকাটি বাণিজ্যিক স্থাপনার আড়ালে তার উপশহরের মর্যাদাও হারিয়েছে। বর্তমানে গুলশান ও তার আশপাশে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ভবনের ছড়াছড়ি। তার কোনোটি আবাসিক প্লটকে রূপান্তর করে বাণিজ্যিক করা হয়েছে, আবার কোনো আবাসিক প্লটে অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ভবন। গার্মেন্ট, শিল্প-কলকারখানা, আবাসিক হোটেল, বিভিন্ন এজেন্সির অফিসসহ সারি সারি সুউচ্চ ভবনে শপিং মল, রেস্টুরেন্ট মিলিয়ে একসময়ের শান্ত-স্নিগ্ধ সবুজ অভিজাত আবাসিক এলাকা তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। একই অবস্থা বনানী আবাসিক এলাকার। বনানী বাজারের আশপাশের বিভিন্ন সড়কেই বিপুলসংখ্যক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর তার বেশির ভাগই আবাসিক প্লটে চলছে।
সূত্র আরো জানায়, ১৫ বছর আগে ধানমন্ডি এলাকায় চারতলার ওপরে কোনো বাড়ি ছিল না। এখন ইচ্ছামতো উচ্চতায় দালানকোঠা তৈরি চলছে এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। ধানমন্ডি থেকেই ওই বাণিজ্যিকীকরণের ভাইরাস নগরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায়ও তা ছড়িয়ে পড়ে। গুলশান-বনানী এলাকার নকশাতে বাণিজ্যিক প্রয়োজনের জন্য আলাদাভাবে নকশা করা আছে। কিন্তু পরিকল্পিত নকশায় গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকা গুলশান-বনানী অথচ আস্তে আস্তে ঘিঞ্জিতে পরিণত হচ্ছে। একে একে আবাসিক এলাকাগুলো তার চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। তাতে ওসব এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান জানান, আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিকে রূপান্তর করতে হলে কিছু পরিকল্পনা করতে হয়। একটি আবাসিক এলাকার জন্য যখন পরিকল্পনা করা হয় তখন আবাসিক এলাকা ও ট্রাফিকের চিন্তা করা হয়। আর ওই চিন্তা থেকেই এলাকা তৈরি করা হয়। কিন্তু আবাসিক এলাকা হওয়ার পর যখন বাণিজ্যিকে রূপান্তর হয় তখন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসে। বাণিজ্যিক স্থাপনায় মানুষের চলাচল বেড়ে যায়, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও সীমিত হয়ে পড়ে। ফলে একটি অঞ্চল তার বাসযোগ্যতা হারায়।
Array