মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম। ইউটিউবে হলুদ তরমুজ চাষ দেখে শখের বসে নিজেই শুরু করেন এই তরমুজ চাষ। মেহেরপুরে প্রথমবারের মত থাইল্যান্ডের তৃপ্তি জাতের এই হলুদ তরমুজ চাষ করে বেশ সাড়া ফেলেছে চাষি জহিরুল। ২৫ কাঠা জমির পুরোটা জুড়েই ঝুলে আছে নয়নাভিরাম কাচা-পাকা তরমুজ। খেতে সুস্বাদু তৃপ্তি জাতের এই তরমুজ চাষে লাভবান হবার স্বপ্ন দেখছেন সৌখিন চাষি জহুরুল। মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর মাঠে হলুদ রঙের এই তরমুজ দেখতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছে তার ক্ষেতে। এছাড়াও এই তরমুজ চাষেও পরামর্শ নিচ্ছেন এলাকার চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে, স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ আর অল্প সময়ে এ তরমুজ চাষে বেশ লাভবান হওয়া সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সবুজ কচি লতাপাতার মাঝে ঝুলছে হলুদ বর্ণের ফল। পাঁকলে ভিতরে টুকটুকে লাল। তৃপ্তি জাতের এই তরমুজ শোভা পাচ্ছে চাষি জহিরুলের খেক্ষে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা এ তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও বেশ সুস্বাদু। অন্যান্য তরমুজের থেকেও বেশ আলাদা। লতার বোটায় বোটায় ঝুলছে কচি ও পাঁকা তরমুজ। জেলায় এই প্রথম এ তরমুজের চাষ হচ্ছে।
চাষি জহিরুল ইসলাম জানান, অনলাইন থেকে উৎসাহিত হয়ে এ তরমুজ চাষের প্রতি আগ্রহী হই। ঠিকানা ও বীজ সংগ্রহ করি। পরে বিশেষ কায়দায় জমি প্রস্তুত করে বীজ রোপন করি । কচি ডগা থেকে লতা বেড়ে ওঠা পর্যন্ত কোন বালাই নাশক ব্যবহার করা হয় না। সেক্স ফেরোমিন পদ্ধতিতে বালাই দমন করা হয়। রোপন থেকে ফল পাঁকা পর্যন্ত সময় লাগে ৬০ দিন। মাচায় ঝুলে থাকার কারণে তরমুজের ওজন বাড়ার সাথে সাথে তরমুজ ছিঁড়ে পড়ে যাবে। এজন্য যখন তরমুজ ২শ গ্রাম ওজন হয় তখন প্রতিটি তরমুজ নেটের ব্যাগ দিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। বীজ সার মাঁচা আর সুতোর জাল বাবদ প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা । আর তাতে পাওয়া যায় অন্ততঃ দেড় লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, নিরাপদ ফল উৎপাদন এবং সুষম সার ব্যবস্থাপনায় তৃপ্তি (হাইব্রিড) জাতের তরমুজ মারাত্মক সুস্বাদু। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকার কারণে ফলন হয়েছে ভালো। অসময়ের এ তরমুজের ব্যাপক চাহিদা বাজারে। জমি থেকে প্রতিমণ তরমুজ ১৬’শ টাকা থেকে ১৮’শ টাকা দরে ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
চায়না জাতের এ তরমুজ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে যেমন লোকজন ভীড় জমাচ্ছে তেমনি ফল চাষিরাও পরামর্শ নিচ্ছেন এ তরমুজ চাষের। পরামর্শ নিতে আসা চাষি ইন্তাজুল জানান, হলুদ তরমুজ চাষের খবর শুনে তিনি পরামর্শ নিতে এসেছেন। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে এ তরমুজ চাষে বেশ লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি। একই কথা জানালেন চাষি কামরুল ইসলাম ও ইয়ারুল।
উপসহকারি কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। চাষি জহিরুল এ অঞ্চলে প্রথম এ তরমুজ আবাদ শুরু করেন। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অনেকেই আসছেন এ জাতের তরমুজ চাষের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে। লাভজনক এ তরমুজ চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এবং চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান, অসময়ে তরমুজের চাষ করে জাহিরুল ইসলাম যে সাফল্য পেয়েছে আমরা এতে খুশি। জহিরুলের দেখা দেখি আরও অনেক চাষিই এই তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মেহেরপুরের কৃষিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ হলো। তিনি আরও জানান, হাইব্রিড জাতের তরমুজ বীজ দেশের বাইরে থেকে আসায় বীজের দাম বেশি। বারি উদ্বাবিত দুইটি হাইব্রিড জাত লাল ও হলুদ এর বীজ রাখা যায়। এটা সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে।
Array