নিউজ ডেস্ক:গ্রামে ঋণপ্রবাহ ও আমানত বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই ওই ৬ মাসে গ্রামে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ আমানত প্রবাহ বেড়েছে এবং শহরে বেড়েছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ফলে শহরের তুলনায় গ্রামে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ আমানত বেশি বেড়েছে। অবশ্য সরকারই করোনার ক্ষতি মোকাবিলা এবং বিদ্যমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গ্রামে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে গ্রামে এখন ঋণপ্রবাহ বেশি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বাইরে যতো ব্যাংক আছে, ব্যাংকের দৃষ্টিতে সেগুলো গ্রামীণ ব্যাংক। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ে গ্রামে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ আমানত প্রবাহ বেড়েছিল। একই সময়ে শহরে বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ওই সময়েও শহরের চেয়ে গ্রামে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ আমানত বেশি বাড়ে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে গ্রামে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। একই সময়ে শহরে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ওই সময়ে শহরের চেয়ে গ্রামে ঋণপ্রবাহ বেশি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে গ্রামে ঋণ বেড়েছিল ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং শহরে ২ দশমিক ০৭ শতাংশ। ওই সময়ে গ্রামের চেয়ে শহরে ঋণপ্রবাহ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সূত্র জানায়, করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় গ্রামে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাড়নো যাচ্ছিল না। মূলত গ্রামে ঋণের চাহিদা কম। কিন্তু বর্তমানে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে কম সুদে ঋণ দিতে গঠন করা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল। তৈল বীজ উৎপাদনে গঠন করা হয়েছে আরো ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল। তাছাড়া চলতি অর্থবছরে ৩১ হাজার কোটি টাকার পল্লী ও কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আরো কিছু তহবিলের আওতায় গ্রামে ঋণপ্রবাহ বাড়ানো হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা বিভাগে মোট আমানত ও ঋণের সিংহভাই। তার পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। মোট আমানতের ৭৯ শতাংশই শহরের এবং গ্রামের আমানত ২১ শতাংশ। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬২, চট্টগ্রাম বিভাগে ২১, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক ২২, রাজশাহী বিভাগে ৪, বরিশাল বিভাগে ১ দশমিক ৮৭, সিলেট বিভাগে ৩ দশমিক ৭৬ এবং রংপুর বিভাগে ২ শতাংশ আমানত রয়েছে। সবচেয়ে কম আমানত ময়মনসিংহ বিভাগে মাত্র দেড় শতাংশ। আর মোট ঋণের ৮৯ শতাংশই শহর এলাকায় বিতরণ করা হয়। গ্রামে মাত্র ১১ শতাংশ। ঢাকা বিভাগেই ঋণের ৬৮ শতাংশ। চট্টগ্রামে সাড়ে ১৮, খুলনায় ৩ দশমিক ৮১, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৭১, সিলেটে ১ দশমিক ১৪, রংপুরে ২ দশমিক ৩৮ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঋণ বিতরণ করা হয় বরিশাল বিভাগে ১ দশমিক ১২ শতাংশ।
এদিকে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকের সেবা গ্রামেও বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন গ্রামে শাখার প্রায় অর্ধেক। গ্রামীণ শাখাগুলো থেকে আগে ঋণ বিতরণের ক্ষমতা কম থাকলেও এখন বেড়েছে। সারা দেশে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা রয়েছে ১০ হাজার ৭৯৩টি। তার মধ্যে শহরে শাখা ৫ হাজার ৫৫৪টি এবং গ্রামীণ শাখা ৫ হাজার ২৩৯টি। মোট শাখার সাড়ে ৫১ শতাংশ শহরে এবং গ্রামে সাড়ে ৪৮ শতাংশ।
অন্যদিকে এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামে ঋণপ্রবাহ বেশি বাড়া আশার কথা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে গ্রামকে অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা সম্ভব হবে। বর্তমানে শহর থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। যে কারণে শহরে ঋণ ও আমানত দুটোই বেশি। কিন্তু কৃষি বা শিল্প উৎপাদন সবই গ্রামকেন্দ্রিক। কেননা গ্রামেই শিল্পের বেশির ভাগ কারখানা। আর কৃষি উৎপাদন তো পুরোটাই গ্রামভিত্তিক। আগে গ্রামে আমানত বাড়লেও ঋণ বাড়েনি। ফলে গ্রামের টাকা শহরে চলে আসতো। এখন গ্রামে আমানত বাড়ার পাশাপাশি ঋণও বাড়তে শুরু করায় গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়বে। যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করতে সহায়ক হবে। তবে এই গতিতে ছেদ পড়লে তার প্রকৃত সুফল মিলবে না।