বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে শিগগিরই বাংলাদেশ ছয় কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এদিকে করোনা মহামারীর মধ্যেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২.৬ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই আর্থিক সংস্থাটি। সোমবার (১২ এপ্রিল) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মূল্যস্ফীতিও মাঝারি থাকতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে চলমান টিকা কার্যক্রম কতটা কার্যকর থাকে, চলাচলের বিধিনিষেধ কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কত দ্রুত উন্নতি হয়, তার ওপর।
করোনা নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা, বড় অংকের খেলাপি ঋণ এবং রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে: বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট – মুভিং ফরওয়ার্ড: কানেকটিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেংদেন কমপিটিটিভনেস’ শিরোনামের এ প্রতিবেদনটি গত সোমবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রম অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকেও ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভারত থেকে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে। আরও আড়াই কোটি ডোজ কেনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস বা সংক্ষেপে কোভ্যাক্স কোভিড টিকার সমবণ্টনের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যার পেছনে আছে ইউনিসেফ, গাভি, ডব্লিউএইচও। এ উদ্যোগ কোভ্যাক্সের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও রয়েছে। বিশ্বের সকল দেশকে তাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ টিকা বিনামূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে কোভ্যাক্স। সে হিসেবে বাংলাদেশ ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে। এ টিকা এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় চাপের কারণে কোভ্যাক্সের টিকা মে মাসের মধ্যে পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা মহামারির কারণে প্রবৃদ্ধির গতি কমে গিয়েছিল। একই সঙ্গে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতাও বিপরীত হয়েছে। তবে অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম দিকে কল-কারখানা আবার চালু হয়েছে, রপ্তানিও আবার শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে শ্রমবাজারে পুনরুদ্ধারের দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। আস্তে আস্তে জীবিকা নির্বাহের সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র ও বস্তি অঞ্চলে খাদ্য সুরক্ষা উন্নত হচ্ছে। তবে চলমান করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে উচ্চঝুঁকি এখনও রয়েছে।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে বৈশ্বিকভাবে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বাংলাদেশ কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন খুব শিগগিরই পাবে। বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাকসিন কিনতে অর্থের কোনো সমস্যা নেই। বিশ্বব্যাংকও ৫০ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে, যা দিয়ে দেশের তিন ভাগ মানুষের জন্য ভ্যাকসিন কেনা যাবে। তিনি আরো বলেন, করোনায় অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা ইতিবাচক। তবে পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে কত দ্রুত গণহারে টিকার ব্যবস্থা করা যায়, তার ওপর। বিশ্বব্যাংক স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারে সমর্থন যোগাবে।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি মাঝারি থাকতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে চলমান টিকা কার্যক্রম কতটা কার্যকর থাকে, চলাচলের বিধিনিষেধ কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কত দ্রুত উন্নতি হয়, তার ওপর। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা, বড় অংকের খেলাপি ঋণ এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে দুর্বল অবস্থা অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, সব কিছু মিলিয়ে ঝুঁকি এখনও উচ্চ থাকছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় তৈরি পেশাক পণ্য চাহিদা কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সীমিত হতে পারে। চলমান মহামারি আর্থিক খাতের ঝুঁকিকে তীব্রতর করেছে। এক্ষেত্রে খেলপি ঋণ, ব্যাংক ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় (লজিস্টিক) উন্নতির মাধ্যমে পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ানো এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশ ১৪১ দেশের মধ্যে এখনও ১০৫ তম। লজিস্টিক খাতে বেশি ব্যয় করেও অপর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া দেশেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। লজিস্টিক দক্ষতায়ও ১৬০ দেশের মধ্যে ১০০তম। সরবরাহ বা লজিস্টিক ব্যয় ২৫ শতাংশ কমলে দেশের ২০ শতাংশ রপ্তানি আয় বাড়বে। লজিস্টিক ব্যবস্থপনাকে আধুনিকীকরণে মান, সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়াতে নীতি ও কৌশল প্রনয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন অপরিহার্য বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক।
Array