• ঢাকা, বাংলাদেশ

খেলাপি ঋণে নতুন রেকর্ড 

 admin 
28th Nov 2019 11:51 am  |  অনলাইন সংস্করণ

ঋণখেলাপিদের হরেক রকম সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও কমানো যায়নি খেলাপি ঋণের পরিমাণ। মাত্র তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। বর্তমানে মোট খেলাপি ঋণ এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা এ যাবৎকালের রেকর্ড। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পরে বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। নানা কৌশল অবলম্বন করেও খেলাপি ঋণের পাগলা ঘোড়া যেন থামছেই না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২ শতাংশ সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, তা এখনো কার্যকর হয়নি। এর প্রভাব আগামী ডিসেম্বরে পাওয়া যাবে। সে সময় খেলাপি অনেক কমে আসবে। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, সাধারণত বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ মার্চ ও জুনে খেলাপি ঋণ কিছুটা বাড়ে। এবার বাড়ল তৃতীয় প্রান্তিকেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর আগের প্রান্তিক অর্থাৎ জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক গ্রাহক গত বছরের ডিসেম্বরে ঋণ পুনঃতফসিল করেছিলেন। কিন্তু পরে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিতে এসে ঋণ অনেকাংশে বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, জুন প্রান্তিকের পর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো অনেক খেলাপি ঋণ কৌশলে লুকিয়ে রাখে। কারণ ডিসেম্বর মাস ব্যাংকের বার্ষিক হিসাবের সমাপনী প্রান্তিক হওয়ায় খেলাপি ঋণ কম হলে ব্যাংকের লাভ। লুকিয়ে রাখা এসব খেলাপি ঋণ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে হিসাবে ঢুকেছে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণে অনেক বছর ধরেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ৪০ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। গত জুন শেষে বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এর আগের প্রান্তিকে এসব ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গত জুন শেষে এসব ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি ৬২ টাকা। আর দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের (কৃষি ও রাকাব) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৭০০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, গত জুন শেষে যা ছিল ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

ব্যাংক খাতে উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা মহলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং বিষয়ে নতুন নীতিমালা জারি করে। এতে খেলাপি হওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৬ মে তারিখে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে। এর মাধ্যমে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে (এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ) পরিশোধের সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা যায়, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমার মনে হচ্ছে, সুবিধা যতই দিতে থাকুক, ঋণখেলাপি কমবে না। যারা ঋণখেলাপি, তাদের বেশিরভাগই অভ্যাসগত খেলাপি, ইচ্ছা করেই খেলাপি থাকতে ভালোবাসে। আবার কয়েকজন আছে, বাধ্য হয়ে খেলাপি হয়েছে। তবে ইচ্ছাকৃত খেলাপির অংশটাই বেশি। আরেকটা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো যে নতুন ঋণ দিচ্ছে এগুলোর বিষয়ে তারা খুব বেশি কেয়ারফুল না।
ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, যেহেতু খেলাপিদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে, এখন খেলাপি ঋণ বাড়তেই থাকবে। খেলাপিকে শাস্তি দিয়েই কমাতে হয়, উৎসাহ দিয়ে নয়।

ব্যাংকগুলোর কাছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠি: ঋণখেলাপির সংখ্যা ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে গত ২৩ জুন রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। জবাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে- ডেফার্ট এলসির (পণ্য আমদানিতে বাকিতে ঋণপত্র) টাকা ব্যবসায়ীরা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। আর খেলাপির সংখ্যা বেড়েছে আদালতে মামলা নিষ্পত্তির কারণে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর জবাবকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যথাযথ মনে করছে না।
আইএমএফের উদ্যোগ : ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কেন বাড়ছে, সংজ্ঞা পরিবর্তনের কারণে কোনো প্রভাব পড়ছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। সফররত আইএমএফের চার সদস্যের এক প্রতিনিধিদল গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক দুটি বৈঠকে এ বিষয়গুলোর অবতারণা করে বলে জানা গেছে। বৈঠকগুলোতে খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যায় তারও উপায় খুঁজতে বলা হয়েছে। তবে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নানা কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ের গতি শ্লথ। এর বাইরে ডিসেম্বর শেষে যেসব ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল তা পরবর্তী তিন মাসে আদায় না হওয়ায় আবার তা খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। আর যারা ব্যবসায় প্রকৃতপক্ষে লোকসান গুনে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১