জমজম কূপের পানি তার আসল রূপেই হজ পালনকারীদের প্রদান করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ করা হয় না।
জমজম কূপের পানিতে রোগমুক্তির পাশাপাশি প্রাচীন ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান সমানভাবে একই ধরনের স্বীকৃতি
দিয়ে আসছে
জমজমের পানি দ্বারা রোগ নিরাময়ের ঘটনা
জমজমের পানি অলৌকিক ঝরনা এবং রোগমুক্তির উপায়। তা দ্বারা আরোগ্য লাভের ঘটনা রাসুল (সা.) এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত অনবরত ঘটে আসছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম জাওজি (রহ.) জমজমের পানিকে সব পানির শ্রেষ্ঠ পানি এবং সব পানির চেয়ে অধিক সম্মানের যোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি তার কিতাব ‘তিব্বে নববি’-এর মধ্যে জমজম সম্পর্কে নিজ যুগের বহু অভিজ্ঞতার ঘটনা তুলে ধরেছেন যে, জমজম দ্বারা বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ কথাও উল্লেখ করেছেন যে, তার যুগের বহু লোক ১৫ দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের খাদ্য গ্রহণ ছাড়া শুধু জমজমের পানি পান করে জীবনধারণ করেছেন। বর্তমান যুগে মুসলিম চিকিৎসকরাও এর ওপর চিকিৎসালব্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং সীমাহীন উপকার পেয়েছেন। পাকিস্তানি ‘ডাক্তার গোলাম রাসুল কোরাইশি’, যিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রফেসর, স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে এটা প্রমাণ করেছেন যে, জমজমের পানিতে ইস্পাত, ম্যাগনেশিয়াম, ঘনত্ব, গন্ধক এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বিদ্যমান থাকার কারণে এ পানি রক্তস্বল্পতা দূর করে, মস্তিষ্ক প্রখর করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ জাতীয় কয়েকটি রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। যার মধ্যে জমজমের পানি দ্বারা কঠিন ও দুরারোগ্য কিছু রোগ থেকে মুক্তির সংবাদ পাওয়া গেছে। যেমন ক্যান্সার, কিডনির পাথর, লিভার ব্যাধি, রক্তজনিত রোগগুলো, চক্ষু ব্যাধি এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আলোচনা সংক্ষিপ্ত করার তাগিদে তার বিশদ বিবরণ এখানে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আবে জমজম এক জীবন্ত মোজেজা
বাস্তবে আবে জমজম ইসলামের এক জীবন্ত ও সর্বজনীন এবং অলৌকিক পানি। আবে জমজমের সূচনা যেভাবে এক অলৌকিকতার মাধ্যমে হয়েছিল, তেমনই তার অস্তিত্বও একটি চলমান মোজেজা হয়ে আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আবে জমজম সম্পর্কে রাসুল (সা.) এর বাণীতে যত ফজিলত ও উপকারিতার আলোচনা হয়েছে, বিশেষভাবে তা এ যুগের মানুষের জন্য এসেছে। যার একেকটি উপকারিতা আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। তাই জমজমের পানির ওপর যে দৃষ্টিকোণ থেকে এবং যত গবেষণা করা হোক তার নিত্যনতুন রহস্য উন্মোচিত হতে থাকবে এবং তার নতুন নতুন দিক সামনে আসতে থাকবে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে জমজম পানি সম্পর্কে আরও গবেষণা সামনে আসবে এবং তার আরও রহস্য দুনিয়াবাসীর সামনে উন্মোচিত হবে। এ ব্যাপারে মুসলিম ইউনিভার্সিটিগুলোকে ফলো করা প্রয়োজন। যাই হোক, আবে জমজম এক কূলহীন মোজেজা, যা কিছুটা ওপরে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নে প্রদত্ত হলো।
জমজম কূপের প্রকাশ অলৌকিকভাবে হয়েছে। যার পেছনে হজরত হাজেরা (আ.) ও ইসমাইল (আ.) এর জীবনকথা ও মক্কা নগরীর গোড়াপত্তনের ইতিহাস রয়েছে।
জমজম কূপ দীর্ঘদিন এবং অধিক ব্যবহৃত হওয়ার পরও আনুমানিক চার হাজার বছরের ইতিহাসে কখনও তার পানি হ্রাস পায়নি।
ওই পানিতে বিদ্যমান লোনার পরিমাণ সবসময় একই থাকে।
তার স্বাদ ও গন্ধে আজ পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
জমজম কূপের পানিই পৃথিবীর একমাত্র পানি, যা সব ধরনের উদ্ভিত বা প্রাণীর জন্ম ও বসবাস থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন।
জমজম কূপের পানি তার আসল রূপেই হজ পালনকারীদের প্রদান করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ করা হয় না।
জমজম কূপের পানিতে রোগমুক্তির পাশাপাশি প্রাচীন ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান সমানভাবে একই ধরনের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
রাসুল (সা.) এর পবিত্র ঘোষণাÑ ‘জমজম কূপের পানি ভূপৃষ্ঠের সব পানির মধ্যে শ্রেষ্ঠ পানি।’ এ বিষয়টির সত্যায়ন (গধংধৎঁ ঊসড়ঃড়) ডা. মাসারোর গবেষণায় একেবারে দীপ্তমান হয়ে উঠেছে। যিনি পৃথিবীর বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে স্বীকার করেছেন যে, জমজমের পানি পৃথিবীর সব পানি থেকে স্বচ্ছ এবং ব্যতিক্রম পানি।
ডা. কানুট ফাইফের গবেষণা এ কথা বলেÑ জমজমের পানি শুধু সামষ্টিকভাবে পৃথিবীর দুর্লভ পানি নয়; বরং তার নিজ কার্যকারিতায়ও অন্যান্য পানির চেয়ে ব্যতিক্রম। কেননা জমজমের পানি দ্বারা দেহের বিভিন্ন শূন্যতা পূরণ ও শক্তি সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণে অভাবনীয় কাজ করে থাকে। জমজম পানির রাসায়নিক বিভাজন দ্বারা এ তথ্য মিলেছে যে, তার মধ্যে পুষ্টিগুণ যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে। যেমনটি বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে। তবে তা এত বেশি পরিমাণও নয়, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর।