নির্বাচন কমিশনে সংলাপের বক্তব্য
৭ নভেম্বর ২০১৮
এক. মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ আপনারা আমার
সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আস্সালামু আলাইকুম।
দেশ ও জাতির সামনে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় উপনীত। আগামী ৫টি বছর দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন কতটুকু ঘটবে, তার সোপান রচিত হবে সামনের মাত্র কয়েকটি দিনের মধ্যে। আর এই সময়ের সকল দায়-দায়িত্ব আপনাদের উপর ন্যস্ত। গোটা দেশ এখন তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আপনাদের সফলতার উপর নির্ভর করছে আগামী দিনের দেশ ও জাতির সফলতা। সুতরাং এখন আপনাদের সময় অনেক মূল্যবান। তাঁর মধ্যে যে আমাদের সময় দিয়েছেন তার জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ জানায়। আজ আপনাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হবার জন্যে আমার সাথে এখানে এসেছেন- জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আমার নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। আমাদের সকলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আপনাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।
দুই. আপনারা নিশ্চয় অবলোকন করছেন যে, দেশের রাজনীতিতে একটা গুনগত পরিবর্তন এসেছে এবং সার্বিকভাবে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিরাট দূরত্ব ছিলো তা কমে এসেছে। সরকারের সাথে দেশের সকল রাজনৈতিক দল বা জোটের সংলাপ হয়েছে। এর ফলে যে মুখ দেখা দেখিও বন্ধ ছিলো, তার অবসান হয়েছে। পরস্পরের সাথে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমাদের সাথেও সরকার পক্ষের সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে হয়তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমাপ্ত হয়ে যাওয়া ধারাবাহিক সংলাপের ফলাফল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করবেন। আমরা আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটা সুন্দর এবং সর্ব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য উপসংহার শুনতে পাবো। সরকারের এই মহতি উদ্যোগের সুফল নিশ্চয় নির্বাচন কমিশন উপভোগ করতে পারবে। আমরা মনে করি, সরকার তাদের এই মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে রাজনীতির ময়দানে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেনÑ তার ফলে আপনাদের আগামী দিনের চলার পথ অনেক মসৃণ হয়েছে।
তিন. এবার যে উদ্দেশ্য নিয়ে আজ আমরা আপনাদের সাথে যে কথা বলতে এসেছিÑ সে প্রসঙ্গে আসতে চাই। আমরা যতটুকু ধারণা পাচ্ছি- তাতে মনে করছি যে, আগামী মাসের অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে আপনারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তাতে দেখা যাচ্ছে- নির্বাচনের মধ্যে আর ৬ সপ্তাহের মতো সময় আছে। এটা খুবই অল্প সময়। এর মধ্যে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের পার্লামেন্টারী বোর্ড গঠন এবং বোর্ডের মিটিং সহ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। দলীয় মনোনয়নের আবেদন ফরম বিতরণ, প্রার্থীদের কাছ থেকে আবার তা গ্রহণ করা, তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রার্থী মনোনয়নের সুপারিশ গ্রহণ করা, প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করা ইত্যাদিসহ সব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখনকার একটি ঘন্টার মূল্যÑ একটি সপ্তাহের সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করছিলাম ৪ নভেম্বর তারিখের মধ্যেই আপনারা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবেন। যা হোক, অনিবার্য কারণে হয়তো তা পারেননি। আগামীকাল ৮ নভেম্বর তফশিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত আছে।
চার. আমরা ইতোমধ্যে এটাও অবগত হয়েছি যে, একটি জোটের পক্ষ থেকে তফশিল ঘোষণার তারিখ পেছানোর দাবী জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন হিসাবে সকল পক্ষের কথা আপনাদের শুনতে হবে, দাবীর কথা শুনতে হবেÑ এটাই স্বাভাবিক। সকলেরই কথা বলার অধিকার আছেÑ দাবী জানানোর অধিকার আছে। সকলের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আপনাদের। আমরা মনে করি, আমাদের সামনে যেটুকু সময় আছে তার মধ্যে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার তারিখ পেছানোর কোনো অবকাশ নেই। নির্বাচনের মধ্যে এমনিভাবেই বৃহৎ পরিসরে আপনাদের সাথে মিলিত হবার সময় ও সুযোগ হয়তো আর পাওয়া যাবেনা। তাই এই মুহুর্তে আপনাদের কাছে আমাদের জোটের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব আমরা জানিয়ে যেতে চাই। যেমন ঃ
১. নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার তারিখ ৮ নভেম্বর তারিখেই করা হোক। আমরা যতটুকু জানিÑ তাতে আজকের পরে এই পর্যায় আর কোনো সংলাপ হবেনা। সুতরাং সংলাপের অজুহাত দিয়ে তফশিলের তারিখ পেছানোর দাবীর পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারেনা।
২. নির্বাচনের মনোনয়নের আবেদনপত্র পূর্বের তূলনায় সহজ করার প্রস্তাব করছি।
৩. নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. নির্বাচনের সময় যেনো কোনোভাবে অস্ত্রের ব্যবহার না হতে পারে তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫. নির্বাচনী প্রচারকালে সংঘাত বা সহিংসতা এড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মোটরসাইকেল বা গাড়ী বহরের ব্যবহার সীমিত রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। পোস্টার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন থেকে একক পোস্টার দেওয়ার বিষয়টিও আপনারা বিবেচনা করতে পারেন।
৬. নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখতে হবে। তবে তাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না।
৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনমনে এখনো একটা দ্বীধা-সন্দেহ রয়েছে। এটা আধুনিক ভোটিং পদ্ধতি হলেও সাধারণ ভোটাররা ইভিএম ব্যবহারে এখনো অভ্যস্ত নয়। এটা ব্যবহারে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টি করতে হবে।
৮. সর্বপরি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে এবং আপনাদের কাছ থেকে সেই নিশ্চয়তাও আমরা নিয়ে যেতে চাই।
পাঁচ. এই বৈঠকে আমাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাদের প্রতি আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি
Array