আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেও জবাব পাননি জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন সংবাদপত্রের সম্পাদকরা। ফ্রন্ট নেতারা কৌশলী জবাব দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটায় গুলশানের একটি হোটেলে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা সম্পাদকদের সঙ্গে এক টেবিলে বসেন সম্পাদকরা। নানা প্রশ্ন শোনেন। তবে সেখানে থাকতে দেয়া হয়নি সাংবাদিকদের।
মতবিনিময় শেষে কথা বলেন দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি জানান, বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে হবেন, সেই প্রশ্ন রাখেন বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক তৌফিক ইমরাজ খালিদী। তবে সরাসরি জবাব না দিয়ে ফ্রন্ট নেতারা বলেন, ‘এটা নির্ধারণ করবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।’
তবে জোটের বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
তৌফিক ইমরোজ খালিদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, আমি এ প্রশ্ন করলেও জবাব আমি পাইনি।’
সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধান দলগুলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের ক্ষেত্রে এটি বোঝার উপায় নেই।
ফ্রন্টে সবচেয়ে বড় দল বিএনপি। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তবে ভোটে তার দল গণফোরামের প্রভাব নেই বললেই চলে।
বিএনপির চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। আর নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা না থাকলে তাদের কারও পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়াও সম্ভব নয়।
ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কী, সেই প্রশ্ন বারবার তুলছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ফ্রন্ট নেতাদের মুখে কুলুপ।
সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে কামাল হোসেন বলেন, তাদের চেষ্টা থাকবে ভোট যেন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। জনগণ যেন নির্ভয়ে ভোট স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এটা আমরা মূল্যবান মনে করি এবং আমাদের সেই চেষ্টা থাকবে।
মত বিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদও অংশ নেন।
সম্পাদকদের কাছে কি ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেন, এ প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব রকমের সহযোগিতা তাদের কাছে চেয়েছি।’
‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পাদকদের পরামর্শ চেয়েছি। তারা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছি। তারা যৌক্তিক যে কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।’
ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বিজ্ঞ সম্পাদকরা যেসব মতামত দিয়েছেন, তা চলার পথে আমাদের কাজে লাগবে।’
‘সম্পাদকরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আমরা তাদের থেকে জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করি। তারাও আমাদের অনেক বিষয়ের সঙ্গে যেমন একমত হয়েছেন, বেশ কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে মতামত দিয়েছেন।’
সম্পাদকদের মধ্যে প্রথম আলোর মতিউর রহমান, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, নিউএজের সম্পাদক নুরুল কবীর, হলিডের সৈয়দ কামালউদ্দিন, বাংলাদেশ টুডের রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, দিনকালের রেজোয়ান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন এ মতবিনিময়ে।
এ ছাড়া যুগান্তরের মাসুদ করীম, সমকালের লোটন একরাম, ডেইলি স্টারের প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন লিটন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আবু তাহের, বাংলাদেশের খবরের সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, ইনকিলাবের মুন্সি আবদুল মান্নান, নিউজ টুডের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন।
Array