নিউজ ডেস্ক:আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সংক্রান্ত সেবার ফি বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৬ সংক্রান্ত সেবার ফি বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এবং ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। ফলে আমদানি রপ্তানি সংক্রান্ত সেবা পেতে আগের চেয়ে খরচ বাড়বে। আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) এবং রপ্তানি সনদের ফি বাড়ার পাশাপাশি নতুন করে আমদানির পরিমাণের সীমা নির্ধারণ করে তাতে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি আরোপ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এতোদিন সংস্থাটি মাত্র ৬টি সেবার বিপরীতে ফি নিতো। ওই সেবাগুলো হলো- বাণিজ্যিক ও শিল্প আমদানি নিবন্ধন সনদ (আইআরসি) নিবন্ধন ও নবায়ন, রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ইআরসি) নিবন্ধন ও নবায়ন এবং ফরমালিন উৎপাদন, আমদানি, মজুত ও বিক্রয় লাইসেন্স ইস্যু। কিন্তু এখন ৪৬টি সেবায় সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নতুন করে ফি আরোপ করা হয়েছে। আর ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র আমদানির জন্য ২৫ হাজার টাকা ফি ধার্য করা হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর তাদের সব সেবা অনলাইনে দিচ্ছে এবং সেবা ফিও অনলাইনে নিচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমদানি সীমার আইআরসি নিবন্ধন ফি ৬ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত সীমার নিবন্ধন ফি ১০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আর ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকার আমদানি সীমার নিবন্ধন ফি ৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্তও নতুন করে আমদানি সীমা করা হয়েছে। ওই ধাপে নিবন্ধন ফি ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার আমদানি সীমার নিবন্ধন ফি ৭০ হাজার টাকা। সর্বশেষ ধাপ ৫০ কোটি বা তার বেশি টাকার সীমায় নিবন্ধন ফি ৮০ হাজার টাকা। তাছাড়া রপ্তানি নিবন্ধন সনদের নিবন্ধন ফি ৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা, ফরমালিন উৎপাদনের লাইসেন্স ফি ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। আমদানি ফি ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছে। আর মজুত ও বিক্রির লাইসেন্স ফি ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে যেসব খাতে নতুন করে ফি আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ও মালিকানা পরিবর্তন, ব্যাংক পরিবর্তন, আমদানি সীমা পরিবর্তন ও নিবন্ধনের স্বত্ব পরিবর্তনে ২ হাজার টাকা করে ফি দিতে হবে। আরো কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে ফি আরোপ করা হয়েছে। এলসি খোলা ও জাহাজীকরণের সময় বাড়ানো, ক্লিয়ারেন্স পারমিট, আইআরসি থেকে অব্যাহতি, রপ্তানি পারমিট সংশোধন, রপ্তানি পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধির মতো সেবায়ও ফি দিতে হবে। তাছাড়া হাসপাতাল, এনজিও, বিশ্ববিদ্যালয় পণ্যসামগ্রী, অনুদান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাস, মূলধনী যন্ত্রপাতি ছাড়করণের আমদানির পারমিট নিতে ফি দিতে হবে।
এদিকে সরকারের এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ফি আরোপ ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্যবসার বাড়িয়ে দেবে ব্যয়। সরকারের মোট রাজস্ব সংগ্রহের তুলনায় এ খাত থেকে যে রাজস্ব আসে বা আসবে তা খুবই নগণ্য। আর সামান্য রাজস্বের জন্য এ ধরনের ফি আরোপ করা উচিত নয়। বরং এ ধরনের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর ৫২ ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। তবে এতোদিন ৬ ধরনের সেবায় ফি নেয়া হতো। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় কর-বহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন করে ফি নির্ধারণ করেছে। তবে এ সিদ্ধান্ত ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।