
নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কোনো প্রকল্পই। প্রায় সব প্রকল্পেই সময় ও ব্যয় বাড়াছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় ও সময় বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে এবং এটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠার মধ্যে ঘটেছে ব্যতিক্রম ঘটনা। বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রকল্পে সময় বা ব্যয় কোনোটাই বড়েনি। উল্টো সাশ্রয় হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ- প্রকল্পে এমন ঘটনাকে বিরল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে, প্রকল্প পরিচালক নাজমুল হক বলেন, এই প্রকল্প থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, কারণ দেশীয় শিল্পের প্রসার হয়েছে। ফলে সিটি ভ্যাটে টাকা খরচ হয়নি। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের গুণগত মান ঠিক আছে কি-না জানতে চাইলে বলেন, সব গুণগত মান ঠিক রেখেই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোনো খাত কমানো হয়নি, প্রকল্পের পরিধি ঠিক রেখেই কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় কমছে। বিদ্যুৎ খাতে সামপ্রতিক সময়ে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কারণে অনেক দেশীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রকল্পের অধিকাংশ দরপত্রে দেশীয় প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যাদেশ পাওয়ায় সিডি-ভ্যাট খাতে প্রায় ৪৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়া বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে পণ্য ক্রয় করার কারণে ব্যয় কমেছে। কমমূল্যে পণ্য ক্রয় করা হলেও মালামালের গুণগতমান নিশ্চিত করে সরবরাহকারীর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া সংশোধিত প্রকল্পের প্রস্তাবে মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি এবং প্রকল্প সাহায্য খাতে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এক প্রকল্পে হাজার কোটি টাকা কমে যাওয়া সুখবর ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, যদি সঞ্চালন লাইনের মান ধরে রেখে কাজ করা হয় তাহলে এটা অনেক বড় সুখবর। সাধারণ প্রকল্পে দুটি বিষয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ও কমানো হয়। ডিপিপি তৈরি করার সময় সরঞ্জামাদির দাম বেশি ধরা অথবা দুর্নীতির কারণে ব্যয় বাড়ে। এর কিছুই যদি এখানে না হয়ে থাকে, তাহলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারীরা নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছিল। সেসময় প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৪০৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৩৫৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিপি) ঋণ ২ হাজার ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা-যা মূল প্রকল্প থেকে ৯৫৪ কোটি ১০ লাখ ৪ হাজার টাকা বা ২৮ শতাংশ কম।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ৪৪টি ভৌগোলিক এলাকায় মোট ২৭ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আপগ্রেডেশন ২০ হাজার ৫৩৫ কি. মি. এবং নতুন লাইন ৬ হাজার ৪৬৫ কি. মি.। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৩৩ কেভি লাইন ১১৫ কি. মি. হ্রাস করে ৭৯০ কি.মি করা হয়েছে। অপরদিকে ১১ কেভি বা নিম্নতর ক্ষমতার বিতরণ লাইন ৮০ কিলোমিটার বাড়িয়ে ১৯ হাজার ৭১০ কি. মি. করা হয়েছে এবং নতুন লাইন ৩৫ কি. মি বৃদ্ধি করে ৬ হাজার ৫০০ কি. মি. করা হয়েছে।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিসওয়ারি) বিতরণ লাইনের পরিমাণ পুনঃবিভাজন করা হয়েছে। পবিস ওয়ারী প্রকৃত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে সংস্থানকৃত মোট লাইনের পরিমাণ ২৭ হাজার কি. মি. অপরিবর্তিত রেখে ৩৩ কেভি, ১১ কেভি ও নিম্নতর ভোল্টেজের পবিসওয়ারি লাইনের পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে।
Array