বহুল আলোচিত রাজনীতিবিদ নোয়াখালীর বসুরহাটের পৌরসভা মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবার ফেসবুক লাইভে এসে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কাদের মির্জা বসুরহাটে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আপন ছোট ভাই। এ কারণে পৌর নির্বাচনের সময় তার করা একটি মন্তব্য বাংলাদেশে ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি করে।
কাদের মির্জা বুধবার পৌনে ১২টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর নতুন করে আবার আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রশ্নবিদ্ধ আর হতে চাই না। আমি আওয়ামী লীগে আজ থেকে আর নেই। কোনও শক্তি আর আমাকে আওয়ামী লীগের মির্জা আর বানাতে পারবে না।’
ফেসবুক লাইভে তিনি বলছেন, ‘আমি সব অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলে এখন সবার কাছে খারাপ হয়ে গেছি। যে দলে সম্মান নাই সেখানে আমি থাকবো না। আমি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সদস্য হয়েছি সেখানে থেকেই কাজ করবো।
আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নেই তিনি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে বুধবার ফেসবুকে দেয়া ঘোষণায় তিনি লিখেছেন, আমি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম:
১. ভবিষ্যতে কোনও রকম কোনও জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না
২. ভবিষ্যতে আমি কোনও রকম কোনও দলীয় পদ-পদবির দায়িত্ব নেব না
কেন তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন, এই বিষয়ে তিনি বলছেন, প্রশাসনের জুলুম, সরকারি জুলুম আমার বিরুদ্ধে চলছে, এগুলোর কেউ বিচার করছে না। আমার বিরুদ্ধে, আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হচ্ছে। কোন বিচার পাই না। আমাদের মামলা থানা নেয় না, তাদের মামলা নিয়ে আমাদের লোকজনকে হয়রানি করতেছে।’
৯ মার্চ বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত আর বহু আহত হওয়ার পর ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেই ঘটনায় কয়েকটি মামলায় অন্তত ২৮ জনকে আটক করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার পরেও কেন তার এসব অভিযোগ, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগে নেই। আমি তো বিরোধী দলের থেকেও খারাপ। আমি মওদুদ সাহেবের প্রোগ্রাম কেন করলাম? এখন আমার বিরুদ্ধে সবাই লাগছে।
”আমি ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে কথা বলতেছি, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেছি, তাই সবাই আমার বিরুদ্ধে লাগছে। ” তিনি বলেন।
গত জানুয়ারি মাসে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের আগে কয়েকটি বক্তব্যে আবদুল কাদের মির্জা বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন-চারটা আসন বাদে আমাদের এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
মেয়র প্রার্থী হিসাবে ইশতেহার ঘোষণার সময় দেয়া বক্তব্যে আবদুল কাদের মীর্জা বলেছিলেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা, তমুক নেতার নেতৃত্বে তারা বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবে না। এটাই হলো সত্য কথা।”
তার এই বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
তখন বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ”আমি নোয়াখালীর প্রসঙ্গে এই কথা বলেছি। আমি বলছি, সত্যিকার গণতান্ত্রিকভাবে যদি ভোট হয়, সেক্ষেত্রে নোয়াখালীতে দুই-চারজন এমপি ছাড়া বাকিরা পালানোর পথ পাবে না। দুই-একজন এমপির কারণে এখানে জনপ্রিয়তা নষ্ট হচ্ছে।”
”আমার বক্তব্য হচ্ছে যে, যে গণতন্ত্র থেকে আজ মানুষ বঞ্চিত, যে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত, এটা পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি মনে-প্রাণে, জননেত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন”।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনাত হুদা গণমাধ্যমে বলেছেন, ”এটা আসলে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের ব্যাপারটি বাইরে বেরিয়ে এসেছে। সরকারের উচিত এটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা। এখানে যদি কোন স্থানীয় এবং জাতীয় ইস্যু জড়িত থাকে, পেছন থেকে যদি অন্য কোন অদৃশ্য শক্তির ইন্ধন থাকে, সেটাও দলটির অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।”
আবদুল কাদের মির্জার এই পদত্যাগের ঘোষণার ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম বলছেন, ”আবদুল কাদের মির্জা রিজাইন করলেন কি না করলেন, তাতে আমাদের তো কিছু আসে যায় না। আমরা তার ব্যাপারে কোন খবরও রাখি না, তার ব্যাপারে আমরা কিছু জানিও না। হে তো নিজে নিজেই রাজা, নিজে নিজেই সব কিছু। হে তো কাউকে মানে না। আমাদের কাছে কোন খবর নেই।”
Array