একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘রাজ চালাকি’র নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বলতেন, তোমরা রাজ চালাকি থেকে বিরত থাকো। রাজ চালাকির কারণেই আমরা রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গণফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি সবাইকে ‘রাজ চালাকি’র রাজনীতি থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আরও অংশ নেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, মফিজুল ইসলাম কামাল, অধ্যাপক আবু সাইয়ীদ, আমসা আমীন, মোকাব্বির খান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, কোনো সুস্থ মানুষ দেশকে সংকটে ফেলতে পারেন না। কিভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়, তার জন্য জাতীয় সংলাপ করা হোক। সংবিধানের মধ্যে থেকে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। তিনি বলেন, আমি সরলভাবে বলেছিলাম সকাল-সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন এবং কেন্দ্র পাহারা দিন। কিন্তু ভোট তো রাতেই হয়ে গেছে। ভারসাম্যহীন ছাড়া কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এ ধরনের তথাকথিত নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়েছিল। ২০১৪ সালে কেউ নির্বাচনে গো না। তারা বলল সাময়িকভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন না দিয়ে পাঁ বছর থাকল। পাঁ বছর পরে যখন নির্বাচন এল তখন এই প্রহসন দেখতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এটাকে বলতেন ‘রাজ চালাকি’।
তিনি বলেন, আমার খুব দুঃখ লাগে ৩০ ডিসেম্বর যে ঘটনা ঘটল স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও এটা দেখতে হচ্ছে। আমি তো সরলভাবে বলেছি ভাই সকাল-কাল গিয়ে ভোটে দেবেন। কিন্তু টেলিভিশনে বলেছে কামাল হোসেন তো বুঝতেই পারছেন না, ঘটনা তো রাতেই ঘটে গেছে।
এর মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। ৩০০ লোক সংসদ সদস্য হয়ে গেছেন। আর বিরোধী দলে সাতজন, আমাদের দু’জন। এটার অর্থটা কি? ১৭ কোটি মানুষকে নিয়ে কি খেলা করা যায়? বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা রাজনীতি থেকে সরে রাজ চালাকিতে চলে যাচ্ছি। ৩০ ডিসেম্বর যেটা হয়েছে, সেটা রাজ চালাকির একটা সুন্দর উদাহরণ। আমি বলব, এই রাজ চালাকি থেকে বিরত থাকেন। সংবিধান অনুযায়ী আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে যা করার করেন। এছাড়া কোনো বিকল্প হতে পারে না। কারও জন্য এটা মঙ্গল হবে না।
যারা করবে তাদের জন্যও না, যাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে তাদের তো একদমই হবে না। ড. কামাল হোসেন বলেন, সংকট বা বিরোধ সৃষ্টি করার কোনো প্রয়োজন নেই। কেন সংকট সৃষ্টি করছেন। এটা কোনো সুস্থ মানুষের করার কথা না। আমি আবার বলছি। সুস্থ মানুষ জেনেশুনে বিরোধ সৃষ্টি করবে কেন। আজ শতকরা একশভাগ মানুষই বলবে, সরকার গঠন করতে হলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। আসুন বছরের প্রথম দিকে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি।
Array