সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সুপারগ্রেড কার্যকর এবং সতন্ত্র বেতনস্কেলের দাবিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে আজ ২৫শে জুন ২০২৪ সকাল ৯:০০ টা থেকে দুপুর ১:০০ টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করা হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নির্দেশনা অনু্যায়ী আগামী দুই দিন (২৬ ও ২৭ ই জুন) এই অর্ধদিবস কর্মবিরতি চলমান থাকবে। উল্লেখ্য, বিগত ১৮ই মে ২০২৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বিদ্যমান পেনশন এবং ‘প্রত্যয়’ স্কিমের সুবিধা ও বৈষম্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ অবলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার না করলে বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আজকের এই অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে অবিলম্বে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আশিকুল আলম ও অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনু্যায়ী আগামী ২৭শে জুনের মধ্যে কর্তৃপক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করা হলে ৩০ ই জুন ২০২৪ তারিখে পূর্ণদিবস কর্মবরতি পালন করা হবে এবং ১ লা জুলাই, ২০২৪ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ধারনা নিঃসন্দেহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কল্যাণমুখী চিন্তার ফসল। গত ১৭ই আগস্ট ২০২৩ তারিখে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ অন্যুায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্ধোধন করেন যা দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা এবং এর মাধ্যমে সরকারী চাকরীর বাহিরে থাকা নাগরিকদের পেনশন স্কিমের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। ১৭ই আগস্ট ২০২৩ তারিখে যে চারটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, তাতে বেসরকারী খাতের চাকরিজীবীরা ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিযুক্তরা ‘সুরক্ষা’ প্রবাসী নাগরিকগণ ‘প্রবাসী’ এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী ‘সমতা’ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হবেন। সরকারের এমন মহৎ উদ্যোগ যখন প্রশংসিত হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে গত ১৩ই মার্চ ২০২৪ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয় যাতে, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাস্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা বা তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সমূহকে ‘প্রত্যয়’ স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা ১লা জুলাই এবং তৎপরবর্তী সময়ে যারা চাকরিতে নতুন যোগদান করবেন তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে। ‘প্রত্যয়’ স্কিমের সাথে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থাপনার তুলনামূলক চিত্র বলে দেয় এই ব্যবস্থা সরকারী চাকরিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের সৃষ্টি করবে। বিদ্যমান ব্যাবস্থায় পেনশনাররা যে সকল সুবিধাদি প্রাপ্ত হন, তা বিভিন্ন সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং প্রণোদনার অংশ হিসেবে প্রবর্তন করা হয় যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভোগ করে আসছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেদিন সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্ধোধন করেন সেদিন ‘প্রত্যয়’ স্কিমটি ছিল না। শিক্ষকদের সাথে আলোচনা না করে এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া স্বায়ত্তশাসনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। এমতাবস্থায়, শিক্ষকদের দাবি সরকার অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদ্যমান সেশনজটমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবেন।
Array