
সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। ক্রিকেটপ্রেমী তো বটেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে খুবই পরিচিত নাম। নানাবিধ কারণে সাকিবকে চিনে থাকেন বাংলাদেশের মানুষ। কেউ বিজ্ঞাপন দেখে; কেউ মাঠের সাকিবকে দেখে। তবে ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালির কাছে সাকিব এক অনুভূতির নাম! যিনি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করার উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন বহু বার। সাকিবের মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক দেশ এখন বাংলাদেশকে চেনে।
১৯৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করা সাকিবকে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা বাংলাদেশি ক্রিকেটার ভাবা হয়। তার রেকর্ড আর অর্জনের ঝুলি এতোটাই সমৃদ্ধ যে, সাকিবকে সেরা না ভেবে উপায় নেই। প্রকৃত অলরাউন্ডার বলতে যা বুঝায়; সাকিবের মধ্যে তার চেয়েও বেশি গুণ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে! দুর্দান্ত ব্যাটিং, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং আর দারুণ ফিল্ডিং করতে যিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তার নাম সাকিব। ক্রীড়া প্রেমী এক পরিবার থেকে উঠে আসেন সাকিব। বাবা ছিলেন ফুটবলার। সাকিবের এক কাছের ভাই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়ও ছিলেন। তবে সাকিবের ইচ্ছা ছিলো ক্রিকেটার হবার। সাকিবকে তাই বিকেএসপিতে ভর্তি করে দেন তার বাবা। আন্তর্জাতিক মণ্ডলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সাকিব। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, ঠিক তেমনই নিজেকেও নিয়ে গেছেন চূড়ায়।
ক্রিকেট মাঠে নামলেই রেকর্ড যার পিছু ছুটে! টাইগার ক্রিকেটের রেকর্ড হিসেব করলে সাকিব অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাই টাইগার ক্রিকেট বাদ দিয়ে এবারে না’হয় বিশ্ব ক্রিকেটের সাকিবকে নিয়ে আলোচনা করা যাক। ক্রিকেট মাঠে অলরাউন্ডার এক বিশেষ পদবী। অনেকটা ‘যে রাধে, সে চুলও বাঁধে’ এর মতো। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী আবার বল হাতে অনন্য, সাথে ফিল্ডিং এর বালাইও আছে! সব ক্ষেত্রেই সেরা থাকলে তবেই না অলরাউন্ডার তকমা জুটবে! অথচ এই অলরাউন্ডার নামক খেতাবকে ডালভাত বানিয়ে ফেলেছিলেন সাকিব। সুদীর্ঘ দিন নিজের নামের সমার্থক বানিয়ে ফেলেছিলেন। অলরাউন্ডার মানেই সাকিব! বিশেষ এই পদবীর প্রায় সব রেকর্ডই বগলদাবা করেছেন এই ক্রিকেটার। একইসাথে তিন ফরম্যাটে অলরাউন্ডার থাকা প্রথম ক্রিকেটার সাকিব। ২০১৫ সালে এই অসাধ্য সাধন করে দেখান। আবার সবচেয়ে বেশি সময় শীর্ষ অলরাউন্ডার খেতাব ধরে রাখা প্রথম ক্রিকেটারও তিনি।
২০১৭ সালে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। ৫ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। সবচেয়ে কম ১৭৮ ওয়ানডে খেলে এই রেকর্ড গড়েন সাকিব। এতো কম ওয়ানডে খেলে এই রেকর্ড আর কেউ গড়তে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেটের সাকিবও রেকর্ডময়। ডাবল সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট নেয়া চতুর্থ ক্রিকেটার সাকিব। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি দিয়ে বিশেষ এই ক্লাবে ঢুকেন। অ্যালান বোর্ডার, ওয়াসিম আকরাম ও ইয়ান বোথামের পর সাকিব এই সম্মানজনক কীর্তি গড়েছেন।
এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম ম্যাচ (৫৪) খেলে ৩ হাজার রানের ডাবল ও ২০০ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। বোলার ট্যাগ গায়ে নিলেও সাকিব রেকর্ডময়! টেস্ট খেলুড়ে সব দলের বিপক্ষেই সাকিবের ৫ উইকেট নেয়ার বিরল রেকর্ড আছে। মুত্তিয়া মুরালিধরন, ডেল স্টেইন ও রঙ্গনা হেরাথের পর সাকিব এই রেকর্ড গড়েছেন। গতবছরের আগষ্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের এই অভিজাত রেকর্ডের বইয়ে নাম লেখান বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’।
অথচ সাকিব যদি আগে অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলার সুযোগ পেত তাহলে এই রেকর্ড হয়তো আরো আগে হতে পারতো। কেননা, বাকি ৮ দলের বিপক্ষে সাকিবের ৫ উইকেট ছিলো অনেক আগে থেকেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজারের অধিক রান ও ৫০০ এর বেশি উইকেট শিকার করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই বিষ্ময় বালক। এখনো মাঠে নামলে রেকর্ড যেন তাড়া করে বেড়ায় সাকিবকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নন্দিত এই তারকার জন্য শুভ কামনা।
Array