• ঢাকা, বাংলাদেশ

স্কুল-কলেজের ‘টিউশন ফি’ নিয়ে উভয়সংকট 

 admin 
03rd Aug 2020 4:39 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

 

রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়ালে স্কুল অ্যান্ড কলেজে করোনার বন্ধের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি গত জুলাই থেকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) চেয়েছে। অভিভাবকেরা বলছেন, তাঁরা এখন আর্থিক সংকটে পড়েছেন। এ জন্য সময় দিয়ে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ফি অর্ধেক নেওয়া হোক। আর প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষা ফি আদায় না করলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাবে না।

শুধু এই স্কুল নয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ফি নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসহ বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েকটি স্কুলের অভিভাবকেরা করোনাকালেও শিক্ষা ফি অর্ধেক করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে সাড়া মিলছে না।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক  বলেন, একেকটি স্কুলের ধরন একেক রকমের। অভিভাবকেরা যেমন সমস্যায় আছেন, আবার শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিষয়ও আছে। ফলে এখানে একটি নির্দেশনা দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যাবে না। তাই তাঁরা বলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্ধ চলছে। আপাতত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা থাকলেও সরকারি সূত্রগুলো বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে অনেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। যদিও অভিভাবকদের অভিযোগ অনলাইন ক্লাস গুণগত মানের হচ্ছে না।
মতিঝিলের আইডিয়ালে স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষার্থী (তিন ক্যাম্পাস মিলে) শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটিতে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষা ফি ১ হাজার ৩০০ টাকার কিছু বেশি। আর কলেজ শাখায় বেতন ২ হাজার ১০০ টাকা। এই স্কুলের ফি কমানোর বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপীবাগের একজন অভিভাবক বললেন, তাঁর সন্তান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি ছোটখাটো ঠিকাদারির কাজ করতেন। প্রায় পাঁচ মাস ধরে আয় নেই। এ কারণে সন্তানের ফি দেওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৮০০ জন। এর মধ্যে ১১৬ জন এমপিওভুক্ত, যাঁরা সরকার থেকে মাসে মূল বেতন পান। বাকিদের বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না পেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হবে কীভাবে? আর ফির জন্য কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না। বরং নমনীয়তা দেখিয়ে প্রায় তিন মাস জুড়ে বেতন দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস বন্ধ থাকলেও অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। তাই শিক্ষা ফি কমানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাজধানীর ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল মাস্টারমাইন্ডের অভিভাবকেরা করোনাকালে যত দিন অনলাইনে ক্লাস হবে, তত দিন শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। ইতিমধ্যে দুই দিন মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
শমী ইব্রাহিম নামের এক অভিভাবক  বলেন, তাঁর সন্তান প্লে গ্রুপ থেকে নার্সারিতে উঠেছে। টিউশন ফি ১৫ হাজার টাকা, যা এই মুহূর্তে তাঁর জন্য বড় চাপ। আর স্কুল বন্ধের সময় অনলাইনে ক্লাস হলেও সার্বিক খরচ কমার কথা। এ জন্য তাঁরা কেবল করোনাকালে শিক্ষার্থীর বেতন ৫০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনো মানেনি।

শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) ৫০ শতাংশ মওকুফ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সম্প্রতি রাজধানীতে মানববন্ধন করেছেন ইংরেজি মাধ্যমের আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাউথ ব্রিজ স্কুলের অভিভাবকেরা।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে মাধ্যমিকে পড়ছে ১ কোটি ৩৪ লাখের মতো ছেলেমেয়ে। স্কুল আছে ২১ হাজার, যার প্রায় ৯০ ভাগ বেসরকারি। এসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেকগুলোতে প্রাথমিক স্তরও আছে। কলেজ আছে সাড়ে চার হাজারের মতো, শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪৪ লাখ। এগুলোও বেশির ভাগ বেসরকারি। প্রাথমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় পৌনে দুই কোটি, যার সিংহভাগই অবশ্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেতনের ঝামেলা নেই।

মূল সমস্যা হলো ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো পুরোটাই শিক্ষা ফির ওপর নির্ভর করে চলে। আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেগুলো এমপিওভুক্ত, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা কেবল মূল বেতনসহ সামান্য কিছু ভাতা সরকার থেকে পান। বাকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় মূলত শিক্ষা ফি আদায়ের মাধ্যমে। তাই শিক্ষা ফি নিয়ে স্কুলগুলোও চাপে আছে।
সরকারি হিসাবে দেশে ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল আছে ১৪৫টি। এগুলোতে পড়াশোনা করে সাড়ে ১১ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। যদিও বেসরকারি হিসাবে প্রকৃত সংখ্যাটি আরও বেশি। ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলোতে একসময় কেবল ধনী পরিবারের সন্তানেরা পড়ত। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীও এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দুই সন্তান রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল প্লেপেনে পড়ে। এক সন্তান পড়ে দশম শ্রেণিতে, আরেকজন পঞ্চম শ্রেণিতে। কষ্ট করে বড় সন্তানের বেতন দিতে পারায় তাকে অনলাইনে ক্লাসে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ছোট সন্তানের বেতন দিতে না পারায় তাকে অনলাইনে ক্লাস করাতে দিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, এতে শিশুদের ওপর মানসিক চাপ পড়ছে। তাঁর বড় সন্তানের বেতন ১২ হাজারের ওপর। আর ছোট সন্তানের বেতন ১০ হাজার ২৮০ টাকা।

এই স্কুলের অভিভাবকেরাও শিক্ষার্থীদের বেতন কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, এর আগে দুই মাস কিছুসংখ্যক অভিভাবকের কাছ থেকে কম বেতন আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু অনলাইনে ক্লাস শুরুর পর সেটি আর করা হয়নি।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরাম জুলাই মাসের গোড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে।

ঢাকা সিটি কলেজ ১৫ জুলাই নোটিশ দিয়ে জানিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া সবাইকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় শিক্ষা ফি ও অন্যান্য ফি চার্জ বাবদ টাকা ১৯ থেকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে (একেক শিক্ষার্থীর একেক সময়) পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। একেকজন শিক্ষার্থীর মোট ফি ২০ হাজার ৪৫০ টাকা।

রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০ শতাংশ কমানোর দাবিতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ১২ জুলাই স্মারকলিপি দিয়েছেন অভিভাবকেরা। তবে বেতন কমেনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম  বলেন, একদিকে শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে, আরেক দিকে অভিভাবকদের আর্থিক সংকট চলছে। তাই উভয় পক্ষকে ছাড় দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১