• ঢাকা, বাংলাদেশ

রাজধানীতে হচ্ছে পাতাল রেল, চালু ২০২৬ সালে 

 admin 
14th Nov 2020 3:30 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

রাজধানীর যানজট নিরসনে আরো দুটি মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এ দুটিতে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে পাতাল রেল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এ পর্যন্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক ডিজাইন তৈরির অগ্রগতি ৩০ শতাংশ।

এমআরটি-১ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রথম পাতাল রেল নির্মাণ করা হবে। দুই পর্যায়ে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯.৮৭২ কিলোমিটার পাতাল রেল এবং নতুন বাজার থেকে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১.২৬৯ কিলোমিটার উড়াল রেল নির্মাণ করা হবে। এ রুটে যাত্রীদের জন্য নতুন বাজার স্টেশনে রেল পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যাতে কমলাপুর রুটের যাত্রীরা সহজে পূর্বাচল রুটে এবং পূর্বাচল রুটের যাত্রীরা সহজে কমলাপুর রুটে যেতে পারেন।

এমআরটি-১ প্রকল্পের সার্বিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের পাশাপাশি এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুট বা উত্তরাংশ শীর্ষক মেট্রোরেল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এ দুই প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এছাড়া মেট্রোরেল দুটির সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নেও সহায়তা করছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, পাঁচটি মেট্রোরেলের মধ্যে তিনটির অর্ধেক বা তারও বেশি হবে পাতাল রেল। এর মধ্যে ২০২৬ সালে শেষ হবে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ এমআরটি লাইন-১। এর দুটি অংশ। একটি অংশ বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে। এ অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৬ দশমিক ২১ কিলোমিটার হবে মাটির নিচ দিয়ে, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম পাতাল রেল। বাকি তিন দশমিক ৬৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে (এলিভেটেড)। এ অংশে ১২টি স্টেশন থাকবে, যার সবই হবে মাটির নিচে।

এমআরটি লাইন-১-এর দ্বিতীয় অংশটি নতুনবাজার থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার হয়ে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত যাবে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার, যার পুরোটাই উড়ালপথে। এ রুটে স্টেশন হবে ৯টি। এর মধ্যে নতুনবাজার স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে বিমানবন্দর-পূর্বাচল রুটে ও পূর্বাচল-বিমানবন্দর রুটে যেতে পারবেন যাত্রীরা। দুই অংশ মিলিয়ে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

তিন ধাপে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ চলছে। আগামী বছর এর নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ শেষ করা হবে উত্তরা-মতিঝিল রুটের মেট্রোরেল। এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে ২০১৬ সালে এর মূল নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। দ্বিতীয় ধাপে একটি মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ ও আরেকটি আংশিক এবং তৃতীয় ধাপে বাকিগুলোর নির্মাণ শেষ হবে।

ঢাকায় তৃতীয় মেট্রোরেল তথা এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুটের দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মাটির নিচ দিয়ে (পাতাল রেল) ও বাকি ৬ কিলোমিটার উড়ালপথে হবে। এ মেট্রোরেলটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে বলিয়ারপুর, মধুমতি, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুনবাজার হয়ে ভাটারা যাবে। এ রুটে ১৪টি স্টেশন থাকবে- যার ৯টি মাটির নিচে ও পাঁচটি উড়ালপথে হবে।

অন্যদিকে, এমআরটি লাইন-৫-এর সাউদার্ন রুট তথা দক্ষিণাংশ নির্মাণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সাল। এ অংশটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার। এটি উড়ালপথ ও মাটির নিচ মিলিয়ে নির্মাণ করা হবে। এ অংশে মেট্রোরেলটি গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদ গেট, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, সোনারগাঁও হোটেল, হাতিরঝিল, নিকেতন, রামপুরা, আফতাবনগর পশ্চিম, আফতাবনগর সেন্টার, আফতাবনগর পূর্ব হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত যাবে। এ রুটে ১৭টি স্টেশন থাকবে। ইতোমধ্যে এমআরটি লাইন-৫-এর সাউদার্ন রুটের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার জন্য আরো দুটি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ করা হবে কমলামপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথের নিচ দিয়ে। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে উন্নয়ন সহযোগী অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া গাবতলী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে জিটুজি ভিত্তিতে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) পদ্ধতিতে মেট্রোরেলটি নির্মাণে জাপান ও বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সহযোগিতা স্মারক সই করেছে। প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের সম্ভাব্য যাচাইয়ে প্রস্তাব দাখিল করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় মাটি ফেলার জায়গা না পেয়ে জটিলতার মুখে পড়েছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল (পাতাল) নির্মাণে সবচেয়ে জটিলতা হবে মাটি অপসারণ ও তার ব্যবহার নিয়ে। সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ঢাকায় পাতাল রেল হবে সড়কের ১৫০ থেকে ২০০ ফুট নিচে। আর স্টেশনগুলোর আকার হবে কয়েক হাজার বর্গফুট ও তিন-চার তলাবিশিষ্ট। এতে পাতাল রেলের টানেল ও স্টেশন থেকে প্রচুর মাটি অপসারণ করতে হবে। ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় এত পরিমাণ মাটি ফেলার মতো পর্যাপ্ত নিচু জমি নেই। কিছু স্থানে নিচুজমি বা খাল থাকলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সেখানে মাটি ফেলা সম্ভব নয়। তাই মেট্রোরেলের মাটি ফেলার জন্য একাধিক বিকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার জন্য প্রস্তাবিত পাতাল রেলের মাটি অপসারণ ও তা ফেলতে যে ব্যয় হবে, তা দিয়ে উড়ালপথে আরেকটি মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষও। তাই কম ব্যয়ে ও সাশ্রয়ী সময়ে কীভাবে মাটি অপসারণ করা যায়-তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণও বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মাটি ফেলার জন্য সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের জন্য নিচু জমি ভরাটে প্রচুর বালি ও মাটি দরকার হবে। এক্ষেত্রে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেলের মাটি সরবরাহ করা যায় কি না, তা বিবেচনা করা হচ্ছে। এজন্য আবাসন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১