ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্তোরাঁ নির্মাণের জন্য গাছ কাটার ঘটনায় প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমীরা। যেকোনো পরিস্থিতিতে গাছ কাটা বন্ধ করার দাবি জানান তারা। প্রয়োজনে দিন-রাত উদ্যানে পাহাড়া দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত উদ্যানে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারি নিয়ম মেনেই গাছ কাটা হচ্ছে। আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু গাছ কাটা হলেও সেখানে নতুন করে লাগানো হবে এক হাজার গাছ।
কাটা গাছের গোড়ার ওপর পাখির বানিয়ে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
বুধবার (৫ মে) উদ্যানে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সরজমিন দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এরইমধ্যে বেশকিছু গাছ কাটা হয়েছে। কিছু গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। গত কয়েকদিনে প্রায় একশ’র বেশি গাছ কাটা হয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ।
তারা বলছেন, রাতারাতি গাড়ি নিয়ে এসে বড় বড় গাছগুলো কেটে উদ্যান উজাড় করা হচ্ছে। এখানে রেস্টুরেন্ট করা হবে। এর ফলে মহাবিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার পরিবেশকে। সবুজে ঘেরা এই উদ্যান কেবল পশু-পাখিদেরই নয়, আশ্রয় দিচ্ছে ছিন্নমূল মানুষদেরও। তাই গাছের গায়ে করাতের আঁচড়ে মর্মাহত আমরাও।
এই গাছটিও কাটা হবে, তাই চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
গাছ কাটার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছেন পরিবেশবাদী ও বিভিন্ন বাম সংগঠন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ শুরু করেছেন। অনেকেই কাটা গাছের স্থানে বানিয়েছেন প্রতীকী পাখির বাসা। কাটা গাছের গুঁড়িতে সাদা কাগজে লিখে রেখেছেন ‘গাছ কাটা বন্ধ করুন, পরিবেশ বাঁচান’।
হোসেন সোহেল নামের এক ব্যক্তি গতকাল সোহরাওয়ার্দী বলেন, আমাদের বুকের বামদিকে রেস্তোরা বাস করে না, সেখানে থাকে প্রাণ প্রকৃতি। যা বুকের বামদিকে ঝিকঝিক করে। সুতরাং রেস্তোরা নয়, আগে আমার প্রাণ প্রকৃতি। সেখানে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অপরিকল্পিতভাবে গাছ না লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যখন আমরা কেউ এখানে থাকছি না। এখন থেকে আমরা রাত-দিন পাহাড়া দেব। দেখি কে গাছ কেটে রেস্তোরাঁ বানায়।
গাছ কাটায় প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বুধবার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ এতে স্বাক্ষর করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও ভুগর্ভস্থ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ, আধুনিক নগর উপযোগী সবুজের আবহে আন্তর্জাতিকমানে গড়ে তোলা ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন, পাকিস্তানি শাসনবিরোধী ২৩ বছরের মুক্তিসংগ্রাম ও ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত ভাস্কর্য স্থাপন, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য স্থাপন, ইন্দিরা মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াটার বডি ও ফাউন্টেইন নির্মাণ, ভূগর্ভস্থ ৫০০ গাড়ির কার পার্কিং ও শিশুপার্ক নির্মাণসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু গাছ কাটা হলেও হলেও সেখানে প্রায় এক হাজার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে খণ্ডিত তথ্য প্রচার হওয়ায় অনেকের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশপ্রেমিক-সচেতন নাগরিকদের সমর্থন ও সহযোগীতা কামনার কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
Array