নিউজ ডেস্ক:দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক আচরণে চালের বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বর্তমানে গুদামে ১৯ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য মজুত। খাদ্য মন্ত্রণালয় এখন আরো ৯ লাখ টন চাল আমদানির জন্য চালাচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি দেশে বোরো সংগ্রহ শেষ হয়েছে। আর আগামী ডিসেম্বরে আমন ধান উঠতে শুরু করবে। যদিও দেশে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর ওই তিন মাস বাজারে চালের দাম বাড়ার একটা প্রবণতা থাকে। আর ওই তিন মাসে ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও টিসিবির কার্ডের জন্য সরকারের গুদাম থেকে ৯ লাখ টনের বেশি চাল বের হয়ে যাবে। ওই ঘাটতি সরকার পূরণে আমদানিতে জোর দিচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করেছে। আরো ৩ লাখ ৭০ হাজার টন চাল আমদানির চেষ্টা চলছে। সরকারের হাতে এখন ১৮ লাখ ৮৩ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। তার মধ্যে ১৭ লাখ ৮০ হাজার টন চাল রয়েছে। কিন্তু এবার বোরোর ফলন কম হয়েছে। আমনের ফলনেও আশানুরূপ চাল না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমন অবস্থায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সরকার চাল আমদানিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ওই লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে ৯ লাখ টন চাল আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার জিটুজি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি করেছে। তার মধ্যে ২ লাখ টন সেদ্ধ চাল আর ৩০ হাজার টন আতপ। ভিয়েতনাম ওই ২ লাখ টন সেদ্ধ চাল থাইল্যান্ড থেকে কিনে বাংলাদেশে সরবরাহ করবে। সেদ্ধ চাল কেনার চুক্তির সময় প্রতি টন চালের এফওবি দর ছিল ৪১৭ ডলার। তার সঙ্গে অন্য খরচসহ (জাহাজ ভাড়া, বার্থ অপারেটিং হ্যান্ডলিং, লাইটেনিং, বীমা ও মুনাফা) প্রতি টন চালের জন্য সরকার ৫২১ ডলার পরিশোধ করবে। অর্থাৎ প্রতি টনে ১০৪ ডলার অন্য খরচ পড়ছে। ভিয়েতনাম থেকে চাল বাংলাদেশের গুদামে পৌঁছে দেবে সাউদার্ন ফুড করপোরেশন (ভিনা-২)। ভিয়েতনাম থেকে কেনা চালের বর্তমান এফওবি দর ৪৩২ ডলার। অর্থাৎ সরকার প্রতি টন চাল ১৫ ডলার কমে কিনতে পেরেছে। আর ভিয়েতনামের চুক্তি করা ৩০ হাজার টন আতপ চালের প্রতি টনের এফওবি দর ছিল ৩৮৫ ডলার। যার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, চালের এফওবি দর নিয়ে সরকারের দেয়া তথ্যানুযায়ী ভিয়েতনামের চালের পরিবহন খরচ অনেক বেশি দেখানোর প্রশ্ন উঠেছে। এবারের চাল আমদানিতে সবচেয়ে বেশি দাম নিচ্ছে ভিয়েতনাম। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো চাল সরবরাহ করে না। তারা শুধু চাল দিতেই দেরি করে না, অনেক সময় নিম্নমানের চাল গছিয়ে দেয়। ওই চাল ফেরত পাঠাতে গিয়েও ঝামেলা দেখা দেয়। সেজন্যই খাদ্য মন্ত্রণালয় একটি দেশের ওপর বেশি নির্ভরতা রাখতে চাচ্ছে না। কারণ ভারতীয় চাল আমদানি করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে। ওসব অভিজ্ঞতার কারণেই সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আনার চেষ্টা করে। তাছাড়া আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে ২ লাখ টন আতপ চাল কেনার চুক্তির দিন ওই চালের এফওবি দর ছিল প্রতি টন ৩৮৯ ডলার। ওই চাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গুদামে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সরকারকে প্রতি টনে ৪৬৫ ডলার পরিশোধ করতে হবে। মিয়ানমার থেকে যে চাল সরকার কিনেছে তার বাজারদর এখন প্রতি টনে ৫ ডলার বেড়ে ৩৯৪ ডলার দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ভারত থেকে ২ লাখ টন সেদ্ধ চাল আনার চেষ্টা করলেও আপাতত ১ লাখ টন চাল আসছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ভান্ডার থেকে চাল কেনার সময় গত ১৯ আগস্ট এফওবি দর ছিল ৩৬৯ ডলার। ওই দামেই সরকার ২৩ আগস্ট চুক্তি করে। তার মধ্যে ৭০ হাজার টন চাল আসবে নৌপথে (চট্টগ্রাম বন্দরে ৬০ শতাংশ, মোংলা বন্দরে ৪০ শতাংশ) এবং ৩০ হাজার টন চাল ট্রেনে আসবে। জাহাজে প্রতি টন চালের পরিবহনসহ অন্য খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ ডলার। অর্থাৎ জাহাজে ভারত থেকে আসা প্রতি টন চালের দর পড়বে ৪৪৩ ডলার। আর সব খরচ মিলিয়ে ট্রেনে প্রতি টন চালের ব্যয় দাঁড়াবে ৪২৮ ডলার। তাছাড়া থাইল্যান্ড থেকে প্রথম দফায় চাল আনা সম্ভব না হলেও দ্বিতীয় দফা আবারো চেষ্টা চলছে। তার সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে কম্বোডিয়া। ওই দুটি দেশ থেকে ২ লাখ টন করে মোট ৪ লাখ টন চাল আমদানির চেষ্টা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার কাছ থেকে চাল আনার বিষয়টি এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক আচরণে চালের দাম না কমার একক দায় নিতে রাজি নয় ব্যবসায়ী নেতারা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী জানান, চালের বাজার শুধু ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। এখন মধ্য পর্যায়ের অনেক ধান ব্যবসায়ী মজুত ব্যবসা করছে। তারাও এর জন্য দায়ি। তাছাড়া সম্প্রতি ভারতে আতপ চালে ২০ শতাংশ শুল্ক বসানোর খবরে মধ্য ও বড় ব্যবসায়ীরা বাজারে ধান ছাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে যারা ধান মজুত করে রেখেছে তাদের দিকে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে আমদানি বাড়িয়ে ওএমএসে বেশি চাল ছাড়তে হবে। না হলে বাজার ঠিক রাখা কঠিন হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, একশ্রেণির ব্যবসায়ী বিভিন্ন সুযোগে চালের বাজার অস্থির করে তুলে। তখন খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের দায়ী করে। আবার মিল মালিকরা খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর দোষ চাপায়। এ সমস্যা সমাধানে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৩ স্তরের দাম ঘোষণার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে কেউ কাউকে দোষারোপ করতে না পারে।