
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাসি কান্নার অপেক্ষায় আছেন সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা। দিন যত ক্ষনিয়ে আসছে উৎকন্ঠা ততই বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন এ আসনটি নিয়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির মধ্যে চলছে লুকোচুরি খেলা। আওয়ামীলীগ ও শরিক দলগুলোর আসন বন্টন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাবেই বলা যাচ্ছে না শেষ হাসি হাসবে আওয়ামীলীগ নাকি জাতীয়পার্টি। তবে বেশ কয়েক দিন যাবত এ আসন নিয়ে চলছে গুজন। আওয়ামীলীগ ফাইনাল আবার জাতীয়পার্টি ফাইনাল। এই উভয় ফাইনালের শেষ ফাইনাল যে কি তার দিকে তাকিয়ে আছে সোনারগাঁবাসী।
সোনারগাঁয়ে বর্তমানে মহাজোটের শরিক জাতীয়পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। সে সময় এ আসনে তৃনমূল পর্যায়ে জাতীয়পার্টির পক্ষে কাজ করেছিলেন জাতীয় মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদক অন্যন্যা হুসেইন মৌসুমী। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তিনি তখন জাতীয়পার্টির মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আসন্ন নির্বাচনেও এ আসন থেকে খোকা এবং মৌসুমী দু’জনই দলীয় মনোনয়ন চাচ্ছেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে সোনারগাঁ থেকে যিনি মহাজোটকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় তাহলে এ আসন থেকে এবারও লিয়াকত হোসেন খোকাই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরদিকে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দীর্ঘ ২৩ বছর পর নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার প্রায় ৮২ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিমকে পরাজিত করে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কায়সারসহ বেশ কয়েকজন হেভী ওয়েট প্রার্থী আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য মাঠে কাজ করছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী কায়সার হাসনাত রয়েছেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ আসনটি নিয়ে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির মধ্যে চলছে দ্বন্ধ। এ আসনটি কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। জাতীয়পার্টি গত নির্বাচন যে আসনগুলোতে তাদের সংসদ সদস্য রয়েছে সে আসনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনরায় জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার হয় সেজন্য আওয়ামীলীগর কাছে দাবি জানিয়েছে। সেই হিসেবে নারায়নগঞ্জ জেলার মধ্যে সোনারগাঁ আসনটিও তাদের দাবি। অপরদিকে জেলা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দাবি দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হওক কিন্তু সোনারগাঁ থেকে নয়। কারণ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় বর্তমানে এখানে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক অবস্থান দূর্বল হয়ে পড়েছে। এ বছরও যদি এখান থেকে এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ নামের শব্দটি মুছে যাবে। কারণ এখানে রয়েছে বিএনপি শক্তিশালী সংগঠন। তারা টানা তিনবার সোনারগাঁয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই শক্তিশালী বলয় কে ভেঙ্গে দীর্ঘ তেইশ বছর পর কায়সার হাসনাত ৮২ হাজার ভোটের ব্যবধানে রেজাউল করিমকে পরাজিত করে এ আসনটি পূনরুদ্ধার করে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের ঘাটি তৈরী করেছেন। গত নির্বাচনে এ আসনটি ছেড়ে দেয়ায় এ ঘাটি কিছুটা দূর্বল হয়ে গেছে। আগামীতে যদি এ আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে আওয়ামীলীগ ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন আওয়ামীলীগের নেতার্কীরা।
অপরদিকে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা সোনারগাঁয়ে জাতীয়পার্টির অবস্থান কিছুটা দৃঢ় করেছেন। জাতীয়পার্টির দাবি গত ৫ বছরে তারা ক্ষমতায় থেকে সোনারগাঁয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেই হিসেবে তাদের অবস্থান অন্য দলের চেয়ে এখানে শক্তিশালী। তাই তারা আবারো এখানে সংসদ নির্বাচিত হলে সোনারগাঁয়ে জাতীয়পার্টির ঘাটি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। এতে এ আসনটি তাদের স্থায়ী ঘাটি হয়ে যাবে হবে মনে করেছেন তারা।
৩০ শে ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ঘোষনা করেছে নির্বাচনে কমিশন। মাঝ খানে কয়েকটি দিন বাকি রয়েছে। এ ক’দিনে কোন দলের প্রার্থী মনোনীত না হওয়ায় দুচিন্তায় পড়েছেন দুদলের নেতাকর্মীরাই। এছাড়া আসনটি কি আওয়ামীলীগই রাখবে নাকি শরিক দল জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দিবে এ নিয়ে চলছে নানামূর্খী গুজন।
Array