• ঢাকা, বাংলাদেশ

এটাই বাংলাদেশ 

 admin 
18th Jun 2019 3:24 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

টুর্নামেন্টে টিকে থাকার প্রশ্নে খাদের কিনারে দাঁড়ানো টাইগাররা যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল, এটাই বাংলাদেশ। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে নিজের পরিচয় দিতে কখনোই কার্পণ্য করেনি বাঙালি, গতকাল আরেকবার সেটা প্রমাণ হলো টন্টনের মাঠে। টাইগাররা এই ম্যাচে জিতবে এটা হয়তো ভেবেছিলেন অনেকে। তবে এভাবে জিততে সেটা বোধ হয় কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২১ রান ৭ উইকেট ও ৫১ বল হাতে রেখেই জিতল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় এটা বাংলাদেশের রেকর্ড। এই জয়ে শেষ চারের আশাটা ভালোভাবেই জিইয়ে রাখল টাইগাররা।

অসাধারণ, অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, ঐতিহাসিক! নাহ্, কোনো শব্দই যেন যুৎসই হচ্ছে না এই জয়কে ব্যাখ্যা করার জন্য। স্বপ্নও বোধ হয় হার মেনেছে টাইগারদের পারফরম্যান্সের কাছে। গ্যাব্রিয়েলের বলে লিটন দাস যখন জয়সূচক চারটি মারলেন, ক্যারিবীয় খেলোয়াড়দের চোখে তখন রাজ্যের হতাশা। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তারা এলোমেলো তাকাচ্ছেন। একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা তারা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না!

শুধু তারা কেন, এই বাংলাদেশকে কে কবে দেখেছে! টাইগাররা গত কয়েক বছরে ভালো খেলেছে কিন্তু কাল যে সব ভালোকে ছাড়িয়ে উপহার দিয়েছে এক বিস্ময় জাগানিয়া পারফরম্যান্স। দর্শকদেরও হয়তো চোখ কচলে কিছুক্ষণ পরপর দেখতে হয়েছে স্কোর লাইন, এটা বাংলাদেশ তো! সাকিব, মিঠুনরা মাঠের চারিদিকে যেভাবে মারলেন, মনে হল যুগ যুগ ধরে জমানো ক্ষোভ, দুঃখ, হতাশা, সমালোচনা উগরে দিচ্ছেন উইন্ডিজের খেলোয়াড়দের ওপর।

জয়ের সঙ্গে গতকাল টন্টনের মাঠে রচিত হয়েছে ‘সাকিবগাথা’। সাকিব যেভাবে ব্যাটিং করলেন সেটাকে মহাকাব্য বললেও কম বলা হবে। এভাবে ব্যাটিং করার স্বপ্নই দেখে থাকেন ব্যাটসম্যানরা। আর লিটন দাস, গত চারটি ম্যাচে তাকে বসিয়ে রাখার জবাবটা দিলেন কী অসাধারণভাবে। সাকিবের ১২৪ রানের কাছে লিটন দাসের ৯৪ কম আলো ছড়ায়নি গতকাল।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোলিং উদ্বোধন করেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি ক্যারিবীয় দুই ওপেনার ক্রিস গেইল আর এভিন লুইস। পরের ওভারে সাইফউদ্দীনও ২ রানের বেশি দেননি। তৃতীয় ওভারে এভিন লুইসের কাছে মাত্র একটি বাউন্ডারি হজম করেন মাশরাফি। তার পরের ওভারে দ্বিতীয় বলেই আঘাত সাইফউদ্দীনের। অফসাইডে বেরিয়ে যাওয়া বল বুঝতে না পেরে খোঁচা দিয়েছিলেন গেইল। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। সকালের সূর্যের মতো এই আউটাই বলে দিয়েছিল দিনটা বাংলাদেশের হতে যাচ্ছে।

শুরুর এই বিপদ থেকে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন এভিন লুইস আর শাই হোপ, দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ১১৬ রান। ২৫তম ওভারে এসে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান সাকিব আল হাসান। তাকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমানের ক্যাচ হন লুইস। ৬৭ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ক্যারিবীয় ওপেনার করেন ৭০ রান। তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুরান আর সিমরন হেটমায়ারের ৩৭ রানের জুটিটিও ভাঙেন সাকিব। টাইগার স্পিনারের ঘূর্ণিতে ৩০ বলে ২৫ রান করে লং অনে সৌম্য সরকারের ক্যাচ হন পুরান। সেখান থেকে ৪৩ বলে ৮৩ রানের বিধ্বংসী এক জুটি হেটমায়ার-শাই হোপের। অবশেষে মোস্তাফিজ ঝলক দেখান। ৪০তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন কাটার মাস্টার।

২৫ বলে ৫০ রানের টর্নোডো ইনিংস খেলা হেটমায়ার আউট হন তামিম ইকবালের চোখে লাগার মতো এক ক্যাচে। ওভারের শেষ বলটিতে দুর্দান্ত এক ডেলিভারি দেন মোস্তাফিজ, শূন্য রানেই আন্দ্রে রাসেল ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। ২৪৩ রানে ৫ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে আরেকটি ঝড়ো জুটি ক্যারিবীয়দের। এবার হোপের সঙ্গী অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, ১৫ বলে ৩৩ রানের ঝড় তুলে ক্যারিবীয় অধিনায়ক আউট হন সাইফউদ্দীনের বলে, লং অফে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। তারপরও একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন শাই হোপ। বল খরচ করলেও যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত আর সেঞ্চুরি পাওয়া হয়ে উঠেনি তার। ১২১ বলে ৯৬ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হন হোপ।

শেষ ৬ ওভারে টাইগার বোলাররা বেশ চেপে ধরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শেষ ওভারের শেষ বলে ড্যারেন ব্রাভোকে (১৫ বলে ১৯) বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দিন। সাকিবের শিকার ২ উইকেট।

৩২২ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ের শুরুটা করেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। দলীয় ৫২ রানের মাথায় বিদায় নেন সৌম্য। আন্দ্রে রাসেলের করা নবম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এই ওপেনার। পরের বলেই খোঁচা দিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো গেইলের মুঠোবন্দি হন তিনি। তার আগে ২৩ বলে দুই চার, দুই ছক্কায় করেন ২৯ রান। এরপর ৬৯ রানের জুটি গড়েন সাকিব-তামিম। ইনিংসের ১৮তম ওভারে রান আউট হন তামিম। তার আগে ৫৩ বলে ছয়টি বাউন্ডারিতে তামিম করেন ৪৮ রান। ইনিংসের ১৯তম ওভারে ওশানে থমাসের বলে উইকেটের পেছন ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম। অন্যদিকে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবম সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করতে সাকিবের লাগে ৮৩ বল। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই দ্রুততম সেঞ্চুরি। লিটন দাসও নিজের ফিফটির দেখা পান। ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন লিটন।

সাকিব-লিটনের জুটিতে আসে অবিচ্ছিন্ন ১৮৯ রান। দুজনই অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। সাকিব ৯৯ বল ১৬টি চারের সাহায্যে করেন অপরাজিত ১২৪ রান। লিটন দাস ৬৯ বলে আটটি চার আর চারটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৯৪ রান। ৫১ বল হাতে রেখেই জিতে যান টাইগাররা।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১