• ঢাকা, বাংলাদেশ

কথা শুনলে বেঁচে যেতেন খাসোগি! 

 admin 
01st Jan 2019 7:32 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

গেল বছরে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড। সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যদের দল উড়ে গিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে গত ২ অক্টোবর তাঁকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এমন উচ্চ নিরাপত্তার স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটানো অসম্ভব বলেই মতপ্রকাশ করেছে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যাঁর নাম এসেছে, তিনি আর কেউ নন, তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের মতো দেশ, যারা অন্য কোনো দেশের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের প্রথা অনুসারে শাসনে অভ্যস্ত, তারাও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নাড়া খায় এই হত্যাকাণ্ডে।

২০১৭ সালের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর কড়া সমালোচক হিসেবে খাসোগি তাঁর রোষানলে পড়েন। দুর্নীতিবিরোধী ও ভিন্নমত দমনের অভিযানে ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যে নিজেকে বাঁচাতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান একসময়ের রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি জামাল খাসোগি। একসময় সৌদি রাজপরিবারের বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টদের সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং ওসামা বিন লাদেনের একাধিকবার সাক্ষাৎকার নেওয়া খাসোগি আন্তর্জাতিক মহলে সুপরিচিত ছিলেন। স্বেচ্ছানির্বাসনের সময়ে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। তাঁর কলামজুড়ে থাকত সৌদি শাসকদের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনা। নির্বাসনে যাওয়ার পরপরই ২০১৭ সালের অক্টোবরে যুবরাজের গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা কাহতানি তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে যুবরাজের পক্ষে কলাম লেখার অনুরোধ জানান এবং এটাও জানান, তাঁর লেখা প্রতিটি শব্দ যুবরাজের নজরে রয়েছে। কিন্তু সে কথা শোনেননি খাসোগি। আর কথা না শোনার পরিণতি তাঁকে ভোগ করতে হয়েছে ঠিক পরের বছরের অক্টোবরে প্রাণ দিয়ে।

Eprothom Alo

নিখোঁজের দিন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন খাসোগি ছিলেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ খবরে। সবশেষ গতকাল সোমবারও খাসোগি ইস্যুতে তুরস্কের গণমাধ্যমে ভিডিওসহ নতুন তথ্য প্রকাশ হয়েছে। এএফপি, আঙ্কারা ও আল-জাজিরার খবর থেকে জানা গেছে, তুরস্কের আ-হাবার নামের এক টেলিভিশন চ্যানেল তাদের খবরে বলেছে, ব্যাগ ও বাক্সতে করে খাসোগির মরদেহের টুকরা ইস্তাম্বুলের সৌদি আরবের কনস্যুলেট থেকে বের করা হয়েছে। টেলিভিশনটি সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করেছে। ওই ফুটেজে দেখা গেছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট থেকে কনসাল জেনারেলের বাসায় পাঁচটি বাক্স এবং দুটি বড় ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন তিনজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিভিশনটি বলেছে, ওই ব্যাগ ও বাক্সতে ছিল খাসোগির মরদেহের টুকরা। ইস্তাম্বুলের যে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে খাসোগিকে হত্যা করা হয়, ওই কনস্যুলেটের কাছেই কনস্যুলার জেনারেলের বাসা।আ-হাবার টেলিভিশন আরও বলেছে, একটি মিনিবাসে করে ওই ব্যাগ ও বাক্সগুলো কনসাল জেনারেলের বাসার গ্যারেজে নেওয়া হয়। পরে ওই তিনজনকে সেগুলো ভেতরে নিতে দেখা যায়।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: রয়টার্সসৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: রয়টার্সতুরস্কের দৈনিক পত্রিকা ডেইলি সাবাহের দুই সাংবাদিক এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি বই লিখেছেন। এতেও উঠে এসেছে নতুন তথ্য। বইটিতে ওই ১৫ জনের দলে নতুন দুজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁরা হলেন সাইদ মুয়ায়েদ আল-কারনি ও মুফলিস শায়া আল-মুসলেহ। তাঁরা ওই সময় কনস্যুলেটের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। আসলে তাঁরা সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং তাঁদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট রয়েছে।

খাসোগিকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে সৌদি আরব। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কনস্যুলেট ভবনে হত্যার কথা স্বীকার করে নেয় দেশটি। তবে এ হত্যার পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। দেশটি রাজ্যের সুপ্রিম কাউন্সিলে কিছু রদবদল এনেছে। তবে এই রদবদলের কোনো আঁচ লাগেনি যুবরাজ মোহাম্মদের গায়ে। আগের মতো এই কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে ক্ষমতা যুবরাজ মোহাম্মদের হাতেই রয়েছে। তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবেই রয়েছেন। রদবদল করে যাঁদের আনা হয়েছে, তাঁরাও যুবরাজের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।

ক্রাউন প্রিন্স ওয়াশিংটনসহ অন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে খাসোগি হত্যার ব্যাপারে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকৃতি জানিয়ে রীতিমতো দেনদরবার করে চলেছেন। এ অবস্থায় দেশটির মৃদুভাষী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়েরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গত শুক্রবার থেকে নিযুক্ত হয়েছেন ইব্রাহিম আল-আসাফ। ৬৯ বছর বয়সী ইব্রাহিম দীর্ঘ সময় ধরে সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে অতি পরিচিত এক মুখ।

এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, জামাল খাসোগি সৌদি আরব থেকে পালিয়ে আসতেন বাধ্য হলেও সৌদি আরব এটা স্পষ্ট করেছিল যে তিনি তাদের কাছ থেকে পুরোপুরি পালাতে পারবেন না কখনো। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় এক বন্ধুর বাসায় এসে ওঠেন খাসোগি। ওই বন্ধু জানান, ২০১৭ সালের অক্টোবরে রিয়াদ থেকে সৌদ বিন আবদুল্লাহ আল-কাহতানি খাসোগিকে ফোন দেন। ওই সময় কাহতানি ছিলেন বাদশাহ আবদুল্লাহর আইনবিষয়ক উপদেষ্টা এবং যুবরাজ মোহাম্মদের গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা। খাসোগি হত্যা ইস্যুতে তাঁকে পরে বরখাস্ত করা হয়।

ফোনে খাসোগিকে কাহতানি বলেছিলেন, যুবরাজ মোহাম্মদের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করছে লোকজন। এই প্রশংসায় যুবরাজ খুশি। তিনি খাসোগিকে যুবরাজের এসব অর্জন নিয়ে লিখতে এবং তা ছড়িয়ে দিতে জোর দেন। ফোনালাপে তাঁর কথাগুলো আন্তরিক এবং অনুরোধের মতো শোনালেও কাহতানি একটি স্পষ্ট বার্তা দেন যে খাসোগি এই মুহূর্তে সৌদি শাসনের অধীনে না থাকলেও তাঁর প্রতিটি শব্দ দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি নজরে রাখছেন।

জবাবে খাসোগি একের পর এক অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনার কথা তুলে ধরে প্রতিক্রিয়া জানান। খাসোগির বন্ধু জানান, খাসোগির ফোন ধরে রাখা হাতটি থর থর করে কাঁপতে দেখেছিলেন তিনি।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১