• ঢাকা, বাংলাদেশ

নিরাপত্তা বিবেচনায় স্কুল আগে খুলছে 

 admin 
03rd Mar 2021 2:27 pm  |  অনলাইন সংস্করণ

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলবে ৩০ মার্চ। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে ২৪ মে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হলেও স্কুল-কলেজ-মাদরাসা কেন আগে খুলছে সেই প্রশ্ন অভিভাবক-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমনটি হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ ব্যাখ্যা করে। মন্ত্রণালয় বলছে, স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে হলে থাকার বিষয়টি যুক্ত নয়। এ ছাড়া বয়স কম হওয়ায় তাদের টিকা নেওয়ার বিষয়টিও বাধ্যবাধকতায় পড়ে না। এজন্যই স্কুল-কলেজ আগে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের সতর্ক রেখে ক্লাসে ফিরতে পারলেও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বয়সের তুলনায় নিজেদের কতটা নিরাপদ রাখতে পারবেন-এ প্রশ্ন তুলেছেন অভিবাবকসহ সমালোচকরা।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ঈদুল ফিতরের পর ২৪ মে থেকে শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ১৭ মে থেকে খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, হলগুলো খুলে দেওয়ার আগেই আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

অর্থাৎ স্কুল-কলেজ খোলার দুই মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিচ্ছে সরকার। তবে পঞ্চম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানে আনা হলেও অন্য শ্রেণিগুলোর জন্য প্রতিদিন খোলা থাকবে না স্কুল-কলেজ।

শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের দ্বাদশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে দশম এবং প্রাথমিক পর্যায়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন (সপ্তাহে ছয় দিন) ক্লাস হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। নবম এবং একাদশ শ্রেণির সপ্তাহে দুদিন করে ক্লাস হবে। তারপর পরিস্থিতির আরো উন্নতি হলে একটু একটু করে বাড়িয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় শতভাগ ক্লাস চালু হবে।

রাজধানীর কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত আমরা আগে থেকেই চাচ্ছিলাম। তবে সরকার ধাপে ধাপে স্কুল খোলার যে পরিকল্পনা করেছে, তা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। তবে এখন শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশেষ পরিকল্পনা করতে হবে। যেহেতু অনেক শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই সপ্তাহে এক দিন আসবে, তাই তাদের অনলাইন ক্লাসও চালাতে হবে। এতে শিক্ষকদের অনলাইন ও অফলাইন দুই মাধ্যমেই ক্লাস চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে। তবে যেসব স্কুলে শিক্ষক কম, তাদের বড় সমস্যায় পড়তে হবে।’

রাজধানীর ডেমরার সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলার সরকারি সিদ্ধান্তে সবার মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা যদিও আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছি, তবে এখন আবার নতুন করে পরিকল্পনা শুরু করেছি। যেহেতু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসাতে হবে, তাই এক ক্লাসের শিক্ষার্থীদের হয়তো দুই ভাগ করে বসাতে হবে। আলাদাভাবে রুটিন প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কীভাবে পোষানো যায়, তা নিয়েও আমরা পরিকল্পনা করছি।’

স্কুল আগে খোলা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে দাবি করে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তো টিকা নিয়ে ক্লাসে যাবে। কিন্তু স্কুল-কলেজের বাচ্চাদের টিকার অনুমোদন নেই।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) বেলাল হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও সব শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন স্কুলে আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনলাইন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে হবে। অনেক স্কুলই এরই মধ্যে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে, যা স্কুল খুললেও অব্যাহত থাকবে। শুধু এ বছরই নয়, আগামী দিনেও আমরা অনলাইন শিক্ষার ওপর জোর দেব, যাতে ভবিষ্যতে ফের কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো ধরনের ক্ষতির মুখে না পড়ে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, স্কুলগুলো হলের সঙ্গে সম্পর্কিত না। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এজন্যই স্কুল-কলেজগুলো আগে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্কুল-কলেজের খোলার প্রস্তুতির জন্য আগে যেসব নির্দেশনা বা গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে তা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক গোলাম ফারুক।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এক বছর তারা ক্লাসরুমে যেতে পারেনি। আর তাদের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, স্কুল-কলেজ খোলা হলেও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন স্কুলে আসতে হবে না। এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার অনুমোদন নেই। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। তা ছাড়া আমরা সবাইকে একদিনে স্কুলে আনছি না। ইতোপূর্বে প্রকাশিত গাইডলাইনই আমরা অনুসরণ করছি। তাতে স্কুল-মাদরাসা পরিচালনার নির্দেশনা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, এরপরও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে গাইডলাইন হালনাগাদ করে আরো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ছেলেমেয়েরা এক বছর ধরে লেখাপড়া করতে পারেনি। তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরতে উদগ্রীব। তা ছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই সপ্তাহে একদিন যেতে হচ্ছে স্কুলে। নবম ও একাদশ শ্রেণির কয়েক লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে দুদিন আর পরীক্ষার্থীদের ৫-৬ দিন যেতে হবে।

বাংলাদেশে গত ৮ বছরের মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর সেই ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর আরো একমাস বেড়ে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলছে ৩০ মার্চ মঙ্গলবার।

তবে শিক্ষা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৩০ মার্চ খুললেও তার কয়েকদিন পর টানা ছুটি পড়বে। কিন্তু এবার রোজার মধ্যেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

এবছর পবিত্র রমজান, মে দিবস, বুদ্ধ পূর্ণিমা, শব-ই-কদর, জুমাতুল বিদা ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল থেকে ১৯ মে ৩১ দিন ছুটি থাকবে। এছাড়া ঈদুল আযহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশে ১৭ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ১২ দিন বন্ধ পাবে স্কুলগুলো। দুর্গাপূজা, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, লক্ষ্মীপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ১১ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিন বন্ধ থাকবে।

শীতকালীন অবকাশ, বিজয় দিবস, যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন বা বড় দিন উপলক্ষে ১৫ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দিন ছুটি থাকবে।

Array
We use all content from others website just for demo purpose. We suggest to remove all content after building your demo website. And Dont copy our content without our permission.
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এই বিভাগের আরও খবর
 
Jugantor Logo
ফজর ৫:০৫
জোহর ১১:৪৬
আসর ৪:০৮
মাগরিব ৫:১১
ইশা ৬:২৬
সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১