দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে বিদেশে নতুন বাজার অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রপ্তানি বাস্কেট আরো বাড়ানো এবং কোন ধরনের পণ্য কোন দেশে রপ্তানি আমরা করতে পারি, সে বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সেক্ষেত্রে আমি আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সবাইকে অনুরোধ করবো- আপনারাও আমাদের পণ্যের আরো বহুমুখীকরণের চেষ্টা করবেন। আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। সেখানে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের বিনিয়োগ করতে পারেন, সেজন্য সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এটির উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এ এইচ এম এহসান প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরেকটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক দেশে আমরাও বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন, বেসরকারি খাতও বিনিয়োগ করতে পারে। আমি ভবিষ্যতে সেই সুযোগও সৃষ্টি করব। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা তো উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেছি। কাজেই আমাদের শিল্প উদ্যোক্তারা নিজের দেশে না, বিদেশে বিনিয়োগ করেও সেই পণ্য সেখানে বাজারজাত করা বা আমাদের চাহিদা মতো নিয়ে আসা, সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করতে চাই এবং সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের সন্দেহ থাকতে পারে, উন্নয়নশীল দেশ হলে বোধ হয় অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। আসলে যেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবো তার চেয়ে বেশি সুবিধা আমরা পাব। আমাদের বাণিজ্য বাড়বে, রপ্তানি বাড়বে, রপ্তানি সুবিধা পাব। বাংলাদেশের পাটের জীবন রহস্য উদঘাটনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পাট ও পাটজাত পণ্যও আমরা রপ্তানি করতে পারি। সেক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয়কে আরো বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, রপ্তানি মেলা, বাণিজ্য মেলা, রপ্তানিকারকদের সম্মেলন, ক্রেতা-বিক্রেতা মেলা এবং অন্যান্য বাণিজ্য বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড আয়োজনের মাধ্যমে কেন্দ্রটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, এই এক্সিবিশন সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য রপ্তানি পণ্যের মেলা ও ‘সোর্সিং ফেয়ার’ আয়োজন এবং বাংলাদেশী পণ্যের ক্রেতা আকর্ষণের লক্ষে বছরব্যাপী বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সম্মেলন আয়োজনসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য মেলাও আয়োজন করা হবে।
রপ্তানি বাজারে টিকে থাকতে ‘নিজস্ব প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর’ ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের ব্যবসায়ীদের বলব, যখনই আপনারা কোনো পণ্য উৎপাদন করবেন সময়ের চাহিদার সঙ্গে কোন দেশের কী প্রয়োজন, সেখানকার চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। সেটা যদি করতে পারেন, তাহলেই বাজারে টিকে থাকতে পারবেন। আমাদের যত শিল্প খাত আছে, তাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে যত রকম সহযোগিতা প্রয়োজন, সেই সহযোগিতা আপনারা পাবেন। কিন্তু আপনাদের নিজস্ব উদ্যোগও থাকতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা এখন যে ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি করছি এক সময় সেটাই সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য হবে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পূর্বাচল নিউ সিটি প্রজেক্ট এরিয়ায় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কন্ট্রাকশন প্রজেক্ট’ নেয়া হয়। ২০১৫ সালে রাজউকের পূর্বাচলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর অনুকূলে সরকার প্রথমে ২০ একর এবং পরে আরো ৬ দশমিক ১ একর জমি বরাদ্দ দেয়। সেখানে চীন সরকারের প্রকল্প সহায়তায় সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এই সুপরিসর এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেন্টার নির্মাণে জমির মূল্যসহ মোট ব্যয় হয়েছে ৮১৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীন সরকার ব্যয় করেছে ৫২৬ কোটি টাকা। আধুনিক প্রদর্শনী কেন্দ্রটির নিজস্ব পানি শোধনাগার, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, ইন্টারনেটের জন্য ওয়াইফাই সিস্টেম, একটি আধুনিক ঝরনা ও রিমোট-কন্ট্রোলড প্রবেশদ্বার রয়েছে
Array