যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আমেজ কমতে শুরু করেছে। যা ধারণা করা হয়েছিল, তাই ঘটেছে, ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। আর সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে রিপাবলিকান পার্টি। খবর বিবিসির।
অবাক হওয়ার মতো কিছু এখনো না থাকলেও, এই ফলাফলে সামনের দুই বছর কি ঘটনাই ঘটতে পারে। সব মিলিয়ে এই নির্বাচন থেকে কি জানতে পারছি?
১. নারী প্রার্থীদের রেকর্ড
এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়া নারী প্রার্থীদের সংখ্যা অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই জয় পেয়েছেন।
মঙ্গলবারের আগে মার্কিন কংগ্রেসে ১০৭ জন নারী প্রার্থী ছিলেন এবং তারা সকলেই জয় পেয়েছেন। তবে এই প্রথমবারের মতো দুজন মুসলিম নারী কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছেন। মিনেসোটা এবং মিশিগান রাজ্যের দুই ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদ ইলহান ওইমার এবং রাশিদা তালিব মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথমবারের মতো কংগ্রেসে এসেছেন সবচেয়ে কমবয়সী রাজনীতিবিদ আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্টেজ এবং আদিবাসী আমেরিকান ডেবরা হালান্ড এবং শারিক ডেভিড। প্রথম কোন সমকামী গভর্নর হিসাবে কলোরাডোয় নির্বাচিত হয়েছেন জ্যারেড পোলিস।
২. ডেমোক্র্যাটদের লড়াইয়ে ফিরে আসা
১৯৮০ সাল থেকে ভার্জিনিয়ার দশম ডিসট্রিক্ট দখলে ছিল রিপাবলিকানদের, কিন্তু এখন সেই আসন পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট জেনিফার ওয়েক্সটন।
তবে যতটা ভাবা হয়েছিল, ডেমোক্র্যাটরা ততটা সফলতা পায়নি। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন তারা, যা গত আট বছরের মধ্যে এই প্রথমবার তারা নিয়ন্ত্রণ পেল।
এর ফলে এখন ডেমোক্র্যাটরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে। প্রেসিডেন্টের আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত পরিকল্পনাতেও বাঁধা দিতে পারবে ডেমোক্র্যাটরা।
৩. ট্রাম্পের জন্য কতটা সফলতা আনতে পারে এই নির্বাচন?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এটিকে মিশ্র ফলাফল বলা যেতে পারে। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে রিপাবলিকানরা, তবে হাউসে তারা হেরে গেছেন। ফলে এখন নিম্নকক্ষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে, তার ট্যাক্স রিটার্ন চাইতে পারে এমনকি তাকে অভিশংসনও করতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম দুই বছর উভয় কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে এখন আর সেই সুদিন থাকছে না।
৪. শহর–গ্রামের বিভক্তি
শহর এলাকার বাইরে ভোট হারিয়েছে রিপাবলিকানরা, যা হয়তো দলটির জন্য ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে শহর আর গ্রামের মানুষের মধ্যে যে বিভক্তি বাড়ছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তা যেন আরো পরিষ্কার হয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা এমন অনেক স্থানে ভোট পেয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকানদের ভোট দিয়ে আসছে। যেমন ভার্জিনিয়ার কয়েকটি স্থানে, ওয়াশিংটনের বাইরে দশম ও সপ্তম জেলায়, রিচমন্ড দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকানদের দখলে থাকলেও এখন ডেমোক্র্যাটদের দখলে চলে গেছে। সারা দেশের স্থানীয় নির্বাচনেরও এ রকম ঘটনা দেখা গেছে।
এর অনেক জায়গার ভোটাররা ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন হয়তো তারা আর সেটি করতে আগ্রহী নন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকানদের বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কিভাবে এই মানুষদের তারা আবার নিজেদের দলে ফিরিয়ে আনবেন।
৫. ট্রাম্পের গভর্নরদের মিশ্র ভাগ্য
গভর্নরদের দৌড়ের প্রসঙ্গ আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য কিছু ভালো খবর, কিছু খারাপ খবর রয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপর।
২০১৬ সালে যেসব স্টেট ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল, তারা এবার তার দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইলিনয় স্টেট ও শিকাগোর নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান গভর্নরের কাছ থেকে ডেমোক্রেটদের কাছে চলে গেছে। কানসাসের ফলাফলে কাছাকাছিও দাড়াতে পারেননি ট্রাম্পের সহযোগী ক্রিস কোবাচ। কিন্তু ট্রাম্পের জন্য সুখবরও আছে। তার জন্য উচ্চকণ্ঠ বলে পরিচিত জর্জিয়া আর ফ্লোরিডার গভর্নররা জয় পেয়েছেন, যদিও তাদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের নানা অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত আইওয়া এবং ওহিও-তেও জয় পেয়েছে রিপাবলিকানরা। এটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় গভর্নররা তহবিল সংগ্রহ এবং স্বেচ্ছাসেবী যোগান দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
Array