সারা দিন রোজা রেখে ফিটনেস কিভাবে বজায় রাখবেন তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন অনেকেই। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার।
ইফতার থেকে সাহরি: ইফতারিতে অনেকের ভাজাপোড়া খাবার না হলে যেন চলেই না। আবার সারা দিন রোজা রাখার জন্য পাকস্থলীও খালি থাকে। ফলে ভাজাপোড়া খেলে পাকস্থলীতে গোলযোগ হতে পারে। ভাজাপোড়া খাবারে পুষ্টির গুণগত মানেরও ঘাটতি থাকে। ইফতারের পর অনেকের অবসাদ পেয়ে বসে। শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা যায়। এ জন্য ভাজাপোড়া এড়িয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বেশি জরুরি। কারণ ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে। এটা শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। খালি পেটে ভাজাপোড়া খাবার খেলে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য ভাজাপোড়ার বদলে সালাদ ও ফলমূল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এ ছাড়া খিচুড়িও খেতে পারেন। কারণ খিচুড়িতে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা সারা দিনের ক্লান্ত শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। দই ও ঠাণ্ডা জাতীয় খাবারও খেতে পারেন। ইফতারিতে হালিম রাখতে পারেন। হালিম একই সঙ্গে পুষ্টি ও ক্যালরির জোগান দেয়।
দরকার বাড়তি সচেতনতা: রোজার মাসে প্রতিদিনের জীবনে আসে পরিবর্তন। অফিস টাইম, খাবার ও ঘুমের রুটিন বদলে যায়। ফলে শরীরের ভারসাম্য বদলে যেতে পারে। এ জন্য দরকার বাড়তি সতর্কতা। রোজার মাসে পুষ্টিকর খাবার ও পানি বেশি খেতে হবে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও হওয়া চাই রুটিনমাফিক। তাহলেই শরীরের ফিটনেস বজায় থাকবে।
১০-১২ গ্লাস পানি পান: অন্য সময় তো বটেই, রোজার মাসেও পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই। সুস্থ থাকতে ও দৈহিক ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এখন যেহেতু গরমের মাত্রা বেশি। সারা দিন ঘামে ঘেমে শরীর থেকে বেশি পানি বেরিয়ে যায়। এ জন্য দুই গ্লাস পানি বেশি পান করতে পারেন। ইফতারিতে জুস ও স্যুপ খেতে পারেন। এতে শরীরে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা মিটবে। ইফতারের পর পর অনেকে চা পান করেন। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সারা দিন শরীর থেকে ফ্লুইড বের হয়ে যায়। তাই খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট কিংবা এক ঘণ্টা পর চা পান করা উচিত। শরীরে পানির স্বল্পতা রয়েছে কি না তা প্রস্রাব দেখেই বুঝতে পারবেন। রোজার সময় অনেক রোজাদারের প্রস্রাব হলদে হয়, ঘনত্ব বাড়ে। এর কারণ পানি কম খাওয়া। এটা থেকে বাঁচতে ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত পরিমাণমতো পানি পান করা জরুরি।
আঁশযুক্ত খাবার রাখুন: ইফতারিতে একবারে বেশি খাবার খাওয়া উচিত নয়। ইফতারির পর ধাপে ধাপে খাওয়া উচিত। ইফতারিতে অল্প খান। এরপর তারাবির আগে আবার অল্প করে খেতে পারেন। তারাবির পর পরই রাতের খাবার খেয়ে নিন।
সাহরির খাবার হওয়া উচিত আঁশযুক্ত। কারণ আঁশযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে দীর্ঘ সময় থাকে। সাহরিতেও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার রাখুন। সাহরিতে খেজুর ও সবজি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে পারেন। এ ছাড়া সাহরিতে দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলেও সারা দিন প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান পাওয়া যায়।
ঘুমের সময় নির্ধারণ করুন: সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। রোজায় কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। যেহেতু সাহরি করতে উঠতে হয় সেহেতু রাতের খাবার আগে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সাহরি পর্যন্ত ঘুমিয়ে উঠে পড়ুন। আবার সাহরি করে টানা তিন-চার ঘণ্টাও ঘুমানো যেতে পারে।
ব্যায়াম করুন: সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চার বিকল্প নেই। রোজায় সারা দিন অভুক্ত থেকে শরীরচর্চা করা নিয়ে চিন্তায় থাকেন অনেকেই। আপনি রোজা রেখেও শরীরচর্চা করতে পারেন। ইফতারের আগে আধাঘণ্টা ব্যায়াম করতে পারেন। অথবা ইফতারের পরও করতে পারেন। রোজায় তারাবি নামাজেই শরীরচর্চার কাজ অনেকটাই হয়ে যায়। ব্যায়াম করলে শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। এ জন্য সন্ধ্যায় হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। বিকেলে ইফতারির আগে আধাঘণ্টা হাঁটতে পারেন। এতেই শরীরচর্চার কাজ হয়ে যাবে।
Array