নিউজ ডেস্ক:বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে চিংড়ি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো। ব্যাপক লোডশেডিংয়ে চিংড়িং প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোর উৎপাদন কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। আর জেনারেটর চালিয়ে হিমাগারে চিংড়ি সংরক্ষণে দ্বিগুণেরও বেশি খরচ বেড়েছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ স্বল্পতায় বরফ উৎপাদন কমে যাওয়ায় খামার পর্যায়ের চিংড়ির ক্রেতা ও ডিপো মালিকরা বিপাকে পড়েছে। চাহিদামতো বরফ না পাওয়ায় খামারিরা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় চিংড়ি সরবরাহ করতে পারছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারীর ধাক্কা সামলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় বেড়েছে চিংড়ির চাহিদা। দেশে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহে চিংড়ি চাষ হলেও রফতানির প্রায় ৮০ ভাগ চিংড়ি খুলনা অঞ্চলের কারখানা থেকেই যায়। খুলনায় ৩৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানা চালু রয়েছে।
সূত্র জানায়, এখন চিংড়ির ভরা মৌসুম চলছে। সেজন্যই রফতানির জন্য মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোয় দিন-রাত কাজ হচ্ছে। তবে লোডশেডিংয়ে ওসব কারখানা পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন চালাতে পারছে না। ডলার সংকট মেটাতে পণ্য রফতানি বাড়াতে সরকার জোর দিলেও অব্যাহত লোডশেডিংয়ে বিপাকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম চিংড়ি খাত। কারণ কারখানাগুলোয় পক্রিয়াজাত করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চিংড়ি সংরক্ষণ করতে হয়। তা না হলে চিংড়ির গুণগত মান নষ্ট ও বিদেশে সুনাম নষ্ট হয়। কিন্তু বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকা এলাকাগুলোয় প্রতিদিন ১৪-১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর বাকি ৭-৮ ঘণ্টা থাকে লো-ভোল্টেজ। এমন অবস্থায় কারখানার কোনো যন্ত্রই চালানো যাচ্ছে না। অথচ চিংড়ি পচনশীল পণ্য। যতো দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করা যাবে গুণগত মান ততো ভালো থাকবে। এ কারণে ২৪ ঘণ্টাই কারখানা চালু রাখতে হয়। কিন্তু বিদ্যুতের কারণে এখন সবই প্রায় অচল। বিদ্যুতের অভাবে কারখানাগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। আর ধারা অব্যাহত থাকলে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
এদিকে এ বিষয়ে মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. আবু ছাইদ জানান, লোনাপানির সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। বিদেশে বাজারের সুযোগ থাকায় গত শতকের আশির দশকে খুলনাঞ্চলের পণ্যটির ব্যাপক চাষ শুরু হয়েছে। হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রফতানি করে প্রতি বছর প্রওায় ৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে চিংড়ি রফতানি করে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চিংড়ি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এস হুমায়ুন কবির জানান, হিমায়িত চিংড়ি বাংলাদেশের একটি ১০০ ভাগ কৃষিভিত্তিক ও রফতানিমুখী শিল্প খাত। সারা দেশের গ্রামগঞ্জের প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানিতে নিয়োজিত। সরকার এ খাতে রফতানি বাড়ানোর কথা বললেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং বিদ্যুৎ সংকটে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। এলাকাভেদে খুলনার কিছু কারখানা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং কিছু পল্লী বিদ্যুতের আওতায় পড়েছে। ওজোপাডিকোর আওতাধীন কোম্পানিগুলো কিছু বিদ্যুৎ পেলেও বাকিগুলোর অবস্থা নাজুক। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় অনেক কারখানার উৎপাদন বন্ধ।
এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা কমাতে সারা দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোকে ৭টি ভাগে ভাগ করে সাপ্তাহিক ছুটি আলাদা করে দিয়েছে সরকার। তাতে হয়তো কিছুটা হলেও সুফল মিলবে।